পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমাজভেদ *堂 সেখানে ইংরাজ বৌদ্ধসম্প্রদায় স্থাপন করেন, তাহাতে যুরোপের গায়ে বাজে না, কারণ যুরোপের গা রাষ্ট্রতন্ত্র । জিব্ৰণ্টরের পাহাড়টুকু সমস্ত ইংলণ্ড প্রাণ দিয়া রক্ষা করিবে, কিন্তু খৃস্টানধর্ম সম্বন্ধে সতর্ক হওয়া সে অবিশু্যক বোধ করে না । পূর্বদেশে তাহার বিপরীত। প্রাচ্য সভ্যতার কলেবর ধর্ম। ধর্ম বলিতে রিলিজন নহে, সামাজিক কর্তব্যতন্ত্ৰ— তাহার মধ্যে যথাযোগ্য ভাবে রিলিজন পলিটিক্স সমস্তই আছে। তাহাকে আঘাত করিলে সমস্ত দেশ ব্যথিত হইয়া উঠে, কারণ সমাজেই তাহার মর্মস্থান, তাহার জীবনীশক্তির অন্য কোনো আশ্রয় নাই। শিথিল রাজশক্তি বিপুল চীনের সর্বত্র আপনাকে প্রবলভাবে প্রত্যক্ষগোচর করিতে পারে না । রাজধানী হইতে স্থদূরবর্তী দেশগুলিতে রাজার আজ্ঞা পৌছে, রাজপ্রতাপ পৌছে না, কিন্তু তথাপি সেখানে শান্তি আছে, শৃঙ্খলা আছে, সভ্যতা আছে। ডাক্তার ডিলন ইহাতে বিস্ময় প্রকাশ করিয়াছেন । অল্পই বল ব্যয় করিয়া এত বড়ো রাজ্য সংযত রাখা সহজ কথা নহে । কিন্তু বিপুল চীনদেশ শস্ত্রশাসনে সংযত হইয়া নাই, ধর্মশাসনেই সে নিয়মিত । পিতাপুত্র ভ্রাতাভগিনী স্বামীগ্রী প্রতিবেশীপল্লীবাসী রাজাপ্রজা যাজকযজমানকে লইয়া এই ধর্ম । বাহিরে যতই বিপ্লব হউক, রাজাসনে যে কেহই অধিরোহণ করুক, এই ধর্ম বিপুল চীনদেশের অভ্যন্তরে থাকিয়া অখণ্ড নিয়মে এই প্রকাণ্ড জনসমাজকে সংযত করিয়া রাখিয়াছে। সেই ধর্মে আঘাত লাগিলে চীন মৃত্যুবেদন পায় এবং আত্মরক্ষার জন্য নিষ্ঠুর হইয়া উঠে। তখন কে তাহাকে ঠেকাইবে ? তখন রাজাই-বা কে, রাজার সৈন্যই-বা কে ? তখন চীনসাম্রাজ্য নহে, চীনজাতি জাগ্রত হইয়া উঠে । একটি ক্ষুদ্র দৃষ্টাস্তে আমার কথা পরিষ্কার হইবে। ইংরাজপরিবার ব্যক্তিবিশেষের জীবিতকালের সহিত সম্বন্ধযুক্ত। আমাদের পরিবার