পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নূতন ও পুরাতন ૨ S আমরা সেই সভ্য জাতি ; আমরা সেই আধ্যাত্মিক আর্য ; আমরা কেবল জপতপ করব, দলাদলি করব ; সমুদ্রযাত্রা নিষেধ করে, ভিন্ন জাতিকে অস্পৃশুশ্রেণী-ভুক্ত করে, আমরা সেই মহৎ প্রাচীন হিন্দু নামের সার্থকতা সাধন করব । কিন্তু তার চেয়ে যদি সত্যকে ভালোবাসি, বিশ্বাস অনুসারে কাজ করি, ঘরের ছেলেদের রাশীকৃত মিথ্যার মধ্যে গোলগাল গলগ্রহের মতো না করে তুলে সত্যের শিক্ষায় সরল সবল দৃঢ় করে উন্নত মস্তকে দাড় করাতে পারি, যদি মনের মধ্যে এমন নিরভিমান উদারতার চর্চা করতে পারি যে চতুর্দিক থেকে জ্ঞান এবং মহত্বকে সানন্দে সবিনয়ে সাদর সম্ভাষণ করে আনতে পারি, যদি সংগীত শিল্প সাহিত্য ইতিহাস বিজ্ঞান প্রভৃতি বিবিধ বিদ্যার আলোচনা করে দেশে বিদেশে ভ্রমণ করে পৃথিবীতে সমস্ত তন্নাতন্ন নিরীক্ষণ করে এবং মনোযোগ-সহকারে নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করে আপনাকে চারি দিকে উন্মুক্ত বিকশিত করে তুলতে পারি, তা হলে আমি যাকে হি দুয়ানি বলে থাকি তা সম্পূর্ণ টিকবে কি না বলতে পারি নে কিন্তু প্রাচীন কালে যে সজীব সচেষ্ট তেজস্বী হিন্দুসভ্যতা ছিল তার সঙ্গে অনেকটা আপনাদের ঐক্যসাধন করতে পারব। এইখানে আমার একটি তুলনা মনে উদয় হচ্ছে । বর্তমান কালে ভারতবর্ষের প্রাচীন সভ্যতা খনির ভিতরকার পাথুরে কয়লার মতো । এক কালে যখন তার মধ্যে হ্রাসবৃত্তি আদানপ্রদানের নিয়ম বর্তমান ছিল তখন সে বিপুল অরণ্যরূপে জীবিত ছিল। তখন তার মধ্যে বসন্তবর্ষার সজীব সমাগম এবং ফলপুষ্পপল্লবের স্বাভাবিক বিকাশ ছিল। এখন তার আর বৃদ্ধি নেই, গতি নেই বলে যে তা অনাবশ্যক তা নয়। তার মধ্যে বহু যুগের উত্তাপ ও আলোক নিহিতভাবে বিরাজ করছে। কিন্তু আমাদের কাছে তা অন্ধকারময় শীতল । আমরা তার থেকে কেবল খেলাচ্ছলে ঘন কৃষ্ণবর্ণ অহংকারের স্তম্ভ নির্মাণ করছি। কারণ, নিজের