পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় Y S \O কথা ছাড়িয়া দেওয়া যাক— যে ব্যক্তি দুর্বল, সে নিজের আত্মাকে পায় না— নিজের আত্মাকে যে ব্যক্তি সম্পূর্ণ উপলব্ধি না করিয়াছে, সে অপর কিছুকেই লাভ করিতে পারে না, যুরোপ নিজের আত্মাকে যে পথ দিয়া লাভ করিতেছে, সে পথ আমাদের সম্মুখে নাই, কিন্তু যে মূল্য দিয়া লাভ করিতেছে, তাহা অামাদের পক্ষেও অত্যাবশু্যক— তাহ বল, তাহা বীর্য। যুরোপ যে কর্মের দ্বারা যে অবস্থার মধ্যে আত্মাকে উপলব্ধি করিতেছে, আমরা সে কর্মের দ্বারা সে অবস্থার মধ্যে আত্মাকে উপলব্ধি করিব না— আমাদের সম্মুখে অন্য পথ, আমাদের চতুর্দিকে অন্তরূপ পরিবেশ, আমাদের অতীতের ইতিহাস অন্যরূপ, আমাদের শক্তির মূল সঞ্চয় অনত্র —কিন্তু আমাদের সেই বীর্য আবশু ক, যাহা থাকিলে পথকে ব্যবহার করিতে পারিব, পরিবেশকে অমুকুল করিতে পারিব, অতীতের ইতিহাসকে বর্তমানে সফল করিতে পারিব, এবং শক্তির গৃঢ়সঞ্চয়কে আবিষ্কৃত-উদঘাটিত করিয়া তাহার অধিকারী হইতে পারিব । “নায়মাত্মা বলহীনেন লভ্যঃ”— আত্মা তো অাছেই, কিন্তু বল নাই বলিয়া তাহাকে লাভ করিতে পারি না। ত্যাগ করিতে শক্তি নাই, দুঃখ পাইতে সাহস নাই, লক্ষ্য অনুসরণ করিতে নিষ্ঠা নাই ; কৃশ সংকল্পের দৌর্বল্য, ক্ষীণশক্তির আত্মবঞ্চনা, মুখবিলাসের ভীরুতা, লোকলজ্জা, লোকভয় আমাদিগকে মুহুর্তে মুহুর্তে যথার্থভাবে আত্মপরিচয়, আত্মলাভ, আত্মপ্রতিষ্ঠা হইতে দূরে রাখিতেছে। সেইজন্যই ভিক্ষুকের মতো আমরা অপরের মাহাক্স্যের প্রতি ঈর্ষা করিতেছি এবং মনে করিতেছি, বাহ অবস্থা যদি দৈবক্রমে অন্যের মতো হয়, তবেই আমাদের সকল অভাব, সকল লজ্জা দূর হইতে পারে । বিদেশের ইতিহাস যদি আমরা ভালো করিয়া পড়িয়া দেখি, তবে দেখিতে পাইব, মহত্ত্ব কত বিচিত্রপ্রকারের— গ্রীসের মহত্ত্ব এবং রোমের মহত্ব এক জাতীয় নহে— গ্রীস বিদ্যা ও বিজ্ঞানে বড়ো, রোম কর্মে ও