পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ব্রাহ্মণ * O. জিনিস পাওয়া যায় না ও স্থায়ী মূল্যবান কোনো জিনিস রক্ষণ করা যায় না । অথচ আবেগ ব্যতীত কাজ ও কাজ ব্যতীত সমাজ চলিতে পারে না । এইজন্যই ভারতবর্ষ আপন সমাজে গতি ও স্থিতির সমন্বয় করিতে চাহিয়াছিল। ক্ষত্ৰিয় বৈশু প্রভৃতি যাহার হাতে-কলমে সমাজের কার্য সাধন করে তাহীদের কর্মের সীমা নির্দিষ্ট ছিল । এইজন্যই ক্ষত্রিয় ক্ষাত্রধর্মের অাদশ রক্ষণ করিয়া নিজের কর্তব্যকে ধর্মের মধ্যে গণ্য করিতে পারিত। স্বার্থ ও প্রবৃত্তির উর্ধের্ব ধর্মের উপরে কর্তব্য স্থাপন করিলে কাজের মধ্যেও বিশ্রাম এবং আধ্যাত্মিকতা লাভের অবকাশ পাওয়া যায় । যুরোপীয় সমাজ যে নিয়মে চলে তাহাতে গতিজনিত বিশেষ একটা বোকের মুখেই অধিকাংশ লোককে ঠেলিয়া দেয় । সেখানে বুদ্ধিজীবী লোকেরা রাষ্ট্রীয় ব্যপারেই ঝুকিয়া পড়ে, সাধারণ লোকে অর্থোপার্জনেই ভিড় করে। বর্তমান কালে সাম্রাজ্যলোলুপতা সকলকে গ্রাস করিয়াছে এবং জগৎ জুড়িয়া লঙ্কাভাগ চলিতেছে। এমন সময় হওয়া বিচিত্র নহে যখন বিশুদ্ধ জ্ঞানচর্চা যথেষ্ট লোককে অাকর্ষণ করিবে না। এমন সময় আসিতে পারে যখন অবিশু্যক হইলেও সৈন্য পাওয়া যাইবে না। কারণ প্রবৃত্তিকে কে ঠেকাইবে ? যে জর্মনি একদিন পণ্ডিত ছিল সে জর্মনি যদি বণিক হইয়া দাড়ায়, তবে তাহার পাণ্ডিত্য উদ্ধার করিবে কে ? যে ইংরাজ একদিন ক্ষত্রিয়ভাবে আর্তক্রাণব্রত গ্রহণ করিয়াছিল সে যখন গায়ের জোরে পৃথিবীর চতুর্দিকে নিজের দোকানদারি চালাইতে ধাবিত হইয়াছে, তখন তাহাকে তাহার সেই পুরাতন উদার ক্ষত্রিয়ভাবে ফিরাইয়া আনিবে কোন শক্তিতে ? এই বোকের উপরেই সমস্ত কর্তৃত্ব না দিয়া সংযত সুশৃঙ্খল কর্তব্যবিধানের উপরে কর্তৃত্বভার দেওয়াই ভারতবর্ষীয় সমাজপ্রণালী। সমাজ যদি সজীব থাকে, বাহিরের আঘাতের দ্বারা অভিভূত হইয়া না পড়ে,