পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নূতন ও পুরাতন > S. করবার নেই। সে বরঞ্চ তার বিশ্রামকক্ষে বসে তোমাদের উন্মাদ জীবন-উৎপ্লব দেখে তোমাদের সভ্যতার চরম সফলতা সম্বন্ধে মনে মনে সংশয় অনুভব করতে পারে। মনে করতে পারে, কালক্রমে অবশেষে তোমাদের যখন এক দিন কাজ বন্ধ করতে হবে তখন কি এমন ধীরে, এমন সহজে, এমন বিশ্রামের মধ্যে অবতরণ করতে পারবে ? আমাদের মতো এমন কোমল, এমন সহৃদয় পরিণতি লাভ করতে পারবে কি ? উদ্দেশ্য যেমন ক্রমে ক্রমে লক্ষ্যের মধ্যে নিঃশেষিত হয়, উত্তপ্ত দিন যেমন সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ হয়ে সন্ধ্যার অন্ধকারে অবগাহন করে, সেই রকম মধুর সমাপ্তি লাভ করতে পারবে কি ? না, কল যেরকম হঠাৎ বিগড়ে যায়, উত্তরোত্তর অতিরিক্ত বাষ্প ও তাপ সঞ্চয় করে এঞ্জিন যেরকম সহসা ফেটে যায়, একপথবর্তী দুই বিপরীতমুখী রেলগাড়ি পরস্পরের সংঘাতে যেমন অকস্মাৎ বিপর্যস্ত হয় সেই রকম প্রবল বেগে একটা নিদারুণ অপঘাত-সমাপ্তি প্রাপ্ত হবে ? ‘যাই হোক, তোমরা এখন অপরিচিত সমুদ্রে অনাবিষ্কৃত তটের সন্ধানে চলেছ— অতএব তোমাদের পথে তোমরা যাও, আমাদের গৃহে আমরা থাকি, এই কথাই ভালো।” কিন্তু মানুষে থাকতে দেয় কই ? তুমি যখন বিশ্রাম করতে চাও, পৃথিবীর অধিকাংশ লোকই যে তখন অশ্রাস্ত । গৃহস্থ যখন নিদ্রায় কাতর গৃহছাড়ারা যে তখন নানা ভাবে পথে পথে বিচরণ করছে। তা ছাড়া এটা স্মরণ রাখা কর্তব্য, পৃথিবীতে যেখানে এসে তুমি থামবে সেখান হতেই তোমার ধ্বংস আরম্ভ হবে। কারণ তুমিই কেবল একলা থামবে আর কেউ থামবে না । জগৎপ্রবাহের সঙ্গে সমগতিতে যদি না চলতে পারো তো প্রবাহের সমস্ত সচল বেগ তোমার উপর এসে আঘাত করবে, একেবারে বিদীর্ণ বিপর্যস্ত হবে কিম্বা অল্পে অল্পে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে কালস্রোতের তলদেশে অস্তহিত হয়ে যাবে।