পাতা:স্বর্গীয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর - রজনীকান্ত গুপ্ত.pdf/৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বর্গীয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

আমাদের প্রাচীন ইতিহাসের পর্য্যালোচনা করিলে ইহা জানিতে পারা যায় রে, বিলাসবিদ্বেষ, কষ্টসহিষ্ণুতা, পরার্থপরতা ও সর্ব্বপ্রকার কঠোরতায় অপরাঙ্মুখতা, আমাদের জীবনের প্রকৃত লক্ষ্য ছিল। হিন্দুছাত্ত্র যখন শাস্ত্রানুশীলনে মনোনিবেশ করিতেন, তখন তাঁহাকে অতি কঠোর ব্রতে দীক্ষিত হইতে হইত। আপাতরম্য সৌখীনভাবে তখন তাঁহার প্রবৃত্তি থাকিত না, বিষয়বাসনার পঙ্কিল প্রবাহে তখন তাহার হৃদয় কলুষিত হইত না, উচ্ছৃঙ্খলতার সমাবেশেও তখন তাঁহার প্রত্যেক কার্য্য উন্মার্গগামী হইয়া উঠিত না। তিনি তখন নানা কষ্ট সহিয়া, বিঘ্ন বিপত্তির সহিত ঘোরতর সংগ্রাম করিয়া, নানা দুঃসাধ্য কার্য্যসাধনে সর্ব্বদা উদ্যত থাকিয়া, শারীরিক উন্নতির সহিত অপূর্ব্ব মানসিক শক্তির পরিচয় দিতেন। হিন্দু গৃহস্থ যখন গার্হস্থ্যধর্ম্মপালনে প্রবৃত্ত হইতেন, তখন তাঁহাকে পরের জন্য সর্ব্বস্ব ত্যাগ করিতে হইত। তিনি তখন আত্মসুখের প্রতি দৃক্‌পাত করিতেন না, নিরবচ্ছিন্ন আত্মোদরপূরণে আসক্ত থাকিতেন না, বা আত্মসমৃদ্ধির বিস্তার করিয়া বিলাসসাগরে ভাসিয়া বেড়াইতেন না। তখন তাঁহার সমস্ত কার্য্য পরোপকারার্থে অনুষ্ঠিত হইত। পরপরি চর্য্যাই তখন তিনি আপনার প্রধান ব্রত বলিয়া মনে করিতেন। তাঁহার এই পবিত্র ব্রতের মহিমায়, রোগশোকতাপময় সংসার শান্তিনিকেতনস্বরূপ হইয়া উঠিত। “শ্যামলপত্রাবৃত ফলপুষ্পযুক্ত বৃক্ষ যেমন স্নিগ্ধ ছায়ায় পথশ্রান্ত পথিকের শ্রান্তিবিনোদন করে, সুস্বাদু