পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 স্বদেশ পাওয়া যাবে কি না কে জানে ! পৃথিবীর লোক সেই পরীক্ষাগারের মধ্যে প্রবেশ করে কী দেখলে ? একটি জীর্ণ তপস্বী ; বসন নেই, ভূষণ নেই, পৃথিবীর ইতিহাস সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা নেই। সে যে কথা বলতে চায় এখনো তার কোনো প্রতীতিগম্য ভাষা নেই, প্রত্যক্ষগম্য প্রমাণ নেই, আয়ত্তগম্য পরিণাম নেই। অতএব হে বৃদ্ধ, হে চিন্তাতুর, হে উদাসীন, তুমি ওঠে ; পোলিটিকাল অ্যাজিটেশন করো ; অথবা দিবাশয্যায় পড়ে পড়ে আপনার পুরাতন যৌবনকালের প্রতাপ-ঘোষণাপূর্বক জীর্ণ অস্থি আস্ফালন করো, দেখো, তাতে তোমার লজ্জা নিবারণ হয় কি না । কিন্তু আমার ওতে প্রবৃত্তি হয় না। কেবলমাত্র খবরের কাগজের পাল উড়িয়ে এই দুস্তর সংসারসমুদ্রে যাত্রা আরম্ভ করতে আমার সাহস হয় না। যখন মৃত্যু মুকু অমুকুল বাতাস দেয় তখন এই কাগজের পাল গর্বে স্ফীত হয়ে ওঠে বটে কিন্তু কখন সমুদ্র থেকে ঝড় আসবে এবং দুর্বল দম্ভ শতধা ছিন্ন বিছিন্ন হয়ে যাবে। এমন যদি হত, নিকটে কোথাও উন্নতি-নামক একটি পাকা বন্দর আছে, সেইখানে কোনোমতে পৌছলেই তার পরে দধি এবং পিষ্টক, দীয়তাং এবং ভূজ্যতাং, তা হলেও বরং একবার সময় বুঝে আকাশের ভাবগতিক দেখে অত্যন্ত চতুরতা-সহকারে পার হবার চেষ্টা করা যেত । কিন্তু যখন জানি উন্নতিপথে যাত্রার আর শেষ নেই, কোথাও নৌকা বেঁধে নিদ্রা দেবার স্থান নেই, উর্ধের্ব কেবল ধ্রুবতারা দীপ্তি পাচ্ছে এবং সম্মুখে কেবল তটহীন সমুদ্র, বায়ু অনেক সময়েই প্রতিকুল এবং তরঙ্গ সর্বদাই প্রবল, তখন কি বসে বসে কেবল ফুলস্ক্যাপ কাগজের নৌকা নির্মাণ করতে প্রবৃত্তি হয় ? অথচ তরী ভাসাবার ইচ্ছা আছে। যখন দেখি মানবস্রোত চলেছে— চতুর্দিকে বিচিত্র কল্লোল, উদাম বেগ, প্রবল গতি, অবিশ্রাম