পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় У e “ যখন নগরের কর্মশালার মধ্যে বাস করিতাম, তখন নববর্ষে সভা ডাকিয়া আমরা এই কথা চিন্তা করিয়াছি। তখন মৃত্যুর কথা বিশেষ করিয়া স্মরণ করা আমাদের প্রয়োজন ছিল— কারণ, সেখানে কর্ম আমাদিগকে একেবারে চাপিয়া থাকে, নিশ্বাস ফেলিতে দেয় না । মৃত্যুর ভাব সেই নিবিড় কর্মকে খর্ব করিয়া সেই কর্মের চারি দিকে বৃহৎ অবকাশ রচনা করিয়া দেয়— মৃত্যু সেই কর্মকারাগারের মধ্যে জানলা কাটিয়া অবরুদ্ধ অনন্তকে প্রকাশিত করে । বর্ষারম্ভের প্রভাত-আলোক হইতে বর্ণচ্ছটাবিহীন শুভ্র বৈরাগ্যরশ্মি অাকর্ষণ করিয়া অামাদের চারি দিকের যাহা-কিছু ক্ষুদ্র, তুচ্ছ, জীর্ণ, তাহারই ক্ষুদ্রতা, তুচ্ছতা, জীর্ণতা প্রত্যক্ষ করি, এবং তাহারই একাধিপত্য হইতে মনকে মুক্তি দিতে চেষ্টা করি। এবারে ভাগ্যক্রমে যেখানে আছি, সেখানে অভ্ৰভেদী কর্মস্তুপের মধ্যে ছিদ্র করিয়া বর্ষারম্ভের দিনকে কেবল একদিনের অভ্যাগতের মতো আমাদের ঘরের মধ্যে ডাকিয়া আনিতে হয় না। এখানে আমরাই সনাতন নববর্ষের বিপুল প্রাসাদে অতিথিরূপে সমবেত । উন্মুক্তদ্বার প্রাসাদ এই-যে আমাদের চারি দিকেই। বিরলতৃণ অতুর্বর মাঠ কোথায় চলিয়া গেছে ! তাহার অবাধবিস্তৃত নতোন্নত ভঙ্গিমার নিশ্চল বৈচিত্র্য অনুসরণ করিতে করিতে দুই চক্ষু আকাশের পাখির মতো স্বদূর দিকৃপ্রাস্তের নীলাভ কুহেলিকার মধ্যে আপনাকে হারাইয়া লুপ্ত করিয়া ফেলে। এই মাঠ দিগম্বর রুদ্রদেবের মতো রিক্ত – শূন্ততাই ইহার মহৎ ঐশ্বর্য। মাঝে মাঝে কাটা গুল্ম, খর্ব-খেজুর ও বলুৗকন্তুপে এই মাঠের অন্তর্বরতার সাক্ষ্য দিতেছে, ইহার সম্পূর্ণ অনাবশ্বকতার গৌরব প্রমাণ করিতেছে। শস্য প্রভৃতি মানুষের ক্ষুদ্র কাম্যবস্তু হইতে এই প্রকাগু ভূখণ্ড নিজেকে এমনি নির্মুক্ত করিয়া রাখিয়াছে যে, ইহার কাছে শূন্তবিস্তীর্ণ ইহাকে ছাড়া আর-কিছুই প্রত্যাশা করিবার নাই।