পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় Y S S বিশেষ স্থলে পিতাকে ধিক্কার দিবার কারণ থাকিতেও পারে। সার্কাসের খেলোয়াড় যেরূপ অক্লাস্ত সাধনা ও অধ্যবসায়ের দ্বারা নিজের ব্যবসায়ে উৎকর্ষলাভ করিয়াছে, সেইরূপ উদ্যম ও উদযোগের অভাবে অধ্যাপক যদি নিজের কর্মে উন্নতিলাভ না করিয়া থাকেন, তবেই র্তাহাকে লজ্জা দেওয়া চলে । যুরোপের সঙ্গে ভারতের পার্থক্য অনুভব করিয়া যদি আমাদের লজ্জা পাইতে হয়, তবে লজ্জার কারণটা ভালো করিয়া বিচার করিতে হয়, নতুবা যথার্থ লজ্জার মূল কখনোই উৎপাটিত হইবে না। যদি বলি যে, ইংলণ্ডের পার্লামেণ্ট আছে, ইংলণ্ডের যৌথকারবার আছে, ইংলণ্ডে প্রায় প্রত্যেক লোকই রাষ্ট্রচালনায় কিছু-না-কিছু অধিকারী, এইজন্যই তাহারা বড়ো, সেইগুলি নাই বলিয়াই আমরা ছোটো, তবে গোড়ার কথাটা বলা হয় না। আমরা কোনো কৌতুকপ্রিয় দেবতার বরে যদি কয়েকদিনের জন্য মূঢ় আবুহোসেনের মতো ইংরেজিমাহীত্ম্যের বাহ অধিকারী হই— আমাদের বন্দরে বাণিজ্যতরীর আবির্ভাব হয়— পার্লামেন্টের গৃহচূড়া আকাশভেদ করিয়া উঠে, তবে প্রথম অঙ্কের প্রহসন পঞ্চম অঙ্কে কী মৰ্মভেদী অশ্রুপাতেই অবসিত হয় । আমরা এ কথা যেন কোনোমতেই না মনে করি যে, পার্লামেণ্টে মানুষ গড়ে— বস্তুত মানুষই পার্লামেণ্ট গড়ে । মাটি সর্বত্রই সমান ; সেই মাটি লইয়া কেহ-বা শিব গড়ে, কেহ-বা বানর গড়ে ; যদি কিছু পরিবর্তন করিতে হয়, তবে মাটির পরিবর্তন নহে, যে ব্যক্তি গড়ে, তাহার শিক্ষণ ও সাধনা, চেষ্টা ও চিস্তার পরিবর্তন করিতে হইবে । এই ত্রিপুররাজ্যের রাজচিহ্নের মধ্যে একটি সংস্কৃত বাক্য অঙ্কিত দেখিয়াছি— “কিল বিদ্যুবীরতাং সারমেকং”— বীর্যকেই সার বলিয়া জানিবে। এই কথাটি সম্পূর্ণ সত্য। পার্লামেণ্ট সার নহে, বাণিজ্যতরী সার নহে, বীর্যই সার। এই বীর্য দেশকালপাত্রভেদে নানা আকারে