পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

by o স্বদেশ অবিদ্যা ; ইহাকে উত্তীর্ণ হইতে হইলে ইহার ভিতর দিয়াই যাইতে হয়, কিন্তু এমনভাবে যাইতে হয় যেন ইহাই চরম না হইয়া উঠে । কর্মকেই একান্ত প্রাধান্ত দিলে সংসারই চরম হইয়া উঠে ; মৃত্যুকে উত্তীর্ণ হওয়া যায় না, অমৃত লাভ করিবার লক্ষ্যই ভ্ৰষ্ট হয়, তাহার অবকাশই থাকে না । এইজন্যই কর্মকে সীমাবদ্ধ করা, কর্মকে ধর্মের সহিত যুক্ত করা, কর্মকে প্রবৃত্তির হাতে— উত্তেজনার হাতে— কর্মজনিত বিপুল বেগের হাতে ছাড়িয়া না দেওয়া, এবং এইজন্যই ভারতবর্ষে কর্মভেদ বিশেষ বিশেষ জনশ্রেণীতে নির্দিষ্ট করা । ধর্ম ও কর্মের সামঞ্জস্য রক্ষণ করা এবং মানুষের চিত্ত হইতে কর্মের নাগপাশ শিথিল করিয়া তাহাকে এক দিকে সংসারব্রতপরায়ণ, অন্তদিকে মুক্তির অধিকারী করিবার অন্য কোনো উপায় তো দেখি না। আপত্তির কথা এই, সমাজকে বাধিয়া-সাধিয়া নিজেকে তাহার মধ্যে রুদ্ধ করিলে মাতুষের স্বাধীন প্রকৃতি পীড়িত হয়। মানুষকে খাটো করিয়া সমাজকে বড়ো করিবার কোনো অর্থ নাই। মানুষের মনুষ্যত্বরক্ষার জন্যই সমাজ । উত্তরে বক্তব্য এই, ভারতবর্ষ সমাজকে সংযত সরল করিয়া তুলিয়াছিল, তাহ সমাজের মধ্যেই আবদ্ধ হইবার জন্য নহে। নিজেকে শতধাবিভক্ত অন্ধ চেষ্টার মধ্যে বিক্ষিপ্ত না করিয়া, সে অাপন সংহত শক্তিকে অনস্তের অভিমুখে একাগ্র করিবার জন্তই ইচ্ছাপূর্বক বাহ বিষয়ে সংকীর্ণতা আশ্রয় করিয়াছিল । নদীর তটবন্ধনের ন্যায় সমাজবন্ধন তাহাকে বেগদান করিবে, বন্দী করিবে না, এই তাহার উদ্দেশ্য ছিল । এইজন্য ভারতবর্ষের সমস্ত ক্রিয়াকর্মের মধ্যে, সুখশাস্তিসস্তোষের মধ্যে মুক্তির আহবান আছে ; আত্মাকে ভূমানন্দে ব্রহ্মের মধ্যে বিকশিত করিয়া তুলিবার জন্যই সে সমাজের মধ্যে আপন শিকড় বাধিয়াছিল। যদি সেই লক্ষ্য হইতে ভ্ৰষ্ট হই, জড়ত্ববশত সেই পরিণামকে উপেক্ষা করি, তবে বন্ধন কেবল বন্ধনই