পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নূতন ও পুরাতন ) যদি সিকিমাত্রা চাঞ্চল্য প্রকাশ করে তা হলে আমরা সকলে মিলে মাথা নেড়ে বলি, সর্বমত্যন্তং গর্হিতম্ । এমন সময় তোমরা কোথা থেকে হঠাৎ এসে আমাদের জীর্ণ পঞ্জরে গোটা দুই তিন প্রবল খোচা দিয়ে বলছ, ‘ওঠে ওঠে ; তোমাদের শয়নশালায় আমরা আপিস স্থাপন করতে চাই। তোমরা ঘুমচ্ছিলে বলে যে সমস্ত সংসার ঘুমচ্ছিল তা নয়। ইতিমধ্যে জগতের অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। ওই ঘণ্টা বাজছে, এখন পৃথিবীর মধ্যাহ্নকাল, এখন কর্মের সময় ।” তাই শুনে আমাদের মধ্যে কেউ কেউ ধড়ফড় করে উঠে ‘কোথায় কর্ম’ ‘কোথায় কর্ম’ করে গৃহের চার কোণে ব্যস্ত হয়ে বেড়াচ্ছে এবং ওরই মধ্যে যারা কিঞ্চিৎ স্থূলকায় স্ফীতস্বভাবের লোক, তারা পাশমোড়া দিয়ে বলছে, ‘কে হে ! কর্মের কথা কে বলে ! তা, আমরা কি কর্মের লোক নই বলতে চাও ! ভারি ভ্রম । ভারতবর্ষ ছাড়া কর্মস্থান কোথাও নেই। দেখো-না কেন, মানব-ইতিহাসের প্রথম যুগে এইখানেই আর্য-বর্বরের যুদ্ধ হয়ে গেছে ; এইখানেই কত রাজ্যপত্তন, কত নীতিধর্মের অভু্যদয়, কত সভ্যতার সংগ্রাম হয়ে গেছে। অতএব কেবলমাত্র আমরাই কর্মের লোক । অতএব আমাদের অার কর্ম করতে বোলো না । যদি অবিশ্বাস হয় তবে তোমরা বরং এক কাজ করো— তোমাদের তীক্ষু ঐতিহাসিক কোদালখানা দিয়ে ভারতভূমির যুগসঞ্চিত বিস্মৃতির স্তর উঠিয়ে দেখো মানবসভ্যতার ভিত্তিতে কোথায় কোথায় আমাদের হস্তচিহ্ন আছে। আমরা ততক্ষণ অমনি আর-একবার ঘুমিয়ে নিই।” এই রকম করে আমাদের মধ্যে কেউ কেউ অর্ধ-অচেতন জড় মূঢ় দাম্ভিক ভাবে, ঈষৎ-উন্মীলিত নিদ্রাকষায়িত নেত্রে, আলস্তবিজড়িত অস্পষ্ট রুষ্ট হুংকারে, জগতের দিবালোকের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করছে। এবং কেউ কেউ গভীর আত্মগ্লানি-সহকারে শিথিলস্বায়ু অসাড় উদ্যমকে