পাতা:স্বদেশ ও সাহিত্য-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বদেশ সে দিন বরিশালের পথে, ষ্টীমারে, ঘরের মধ্যে আলো নিবানে, আমি মনে করিয়াছিলাম, পাশের বিছানায় দেশবন্ধু ঘুমাইয়া পড়িয়াছেন, অনেক রাত্রিতে হঠাৎ ডাকিয়া বলিলেন, শরৎবাবু, ঘুমিয়েছেন ? বলিলাম, না । তবে চলুন, ডেকে গিয়ে বসিগে । বলিলাম, ভয়ানক পোকার উৎপাত । দেশবন্ধু হাসিয়া বলিলেন, বিছানায় শুয়ে ছট্‌ফট্‌ করার চেয়ে সে ঢের সুসহ । চলুন । দুই জনে ডেকে আসিয়া বসিলাম । চারিদিকে নিবিড় অন্ধকার, মেঘাচ্ছন্ন আকাশের ফঁাকে ফঁাকে মাঝে মাঝে তারা দেখা যায়, নদীর অসংখ্য বাক পথে ঘুরিয়া ফিরিয়া ষ্টীমার চলিয়াছে, তাহার দূর-প্রসারী সার্চলাইটের আলো কখনও বা তীরেবাধা ক্ষুদ্র নৌকার ছাতে, কখনও বা তরুশিরে, কখনও বা জেলেদের কুটীরের চূড়ায় গিয়া পড়িতেছে। দেশবন্ধু বহুক্ষণ স্তব্ধভাবে থাকিয়া সহসা বলিয়া উঠিলেন, শরৎবাবু, নদী-মাতৃক কথাটার সত্যকার অর্থ যে কি, এ দেশে যার না জন্মায়, তারা জানেই না। এ আমাদের চাই-ই চাই। এ কথার তাৎপৰ্য্য বুঝিলাম, কিন্তু চুপ করিয়া রহিলাম। তাহার পরে তিনি এক কত কথাই না বলিয়া গেলেন। আমি নিঃশবে বসিয়া রহিলাম। উত্তরের প্রয়োজন ছিল না ; কারণ, সে সকল প্রশ্ন নহে, একটা ভাব। র্তাহার কবিচিত্ত কি হেতু জানিনা, উদ্বেলিত হইয়া উঠিয়াছিল। হঠাৎ জিজ্ঞাসা করিলেন, আপনি চরকা বিশ্বাস করেন ? (tֆ