পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨ 8 স্বদেশ চাই দেখি সে অক্লিষ্ট, অক্লান্ত ; যেন সে কাহার নিমন্ত্রণে সাজগোজ করিয়া বিস্তীর্ণ নীলাকাশে আরামে আসনগ্রহণ করিয়াছে। এই নিখিলগৃহিণীর রান্নাঘর কোথায়, টেকিশালা কোথায়, কোন ভাণ্ডারের স্তরে স্তরে ইহার বিচিত্র আকারের ভাণ্ড সাজানো রহিয়াছে ? ইহার দক্ষিণ হস্তের হাতাবেড়িগুলিকে আভরণ বলিয়া ভ্রম হয়, ইহার কাজকে লীলার মতো মনে হয়, ইহার চলাকে নৃত্য এবং চেষ্টাকে ঔদাসীন্যের মতো জ্ঞান হয়। ঘূর্ণ্যমান চক্রগুলিকে নিম্নে গোপন করিয়া স্থিতিকেই গতির উর্ধ্বে রাখিয়া, প্রকৃতি আপনাকে নিত্যকাল প্রকাশমান রাখিয়াছে ; উর্ধ্বশ্বাস কর্মের বেগে নিজেকে অস্পষ্ট এবং সঞ্চীয়মান কর্মের স্তুপে নিজেকে আচ্ছন্ন করে নাই । এই কর্মের চতুর্দিকে অবকাশ, এই চাঞ্চল্যকে ধ্রুব শাস্তির দ্বারা মণ্ডিত করিয়া রাখা— প্রকৃতির চিরনবীনতার ইহাই রহস্য । কেবল নবীনতা নহে, ইহাই তাহার বল । ভারতবর্ষ তাহার তপ্ততাত্র আকাশের নিকট, তাহার শুষ্কন্ধুসর প্রাস্তরের নিকট, তাহার জলজ্জটামণ্ডিত বিরাট মধ্যাহ্নের নিকট, তাহার নিকষকৃষ্ণ নি:শব্দ রাত্রির নিকট হইতে এই উদার শাস্তি, এই বিশাল স্তব্ধতা, আপনার অস্তঃকরণের মধ্যে লাভ করিয়াছে। (ভারতবর্ষ কর্মের ক্রীতদাস নহে।) সকল জাতির স্বভাবগত অাদশ এক নয়,তাহা লইয়া ক্ষোভ করিবার প্রয়োজন দেখি না। ভারতবর্ষ মানুষকে লঙ্ঘন করিয়া কর্মকে করিয়া তোলে নাই। ফলাকাজক্ষণহীন কর্মকে মাহাত্ম্য দিয়া সে বস্তুত কর্মকে সংযত করিয়া লইয়াছে। ফলের আকাজক্ষা উপড়াইয়া ফেলিলে কর্মের বিষদাত ভাঙিয়া ফেলা হয়। এই উপায়ে মানুষ কর্মের উপরেও নিজেকে জাগ্রত করিবার অবকাশ পায়। হওয়াই আমাদের দেশের চরম লক্ষ্য, করা উপলক্ষমাত্র ।