পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নববর্ষ ૨ (: বিদেশের সংঘাতে ভারতবর্ষের এই প্রাচীন স্তব্ধতা ক্ষুব্ধ হইয়াছে। তাহাতে যে আমাদের বলবৃদ্ধি হইতেছে, এ কথা আমি মনে করি না । ইহাতে আমাদের শক্তি ক্ষয় হইতেছে । ইহাতে প্রতিদিন আমাদের নিষ্ঠ বিচলিত, আমাদের চরিত্র ভগ্নবিকীর্ণ, আমাদের চিত্ত বিক্ষিপ্ত এবং আমাদের চেষ্টা ব্যর্থ হইতেছে। পূর্বে ভারতবর্ষের কার্যপ্রণালী অতি সহজসরল, অতি প্রশাস্ত, অথচ অত্যন্ত দৃঢ় ছিল । তাহাতে আড়ম্বরমাত্রেরই অভাব ছিল, তাহাতে শক্তির অনাবশু্যক অপব্যয় ছিল না । সতী স্ত্রী অনায়াসেই স্বামীর চিতায় আরোহণ করিত ; সৈনিক সিপাহি অকাতরেই চীনা চিবাইয়া লড়াই করিতে যাইত ; আচাররক্ষার জন্য সকল অস্থবিধা বহন করা, সমাজরক্ষার জন্য চূড়ান্ত দুঃখ ভোগ করা এবং ধর্মরক্ষার জন্য প্রাণ বিসর্জন করা, তখন অত্যন্ত সহজ ছিল । নিস্তব্ধতার এই ভীষণ শক্তি ভারতবর্ষের মধ্যে এখনো সঞ্চিত হইয়া আছে ; আমরা নিজেই ইহাকে জানি না। দারিদ্র্যের যে কঠিন বল, মেীনের যে স্তম্ভিত আবেগ,নিষ্ঠার যে কঠোর শাস্তি এবং বৈরাগ্যের যে উদার গাম্ভীর্য, তাহ আমরা কয়েক জন শিক্ষণচঞ্চল যুবক বিলাসে অবিশ্বাসে অনাচারে অতুকরণে এখনো ভারতবর্ষ হইতে দূর করিয়া দিতে পারি নাই। সংযমের দ্বারা, বিশ্বাসের দ্বারা,ধ্যানের দ্বারা, এই মৃত্যুভয়হীন আত্মসমাহিত শক্তি ভারতবর্ষের মুখশ্ৰীতে মৃদুতা এবং মজ্জার মধ্যে কাঠিন্য, লোকব্যবহারে কোমলতা এবং স্বধৰ্মরক্ষায় দৃঢ়ত্ব দান করিয়াছে। শাস্তির মর্মগত এই বিপুল শক্তিকে অনুভব করিতে হইবে, স্তব্ধতার আধারভূত এই প্রকাও কাঠিন্যকে জানিতে হইবে । বহু দুৰ্গতির মধ্যে বহু শতাব্দী ধরিয়া ভারতবর্ষের অন্তর্নিহিত এই স্থির শক্তিই আমাদিগকে রক্ষা করিয়াছে, এবং সময়কালে এই দীনহীনবেশী ভূষণহীন বাক্যহীন নিষ্ঠাদ্রঢ়িষ্ঠ শক্তিই জাগ্রত হইয়া সমস্ত ভারতবর্ষের উপরে আপন বরাভয়হস্ত প্রসারিত করিবে ; ইংরাজি কোর্তা, ইংরাজের দোকানের আসবাব, ইংরাজি মাস্টারের বাক্