পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Wo স্বদেশ কী আর অাশা হয় ? তখন মনে হয়, এসো ভাই, সহিষ্ণু হয়ে থাকি এবং ভালোবাসি এবং ভালো করি। পৃথিবীতে যতটুকু কাজ করি তা যেন সত্যসত্যই করি, ভান না করি । অক্ষমতার প্রধান বিপদ এই যে, সে বৃহৎ কাজ করতে_পারে_নL বলে বৃহৎ ভানকে শ্রেয়স্কর জ্ঞান করে. জানে না যে মনুষ্যত্বলাভের পক্ষে বড়ো মিথ্যার চেয়ে ছোটো সত্য ঢের বেশি মূল্যবান। কিন্তু উপদেশ দেওয়া আমার অভিপ্রায় নয়। প্রকৃত অবস্থাটা কী তাই আমি দেখতে চেষ্টা করছি। তা দেখতে গেলে যে পুরাতন বেদ পুরাণ সংহিতা খুলে বসে নিজের মনের মতো শ্লোক সংগ্রহ করে একটা কাল্পনিক কাল রচনা করতে হবে তা নয়, কিম্বা অন্য জাতির প্রকৃতি ও ইতিহাসের সঙ্গে কল্পনাযোগে আপনাদের বিলীন করে দিয়ে আমাদের নবশিক্ষার ক্ষীণ ভিত্তির উপর প্রকাণ্ড দুরাশার দুর্গ নির্মাণ করতে হবে তাও নয় ; দেখতে হবে এখন আমরা কোথায় অাছি । আমরা যেখানে অবস্থান করছি এখানে পূর্ব দিক থেকে অতীতের এবং পশ্চিম দিক থেকে ভবিষ্যতের মরীচিকা এসে পড়েছে, সে দুটোকেই সম্পূর্ণ নির্ভরযোগ্য সত্যস্বরূপে জ্ঞান না করে একবার দেখা যাক আমরা যথার্থ কোন মৃত্তিকার উপরে দাড়িয়ে আছি । আমরা একটি অত্যন্ত জীর্ণ প্রাচীন নগরে বাস করি ; এত প্রাচীন যে এখানকার ইতিহাস লুপ্তপ্রায় হয়ে গেছে ; মনুষের হস্তলিখিত স্মরণচিহ্নগুলি শৈবালে আচ্ছন্ন হয়ে গেছে ; সেইজন্যে ভ্রম হচ্ছে যেন এ নগর মানব-ইতিহাসের অতীত, এ যেন অনাদি প্রকৃতির এক প্রাচীন রাজধানী। মানবপুরাবৃত্তের রেখা লুপ্ত করে দিয়ে প্রকৃতি আপন শু্যামল অক্ষর এর সর্বাঙ্গে বিচিত্র আকারে সজ্জিত করেছে। এখানে সহস্র বৎসরের বর্ষ আপন অশ্রুচিহ্নরেখা রেখে গিয়েছে এবং সহস্ৰ বৎসরের বসন্ত এর প্রত্যেক ভিত্তিছিদ্রে আপন যাতায়াতের তারিখ হরিদবর্ণ অঙ্কে