পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমাজভেদ Ե-> নিজের অশ্ব উন্মত্ত হইয়া না উঠিলে ইহার রথকে বাহির হইতে কেহ প্রতিরোধ করিবে, এমন কল্পনাই করিতে পারি না । এমনতরো গৌরবান্বিত সমাজকে শ্রদ্ধার সহিত পর্যবেক্ষণ না করিয়া ইহাকে যাহারা ব্যঙ্গ করে, বাংলাদেশের সেই-সকল স্থলভ লেখক অজ্ঞাতসারে নিজের প্রতিই বিদ্রুপ করিয়া থাকে। অপর পক্ষে, বহু শত বৎসরের অনবরত বিপ্লব যে সমাজকে ভূমিসাৎ করিতে পারে নাই, সহস্ৰ দুৰ্গতি সহ করিয়াও যে সমাজ ভারতবর্ষকে দয়াধর্মক্রিয়াকর্তব্যের মধ্যে সংযত করিয়া তুলিয়া রাখিয়াছে— রসাতলের মধ্যে নামিতে দেয় নাই, যে সমাজ হিন্দুজাতির বুদ্ধিবৃত্তিকে সতর্কতার সহিত এমনভাবে রক্ষা করিয়া আসিয়াছে যে বাহির হইতে উপকরণ পাইলেই তাহ প্ৰজলিত হইয়া উঠিতে পারে, যে সমাজ মূঢ় অশিক্ষিত জনমণ্ডলীকেও পদে পদে প্রবৃত্তি দমন করিয়া পরিবার ও সমাজের হিতার্থে নিজেকে উৎসর্গ করিতে বাধ্য করিয়াছে, সেই সমাজকে যে মিশনরি শ্রদ্ধার সহিত না দেখেন তিনিও শ্রদ্ধার যোগ্য নহেন । র্তাহার এইটুকু বোঝা দরকার যে, এই বিপুল সমাজ একটি বৃহৎ প্রাণীর ন্যায় ; আবখ্যক হইলেও, ইহার কোনো এক অঙ্গে আঘাত করিবার পূর্বে সমগ্র প্রাণীটির শরীরতত্ত্ব আলোচনা করার প্রয়োজন হয় । বস্তুত সভ্যতার ভিন্নতা আছে ; সেই বৈচিত্র্যই বিধাতার অভিপ্রেত। এই ভিন্নতার মধ্যে জ্ঞানোজ্জল সহৃদয়তা লইয়া পরম্পর প্রবেশ করিতে পারিলে, তবেই এই বৈচিত্র্যের সার্থকতা। যে শিক্ষা ও অভ্যাসে সেই প্রবেশের দ্বার রুদ্ধ করিয়া দেয় তাহা বর্বরতার সোপান । তাহাতেই অন্যায় অবিচার নিষ্ঠুরতার স্থষ্টি করিতে থাকে। প্রকৃত সভ্যতার লক্ষণ কী ? সেই সভ্যতা যাহাকে অধিকার করিয়াছে ‘স সর্বজ্ঞঃ সর্বমেবাবিবেশ’ তিনি সকলকে জানেন ও সকলের মধ্যে প্রবেশ করেন। যাহা পাশ্চাত্য সভ্যতাকে সর্বদাই উপহাস করে ও ধিক্কার দেয় তাহ