পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নববর্ষ २१ আজি নববর্ষে এই শূন্ত প্রাস্তরের মধ্যে ভারতবর্ষের আর-একটি ভাব আমরা হৃদয়ের মধ্যে গ্রহণ করিব। তাহা ভারতবর্ষের একাকিত্ব । এই একাকিত্বের অধিকার বৃহৎ, অধিকার। ইহা উপার্জন করিতে হয় । ইহা লাভ করা, রক্ষণ করা দুরূহ। পিতামহগণ এই একাকিত্ব ভারতবর্ষকে দান করিয়া গেছেন। মহাভারত-রামায়ণের ন্যায় ইহা অামাদের জাতীয় সম্পত্তি । সকল দেশেই এক জন অচেনা বিদেশী পথিক অপূর্ব বেশভূষায় আসিয়া উপস্থিত হইলে স্থানীয় লোকের কৌতুহল যেন উন্মত্ত হইয়া উঠে— তাহাকে ঘিরিয়া, তাহাকে প্রশ্ন করিয়া, আঘাত করিয়া, সন্দেহ করিয়া, বিব্রত করিয়া তোলে। ভারতবাসী অতি সহজে তাহার প্রতি দৃষ্টিপাত করে, তাহার দ্বারা অণহত হয় না এবং তাহাকে আঘাত করে না । চৈনিক পরিব্রাজক ফাহিয়ান হিয়োনৰ্থ সাং যেমন অনায়াসে আত্মীয়ের ন্যায় ভারত পরিভ্রমণ করিয়া গিয়াছেন, য়ুরোপে কখনো সেরূপ পারিতেন না। ধর্মের ঐক্য বাহিরে পরিদৃশ্যমান নহে– যেখানে ভাষা আকৃতি বেশভূষা সমস্তই স্বতন্ত্র, সেখানে কৌতুহলের নিষ্ঠুর আক্রমণকে পদে পদে অতিক্রম করিয়া চলা অসাধ্য। কিন্তু ভারতবর্ষীয় একাকী আত্মসমাহিত ; সে নিজের চারি দিকে একটি চিরস্থায়ী নির্জনতা বহন করিয়া চলে,সেইজন্য কেহ তাহার একেবারে গায়ের উপর আসিয়া পড়ে না। অপরিচিত বিদেশী তাহার পাশ্ব দিয়া চলিয়া যাইবার যথেষ্ট স্থান পায়। যাহারা সর্বদাই ভিড় করিয়া, দল বাধিয়া, রাস্ত জুড়িয়া বসিয়া থাকে, তাহাদিগকে আঘাত না করিয়া এবং তাহীদের কাছ হইতে আঘাত না পাইয়া নূতন লোকের চলিবার সম্ভাবনা নাই। তাহাকে সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়া, সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া, তবে এক প! অগ্রসর হইতে হয়। কিন্তু ভারতবর্ষীয় যেখানে থাকে সেখানে কোনো বাধা রচনা করে না; তাহার স্থানের টানাটানি নাই,তাহার একাকিত্বের