পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

У У о স্বদেশ যায় যে, মৃগয়া এবং পশুপালনেই সাহস ও বীর্যের চর্চা হইতে পারে, কুষিতে তাহা নষ্টই হয়, তবে সেরূপ নিস্ফল উত্তেজনা কেবল অনিষ্টই ঘটায় । বস্তুত ভিন্ন পথ দিয়া ভিন্ন জাতি ভিন্ন শ্রেণীর উৎকর্ষ লাভ করে— এবং সমগ্র মানুষের সর্বাঙ্গীণ উন্নতিলাভের এই একমাত্র উপায় । যুরোপ কতকগুলি প্রাকৃতিক সুবিধাবশত যে বিশেষপ্রকারের উন্নতির অধিকারী হইয়াছে, আমরা যদি ঠিক সেইপ্রকার উন্নতির জন্য ব্যাকুল হইয়া উঠি, তবে নিজেকে ব্যর্থ ও বিশ্বমানবকে বঞ্চিত করিব । কারণ, আমাদের দেশের বিশেষ প্রকৃতি অনুসারে আমরা মনুষ্যত্বের যে উৎকর্ষ লাভ করিতে পারি, পরের বৃথা অতুকরণচেষ্টায় তাহাকে নষ্ট করিলে এমন একটা জিনিসকে নষ্ট করা হয়, যাহা মানুষ অন্য কোনো স্থান হইতে পাইতে পারে না । সুতরাং বিশ্বমানব সেই অংশে দরিদ্র হয় । চাষের জমিকে খনির মতো ব্যবহার করিলে ও খনিজের জমিকে কৃষিক্ষেত্রের কাজে লাগাইলে মানবসভ্যতাকে ফাকি দেওয়া হয় । যে কারণে হউক, য়ুরোপের সঙ্গে ভারতবর্ষের কতকগুলি গুরুতর প্রভেদ আছে। উৎকট অনুকরণের দ্বারা সেই প্রভেদকে দূর করিয়া দেওয়া যে কেবল অসম্ভব, তাহা নহে, দিলে তাহাতে বিশ্বমানবের ক্ষতি হইবে । আমরা যখন বিদেশের ইতিহাস পড়ি বা বিদেশের প্রতাপকে প্রত্যক্ষ চক্ষে দেখি, তখন নিজেদের প্রতি ধিক্কার জন্মে— তখন বিদেশীর সঙ্গে আমাদের যে যে বিষয়ে পার্থক্য দেখিতে পাই, সমস্তই আমাদের অনর্থের হেতু বলিয়া মনে হয়। কোনো অধ্যাপকের অর্বাচীন বালকপুত্র যখন সার্কাস দেখিতে যায়, তাহার মনে হইতে পারে যে, এমনি করিয়া ঘোড়ার পিঠের উপরে দাড়াইয়া লাফালাফি করিতে যদি শিখি এবং দর্শকদলের বাহবা পাই, তবেই জীবন সার্থক হয় । তাহার পিতার শান্তিময় কাজ তাহার কাছে অত্যন্ত নিজীব ও নিরর্থক বলিয়া মনে হয়।