পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

“У о স্বদেশ চলিতে পারে নাই বটে, কিন্তু পদে পদে নব নব অভিঘাত প্রাপ্ত হইয়া এখনো ইহা সম্মুখে ধাবমান। অন্যান্য সভ্যতায় এক ভাব, এক আদশের একাধিপত্যে অধীনতাবন্ধনের স্বষ্টি করিয়াছিল ; কিন্তু যুরোপে কোনো এক সামাজিক শক্তি অপর শক্তিগুলিকে সম্পূর্ণ অভিভূত করিতে না পারায় এবং ঘাতপ্রতিঘাতে পরস্পরকে সচেতন অথচ সংযত করিয়া রাখায়, যুরোপীয় সভ্যতায় স্বাধীনতার জন্ম হইয়াছে। ক্রমাগত বিবাদে এই-সকল বিরোধী শক্তি আপসে একটা বোঝাপড়া করিয়া সমাজে আপন আপন অধিকার নির্দিষ্ট করিয়া লইয়াছে ; এইজন্য ইহার পরস্পরকে উচ্ছেদ করিবার জন্য সচেষ্ট থাকে না, এবং নানা প্রতিকুল পক্ষ আপন স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করিয়া চলিতে পারে । ইহাই আধুনিক যুরোপীয় সভ্যতার মূলপ্রকৃতি, ইহাই ইহার শ্রেষ্ঠত্ব। গিজে বলেন, বিশ্বজগতের মধ্যে ও এই বৈচিত্র্যের সংগ্রাম । ইহা সুস্পষ্ট যে, কোনো একটি নিয়ম, কোনো এক প্রকারের গঠনতন্ত্র, কোনো একটি সরল ভাব, কোনো একটি বিশেষ শক্তি সমস্ত বিশ্বকে এক অধিকার করিয়া, তাহাকে একটিমাত্র কঠিন ছাচে ফেলিয়া, সমস্ত বিরোধী প্রভাবকে দূর করিয়া, শাসন করিবার ক্ষমতা পায় নাই। বিশ্বে নানা শক্তি, নানা তত্ত্ব, নানা তন্ত্র জড়িত হইয়া যুদ্ধ করে ; পরস্পরকে গঠিত করে ; কেহ কাহাকে সম্পূর্ণ পরাস্ত করে না, সম্পূর্ণ পরাস্ত হয় না । অথচ এই-সকল গঠন, তত্ত্ব ও ভাবের বৈচিত্র্য, তাহীদের সংগ্রাম ও বেগ, একটি বিশেষ ঐক্য, একটি বিশেষ আদর্শের অভিমুখে চলিয়াছে। যুরোপীয় সভ্যতাই এইরূপ বিশ্বতন্ত্রের প্রতিবিম্ব । ইহা সংকীর্ণরূপে সীমাবদ্ধ একরত ও অচল নহে । জগতে সভ্যতা এই প্রথম নিজের বিশেষ মূর্তি বর্জন করিয়া দেখা দিয়াছে। এই প্রথম ইহার বিকাশ বিশ্বব্যাপারে বিকাশের ন্যায় বহুবিভক্ত, বিপুল এবং বহুচেষ্টাগত ।