পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

r ** ... নববর্ষ ২৯ আওতায় ছোটো ছোটো সামর্থ্যগুলিকে বলপূর্বক নিষ্ফল করিয়া তোলা শ্রেয়স্কর বোধ করি না । ভারতবর্ষের তত্ত্ববায় যে মরিয়াছে সে একত্র হইবার ক্রটিতে নহে, তাহার যন্ত্রের উন্নতির অভাবে। তাত যদি ভালো হয় এবং প্রত্যেক তন্তুরায় যদি কাজ করে, অন্ন করিয়া খায়, সন্তুষ্টচিত্তে জীবনযাত্রা নির্বাহ করে, তবে সমাজের মধ্যে প্রকৃত দারিদ্র্যের ও ঈর্ষার বিষ জমিতে পায় না এবং ম্যাঞ্চেস্টার তাহার জটিল কলকারখানা লইয়াও ইহাদিগকে বধ করিতে পারে না। যন্ত্রতন্ত্রকে অত্যন্ত সরল ও সহজ করিয়া কাজকে সকলের আয়ত্ত করা, অন্নকে সকলের পক্ষে সুলভ করা প্রাচ্য অাদর্শ । এ কথা আমাদিগকে মনে রাখিতে হইবে । আমোদ বলো, শিক্ষা বলো, হিতকর্ম বলো, সকলকেই একান্ত জটিল ও দুঃসাধ্য করিয়া তুলিলে, কাজেই সম্প্রদায়ের হাতে ধরা দিতে হয়। তাহাতে কর্মের আয়োজন ও উত্তেজনা উত্তরোত্তর এতই বৃহৎ হইয়া উঠে যে মানুষ আচ্ছন্ন হইয়া যায়। প্রতিযোগিতার নিষ্ঠুর তাড়নায় কর্মজীবীরা যন্ত্রের অধম হয় । বাহির হইতে সভ্যতার বৃহৎ আয়োজন দেখিয়া স্তম্ভিত হই, তাহার তলদেশে যে নিদারুণ নরমেধযজ্ঞ অহোরাত্র অতুষ্ঠিত হইতেছে তাহ গোপনে থাকে । কিন্তু বিধাতার কাছে তাহা গোপন নহে, মাঝে মাঝে সামাজিক ভূমিকম্পে তাহার পরিণামের সংবাদ পাওয়া যায়। যুরোপে বড়ো দল ছোটো দলকে পিষিয়া ফেলে, বড়ো টাকা ছোটো টাকাকে উপবাসে ক্ষীণ করিয়া আনিয়া শেষকালে বটিকার মতো চোখ বুজিয়া গ্রাস করিয়া ফেলে। কাজের উদ্যমকে অপরিমিত বাড়াইয়া তুলিয়া, কাজগুলাকে প্রকাণ্ড করিয়া, কাজে কাজে লড়াই বাধাইয়া দিয়া যে অশান্তি ও অসস্তোষের বিষ উন্মথিত হইয়া উঠে, আপাতত সে আলোচনা থাক। আমি কেবল ভাবিয়া দেখিতেছি, এইসকল কৃষ্ণধূমশ্বসিত দানবীয় কারখানাগুলার ভিতরে, বাহিরে, চারি দিকে মানুষগুলাকে যে ভাবে তাল পাকাইয়।