পাতা:স্বর্গীয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর - রজনীকান্ত গুপ্ত.pdf/৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
(৬)

সীন হইয়াছিলেন। অসামান্য অধ্যবসায়ে, অনন্যসাধারণ কষ্টসহিষ্ণু-তায় বিদ্যাসাগর এইরূপ উন্নতির চরমসীমায় পদার্পণ করিয়াছিলেন। সংস্কৃতকলেজে সংস্কৃতবিদ্যার অনুশীলনে তৎসমকালে তাহার কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। সাহিত্য, অলঙ্কার, পুরাণ, স্মৃতি সকল বিষয়েই তিনি অসামান্য অভিজ্ঞতা লাভ করিয়াছিলেন। শিক্ষাগুরু তাহার বুদ্ধিমত্তা ও পাঠানুরাগ দেখিয়া, আল্লাদপ্রকাশ করিতেন; সতীর্থ- গণ তাহার উদারভাব ও সারল্যময় সদাচারে সন্তুষ্ট থাকিতেন; বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ তাহার বিদ্যাপারদর্শিতার জন্য তাহাকে শত গুণে মহীয়ান্ করিয়া তুলিতেন। অধ্যয়নসময়ে তিনি স্বহস্তে পাক করিতেন, অনেক সময়ে স্বয়ং বাজার করিতে যাইতেন; কনিষ্ঠ সহোদরদিগকে আহার করাইয়া স্বয়ং বিদ্যালয়ে উপস্থিত হইতেন, এবং বিদ্যালয় হইতে বাসগৃহে প্রত্যাগত হইয়া, আহারের পর প্রায় সমস্ত রাত্রি প্রগাঢ় অভিনিবেশ সহকারে পাঠাভ্যাসে নিযুক্ত থাকি-তেন। এইরূপ আত্মসংযম, এইরূপ নিষ্ঠা, এইরূপ স্বাবলম্বন, এবং এইরূপ সহিষ্ণুতার সহিত তিনি অমৃতময়ী সারস্বতী শক্তির উদ্বোধন করিয়াছিলেন। এই শক্তির প্রসাদে তিনি সর্ব্বস্থলে সর্বক্ষণ অনম- নীয় ও অপরাজেয় থাকিতেন। বিদ্যালয় হইতে তিনি যে “বিদ্যা- সাগর” উপাধি প্রাপ্ত হয়েন, শেষে সেই উপাধিই তাহার একমাত্র পরিচয়স্থল হইয়া উঠে। বিদ্যার প্রাণরূপিণী বাণী যেন সেই দয়ার সাগর ঈশ্বরচন্দ্রেরই পরিচয় দিবার জন্য লোকের ‘রসনায় লীলা’ করিতে থাকেন।

 বিদ্যাসাগর মহাশয় যখন গবর্ণমেণ্টের চাকরী গ্রহণ করিয়া সংসারে প্রবেশ করেন, তখন তাহার প্রতিভার সহিত অসামান্য সৎকার্য্যশীলতা পরিস্ফুট হইতে থাকে। বাঙ্গালা সাহিত্যের উন্নতি সাধন তাহার একটি প্রধান কার্য্য। বিদ্যাসাগর সদি আর কিছু না