পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

వె శి স্বদেশ ভদ্র কাগজের কয় ছত্রের মধ্যেও কি সেই আঘাতেরই বেগ নাই ? স্বজাতিকুত খুনকে কোমল স্নেহের সহিত দেখিয়া হত ব্যক্তির আত্মীয়সম্প্রদায়ের বিলাপকে যাহারা বিরক্তির সহিত ধিক্কার দেয় তাহারাও কি খুন পোষণ করিতেছে না ? কিছু কাল হইতে আমরা দেখিতেছি, যুরোপীয় সভ্যতায় ধর্মনীতির আদর্শ সাধারণত অভ্যাসের উপরেই প্রতিষ্ঠিত, ধর্মবোধশক্তি এই সভ্যতার অন্ত:করণের মধ্যে উদ্ভাসিত হয় নাই । এইজন্য অভ্যাসের গণ্ডীর বাহিরে এই আদর্শ পথ খুজিয়া পায় না, অনেক সময় বিপথে মারা যায় । যুরোপীয় সমাজে ঘরে ঘরে কাটাকাটি খুনখুনি হইতে পারে না, এরূপ ব্যবহার সেখানকার সাধারণ স্বার্থের বিরোধী। বিষ প্রয়োগ বা অস্ত্রাঘাতের দ্বারা খুন করাটা যুরোপের পক্ষে কয়েক শতাব্দী হইতে ক্রমশ: অনভ্যস্ত হইয়া আসিয়াছে । কিন্তু খুন বিনা অস্ত্রাঘাতে, বিনা রক্তপাতে হইতে পারে। ধর্মবোধ যদি অকৃত্রিম আভ্যন্তরিক হয় তবে সেরূপ খুনও নিন্দনীয় এবং অসম্ভব হইয়া পড়ে । একটি বিশেষ দৃষ্টান্ত অবলম্বন করিয়া এ কথাটা স্পষ্ট করিয়া তোলা যাক । হেনরি স্যাভেজ ল্যাগুর একজন বিখ্যাত ভ্রমণকারী। তিব্বতের তীর্থস্থান লাসায় যাইবার জন্য র্তাহার দুৰ্নিবার ঔংস্থক্য জন্মে। সকলেই জানেন, তিববতীরা যুরোপীয় ভ্রমণকারী ও মিশনারি প্রভৃতিকে সন্দেহ করিয়া থাকে। তাহদের দুর্গম পথঘাট বিদেশীর কাছে পরিচিত নহে, ইহাই তাহদের আত্মরক্ষার প্রধান অস্ত্র, সেই অস্ত্রটি যদি তাহারা জিওগ্রাফিকাল সোসাইটির হস্তে সমর্পণ করিয়া নিশ্চিস্ত হইয়া বসিতে অনিচ্ছুক হয় তবে তাহাদিগকে দোষ দেওয়া যায় না ।