পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*b* স্বদেশ অত্যাবস্তকতা বাংলা সমাজে ছিল না। যে খুশি যুদ্ধ করুক, বাণিজ্য করুক, তাহাতে সমাজের বিশেষ কিছু অাসিত যাইত না, এবং যাহারা যুদ্ধ বাণিজ্য কৃষি শিল্পে নিযুক্ত থাকিবে তাহাদিগকে বিশেষ চিহ্নের দ্বারা পৃথক করিবার কিছুমাত্র প্রয়োজন ছিল না। ব্যবসায় লোকে নিজের গরজেই করে, কোনো বিশেষ ব্যবস্থার অপেক্ষা রাখে না— ধর্মসম্বন্ধে সে বিধি নহে ; তাহা প্রাচীন নিয়মে আবদ্ধ, তাহার অায়োজন রীতিপদ্ধতি অামাদের স্বেচ্ছাবিহিত নহে । আমাদের সমস্ত সমাজ প্রধানতই দ্বিজসমাজ ; ইহা যদি না হয়, সমাজ যদি শূদ্রসমাজ হয়, তবে কয়েকজন মাত্র ব্রাহ্মণকে লইয়া এ সমাজ যুরোপীয় অাদর্শেও খর্ব হইবে, ভারতবর্ষীয় আদশেও খর্ব হইবে । সমস্ত উন্নত সমাজই সমাজস্থ লোকের নিকট প্রাণের দাবি করিয়া থাকে ; আপনাকে নিকৃষ্ট বলিয়া স্বীকার করিয়া অারামে জড়ত্বমুখভোগে যে সমাজ আপনার অধিকাংশ লোককে প্রশ্রয় দিয়া থাকে সে সমাজ মরে, এবং না’ও যদি মরে তবে তাহার মরাই ভালো । যুরোপ কর্মের উত্তেজনায়, প্রবৃত্তির উত্তেজনায় সর্বদাই প্রাণ দিতে প্রস্তুত ; আমরা যদি ধর্মের জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত না হই তবে সে প্রাণ অপমানিত হইতে থাকিলে অভিমান প্রকাশ করা আমাদের শোভা পায় না । যুরোপীয় সৈন্য যুদ্ধাতুরাগের উত্তেজনায় ও বেতনের লোভে ও গৌরবের আশ্বাসে প্রাণ দেয়, কিন্তু ক্ষত্রিয় উত্তেজনা ও বেতনের অভাব ঘটিলেও যুদ্ধে প্রাণ দিতে প্রস্তুত থাকে। কারণ, যুদ্ধ সমাজের অত্যাবশ্যক কৰ্ম ; এক সম্প্রদায় যদি নিজের ধর্ম বলিয়াই সেই কঠিন কর্তব্যকে গ্রহণ করেন তবে কর্মের সহিত ধর্মরক্ষা হয় । দেশস্থদ্ধ সকলে মিলিয়াই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হইলে মিলিটারিজম-এর প্রাবল্যে দেশের গুরুতর অনিষ্ট ঘটে ।