পাতা:স্বর্গীয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর - রজনীকান্ত গুপ্ত.pdf/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

(২৪)

সাহেবকে বলিলাম, ’তুমি আমার হিত বসিয়া বাজে কথায় সময়ক্ষেপ করিতেছ। ইহাতে তোমার ফুরসুথ আছে। আর এ ব্যক্তি অবশ্য কোনও প্রয়োজনের অনুরোধে তোমার সহিত দেখা করিতে আসিয়াছে। উহাতে তোমার ফরসুথ নাই। আমি সামান্য গরীব মানুষ; পাল্কীভাড়া করিয়া আসিয়াছি। এ ব্যক্তি যদি গরীব হয়, তাহা হইলে বেচারীর গাড়ীভাড়া দণ্ড হইবে—আর এক দিন আসিলে আবার গাড়ীভাড়া দিতে হইবে।’ ইডেন সাহেব তখন ঈষৎ হাসিয়া দর্শনার্থী ভদ্রলোকটিকে আসিতে বলিলেন।” মহাপুরুষের এইরূপ উদারতা, এইরূপ সমদর্শিতা ও এইরূপ অহঙ্কারশূন্যতা ছিল। একদা একটি ভদ্রসন্তান তাঁহার নিকট উপস্থিত হইয়া কাতরভাবে বলিলেন—“বড় দায়গ্রস্ত হইয়া আপনার নিকট আসিয়াছি। দশ হাজার টাকা না হইলে উপস্থিত দায় হইতে মুক্ত হইতে পারি না। আমি উক্ত টাকা পরে ফিরাইয়া দিব।” বিদ্যাসাগর মহাশয়ের নিকট তখন বেশী টাকা ছিল না। তথাপি তিনি ভদ্রসন্তানের কাতরতাদর্শনে ব্যথিত হইয়া, অন্য স্থান হইতে টাকা আনিয়া দিয়া কহিলেন, “এই টাকা অন্যের নিকট হইতে আনিয়া দিলাম—তোমার সুবিধামত দিয়া যাইও।” ভদ্রলোকটি টাকা লইয়া চলিয়া গেলেন। পরে বিদ্যাসাগর মহাশয় এই টাকার জন্য তাঁহার নিকট লোক পাঠাইলে তিনি কহিয়াছিলেন—“আমি দান গ্রহণ করিয়াছি। টাকা যে ফিরাইয়া দিতে হইবে, তাহা। ভাবি নাই।” বিদ্যাসাগর মহাশয় তাঁহার এই কথা শুনিয়া। হাস্য করিয়া বলিয়াছিলেন—“লোকটা আমাকে ঠকাইল, দেখিতেছি।” আর তিনি টাকার জন্য তাহার নিকট লোক পাঠান নাই; স্বয়ংও তাঁহার নিকটে কখনও টাকা চাহেন নাই। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের মহত্ত্বের সম্বন্ধে এইরূপ অনেক কথা আছে। এই