○ り স্বদেশ লাভের বিষয় হইতে পারে ; যতক্ষণ তাহার উৎকট বিদেশীয়ত্ব অবিকৃত থাকে ততক্ষণ তাহা লাভ নহে। বিলাতি সরস্বতীর পোষ্যপুত্ৰগণ এ কথা কোনোমতেই বুঝিতে পারেন না । পুষ্টিসাধনের দিকে তাহদের দৃষ্টি নাই, বোঝাই করাকেই তাহারা পরমার্থ জ্ঞান করেন। এইজন্তই আমাদের দেশীয় রাজ্যগুলিও বিদেশী কার্যবিধির অসংগত অনাবশুক বিপুল জঞ্জাল-জালে নিজের শক্তিকে অকারণে ক্লিষ্ট করিয়া তুলিতেছে, বিদেশী বোঝাকে যদি অনায়াসে গ্রহণ করিতে পারিতাম, যদি তাহাকে বোঝার মতো না দেখিতে হইত, রাজ্য যদি একটা অপিস মাত্র হইয়া উঠিবার চেষ্টায় প্রতি মুহুর্তে ঘৰ্মাক্ত কলেবর হইয়া না উঠিত, যাহা সজীব হৃৎপিণ্ডের নাড়ীর সহিত সম্বন্ধযুক্ত ছিল তাহাকে যদি কলের পাইপের সহিত সংযুক্ত করা ন হইত, তাহা হইলে আপত্তি করিবার কিছু ছিল না। আমাদের দেশের রাজ্য কেরানি-চালিত বিপুল কারখানা নহে, নিভুল নির্বিকার এঞ্জিন নহে, তাহার বিচিত্র সম্বন্ধস্থত্রগুলি লৌহদণ্ড নহে, তাহা হৃদয়তন্তু— রাজলক্ষ্মী প্রতি মুহুর্তে তাহার কর্মের শুষ্কতার মধ্যে রসসঞ্চার করেন, কঠিনকে কোমল করেন, তুচ্ছকে সৌন্দর্যে মণ্ডিত করিয়া দেন, দেনাপাওনার ব্যাপারকে কল্যাণের কাস্তিতে উজ্জল করিয়া তোলেন, এবং ভুলক্রটিকে ক্ষমার অশ্রুজলে মার্জনা করিয়া থাকেন। অামাদের মন্দভাগ্য আমাদের দেশীয় রাজ্যগুলিকে বিদেশী অফিসের ছাঁচের মধ্যে ঢালিয়া তাহাদিগকে কলরূপে বানাইয়া না তোলে, এইসকল স্থানেই আমরা স্বদেশলক্ষ্মীর স্তন্ত্যসিক্ত স্নিগ্ধ বক্ষস্থলের সজীব কোমল মাতৃম্পর্শ লাভ করিয়া যাইতে পারি— এই অামাদের কামনা । দেশের ভাষা, দেশের সাহিত্য, দেশের শিল্প, দেশের রুচি, দেশের কাস্তি এখানে যেন মাতৃবক্ষে আশ্রয়লাভ করে এবং দেশের শক্তি মেঘমুক্ত পূর্ণচন্দ্রের মতো আপনাকে অতি সহজে অতি সুন্দরভাবে প্রকাশ করিতে পারে। শ্রাবণ ১৩১২
