পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ব্রাহ্মণ সকলেই জানেন, সম্প্রতি কোনো মহারাষ্ট্র ব্রাহ্মণকে তাহার প্রভু পাদুকাঘাত করিয়াছিল ; তাহার বিচার উচ্চতম বিচারালয় পর্যন্ত গড়াইয়াছিল, শেষ বিচারক ব্যাপারটাকে তুচ্ছ বলিয়া উড়াইয়া দিয়াছেন । 聽 ঘটনাটা এতই লজ্জাকর যে, মাসিকপত্রে আমরা ইহার অবতারণা করিতাম না । মার খাইয়া মারা উচিত বা ক্রনন করা উচিত বা নালিশ করা উচিত, সে-সমস্ত আলোচনা খবরের কাগজে হইয়া গেছে— সে-সকল কথাও আমরা তুলিতে চাহি না । কিন্তু এই ঘটনাটি উপলক্ষ করিয়া যে-সকল গুরুতর চিস্তার বিষয় আমাদের মনে উঠিয়াছে তাহা ব্যক্ত করিবার সময় উপস্থিত । বিচারক এই ঘটনাটিকে তুচ্ছ বলেন ; কাজেও দেখিতেছি ইহা তুচ্ছ হইয়া উঠিয়াছে, সুতরাং তিনি অন্যায় বলেন নাই । কিন্তু এই ঘটনাটি তুচ্ছ বলিয়া গণ্য হওয়াতেই বুঝিতেছি, আমাদের সমাজের বিকার দ্রুত বেগে অগ্রসর হইতেছে। ইংরাজ যাহাকে প্রেসটিজ অর্থাৎ তাহদের রাজসম্মান বলেন, তাহাকে মূল্যবান জ্ঞান করিয়া থাকেন। কারণ, এই প্রেসটিজের জোর অনেক সময়ে সৈন্যের কাজ করে । যাহাকে চালনা করিতে হইবে তাহার কাছে প্রেসটিজ রাখা চাই। বোয়ার-যুদ্ধের আরম্ভকালে ইংরাজসাম্রাজ্য যখন স্বল্পপরিমিত কৃষকসম্প্রদায়ের হাতে বার বার অপমানিত হইতেছিল, তখন ইংরাজ ভারতবর্ষের মধ্যে যত সংকোচ অনুভব করিতেছিল এমন আর কোথাও নহে। তখন আমরা সকলেই বুঝিতে পারিতেছিলাম ইংরাজের বুট এ দেশে পূর্বের ন্যায় তেমন অত্যন্ত জোরে মচ মচ করিতেছে না। আমাদের দেশে এক কালে ব্রাহ্মণের তেমনি একটা প্রেস্টজ ছিল।