পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ব্রাহ্মণ جولا উপর সমর্পণ করিতেই হয়। র্তাহারা জীবনযাত্রাকে সরল ও বিশুদ্ধ করিয়া, অভাবকে সংক্ষিপ্ত করিয়া, অধ্যয়ন-অধ্যাপন যজনযাজনকেই ব্ৰত করিয়া দেশের উচ্চতম আদর্শকে সমস্ত দোকানদারির কলুষম্পর্শ হইতে রক্ষা করিয়া সামাজিক যে সম্মান প্রাপ্ত হইতেছেন, তাহার যথার্থ অধিকারী হইবেন, এরূপ আশা করা যায় । যথার্থ অধিকার হইতে লোক নিজের দোষে ভ্ৰষ্ট হয় । ইংরাজের বেলাতেও তাহ দেখিতে পাই । দেশী লোকের প্রতি অন্যায় করিয়া যখন প্রেসটিজরক্ষার দোহাই দিয়া ইংরাজ দণ্ড হইতে অব্যাহতি চায়, তখন যথার্থ প্রেসটিজের অধিকার হইতে নিজেকে বঞ্চিত করে । ন্যায়পরতার প্রেসটিজ সকল প্রেসটিজের বড়ো, তাহার কাছে আমাদের মন স্বেচ্ছাপূর্বক মাথা নত করে ; বিভীষিকা আমাদিগকে ঘাড়ে ধরিয়া নোয়াইয়া দেয়, সেই প্রণতি-অবমাননার বিরুদ্ধে আমাদের মন ভিতরে ভিতরে বিদ্রোহ না করিয়া থাকিতে পারে না । ব্রাহ্মণও যখন আপন কর্তব্য পরিত্যাগ করিয়াছে তখন কেবল গায়ের জোরে, পরলোকের ভয় দেখাইয়া, সমাজের উচ্চতম আসনে আপনাকে রক্ষা করিতে পারে না । কোনো সম্মান বিনা মূল্যের নহে, যথেচ্ছ কাজ করিয়া সম্মান রাখা যায় না। যে রাজা সিংহাসনে বসেন তিনি দোকান খুলিয়া ব্যাবসা চালাইতে পারেন না । সম্মান র্যাহার প্রাপ্য র্তাহাকেই সকল দিকে সর্বদা নিজের ইচ্ছাকে খর্ব করিয়া চলিতে হয়। গৃহের অন্যান্য লোকের অপেক্ষ আমাদের দেশে গৃহকর্তা ও গৃহকত্ৰীকেই সাংসারিক বিষয়ে অধিক বঞ্চিত হইতে হয়— বাড়ির গৃহিণীই সকলের শেষে অন্ন পান । ইহা না হইলে আত্মম্ভরিতার উপর কর্তৃত্বকে দীর্ঘ কাল রক্ষা করা যায় না। সম্মানও পাইবে অথচ তাহার কোনো মূল্য দিবে না, ইহা কখনোই চিরদিন সহ হয় না ।