পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মিলন-রাত্রি তখন বেশ উজ্জ্বলভাবেই ফুটিয়া উঠিয়াছিল, কিন্তু সে আলোকও এ কাৰ্য্যের জন্ত অপ্রচুর বলিয়া তাহার মনে হইতে লাগিল । সম্রাট রাখিয়া দিয়া তিনি হাত বাড়াইয়া দেশলাইএর বাক্সট তুলিয়া লইলেন । উদ্বেগু—ক্ষতস্থান আগে একবার ভাল করিয়া দেখিয়া লইবেন । শেলাই লইয়া জালাইবামাত্র সে শব্দে রাজকুমারীর ঘুমের ঘোর ভাঙ্গিয় গেল, তিনি একটু চমকিয়া তাছার দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া মুদ্রস্বরে বলিলেন,--“মালা-ডাক—দা মালা ! আমি যে স্বপ্ন দেখছিলুম—” শরৎকুমায় বুঝিলেন, রাজকুমারী মালা চাহিতেছেন। পাছে ঝু কিয় কাজ করিতে করিতে মালা গাছি রাজকন্যার গাৰে আসিয়া লাগে, সেই জন্ত - শরং নিজের পিঠের দিকে তাহা ঝুলাইয়। রাথিয়াছিলেন। দেশলাই-কাঠিটা তৎক্ষণাং ফেলিক্সা দিয়া তিনি কণ্ঠ হইতে মালাগাছি খুলিয়া ধরিয়া উথলিত প্রেমাবেগে একবার বলিলেন, “মণিটি অামার, চিরবাঞ্ছিত ধন ।” তাহার পর মালাটি রাজকন্যাব কণ্ঠে পরাইয়া তাছার ওষ্ঠাধর আশঙ্কলে আদি করিয়া দিয়া আপনার স্মানত ওষ্ঠাধর তাহাতে মুদিত করিলেন। তৃষিত জীবনের এই তাঙ্গার প্রথম প্রেমচুম্বন, কে জানে ইহাই শেষ কি না । অতিরিক্ত মুখে রাজকুমারীর নয়ন নিৰ্মীলিত হইয়া গেল ; শরৎকুমার ভীত অনুতপ্ত হইয়া পড়িলেন। ভাবাবেশে আত্মবিস্কৃতির সময় ত ইহা নহে । কিন্তু রাজকন্ত অজ্ঞান হুইয়া পন্ডেন নাই, শরৎকুমার র্তাহার মাথায় হাত বুলাইবামাত্র তিনি চোখ খুলিয়া বলিলেন,-“ডাক্‌দা - উত্তর হইল—”এই যে মণিটি !” রাজকন্ত মুখখানি একটু উপরে তুলিয়া ডান হাতখানি একটু বাড়ইয়া দিলেন, শরৎকুমার তাহার হাতে হাত রাখিবামাত্র তিনি তাহা চাপিয়া ধরিয়া অমুনক্সের স্বরে বলিলেন—“অরি কোথাও যাবে না ত তুমি, বল ডাক্‌দ-” ডাক্তার কষ্টে অশ্রুসংবরণ করিয়া মৃত্ত্বকণ্ঠে বলিলেন,—“না মণিটি ; আর কোথাও যাব না আমি ; তোমার কাছ-ছাড়া আর কখনও হব না ।” রাজকুমারী একটি আরামের দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া আবার চক্ষু মুদ্রিত করিলেন। এই সময় বিজন আর্দ্রবস্ত্র লইয়া উপস্থিত হইল। শরৎকুমার রাজকস্তাকে বেশ ভাল করিয়া ঘুম পাড়াইবার ইচ্ছায় সেই কাপড়ের কিয়দংশ ছিডিয়া প্রথমতঃ তাহার সমস্ত মুখ জলে ডিজাইবার পর মাথার উপরে Se Y সেখানা জলপটি করিয়া রাগিলেন। তার পর নাড়ী পরীক্ষা করিতে করিতে বিজনকে বলিলেন, “দেশলাইএর কাঠি একটা স্বালিয়ে রাজকুমারীর মাথার পিছনে ধরুন দেখি—আলোটা যেন তার চোখে না পড়ে ।” fধজন র্তাহার উপদেশমত দেশলাই জালাইয়া ধরিল ; তিনি এমন ধীর—এমন যত্নে ক্ষতস্থান হইতে গুলী বাহির ক্ষরিয়া দিলেন যে, রাজকুমারীর ঘুমের ঘোর ভাঙ্গিল না । একবার মাঝে কেবল একটু তিনি চমকিয়া উঠিলেন মাত্র । গুলী বাহির করিতেই বিজন জয়োল্লাসে বলিয়া উঠিল, “রাজকন্যা বেঁচে গেলেন, এবার বেঁচে গেলেন ! ডাক্তার, তুমি ধন্ত !" কিন্তু শরৎকুমার নিশ্চিস্ত হইতে পারিলেন না । ভিতরের দিকে অন্ত গুলী আছে কি না, যতক্ষণ নী জানিতে পারেন – ততক্ষণ নিভন্ন হওয়া যার না । তিনি বিজনকে জিজ্ঞাসা করিলেন—“পিস্তলে কটা গুণী ছিল ?” সে বলিল, “তা ত বলতে পারিনে, অামি ত গুলী ভরি নি ; তারাই ভর পিস্তল আমাকে পিয়েছিল ।” “পিস্তলট একবার দিন দেখি ?” কিন্তু তাহাকে নিরাশ করিয়া বিজন উত্তর করিল— "আমার কাছে ত পিস্তল নেই, ফেলে দিয়েছি ।” শরৎকুমার ভাবিত হইয়া প৬িলেন। প্রাণনাশ করাই যখন উদ্দেশ্য, তখন একাধিক গুলী পিস্তলে পাকারই সম্ভাবনা । এখানে যতদূর চিকিৎসা হইতে পারে, তাহ তিনি করিয়াছেন । এখন ইহাকে গৃহে লইয়া গিয়া যন্ত্রাদির রীতিমত সাহায্য গ্রহণ করা কৰ্ত্তব্য, নহিলে বিপৎসস্তাবনা । ইহা ভাবিয়া রাজার জন্য অপেক্ষ না করিয়াই তিনি বিজনকে বলিলেন, “আপনি দৌড়ে প্রাসাদে গিয়ে একথান মোটার আনতে বলবেন কি ? আমি ত রাজকন্যাকে একলা এখানে ছেড়ে যেতে পারিনে ৷” বিজন বলিয়া উঠিল, ব্যাকুল ভাবেই বলিয়া উঠিল— "রাজকন্যাকে নিয়ে যাবেন এখান থেকে ? যাচ্ছি আমি-এখনই যাচ্ছি। কিন্তু একটি কথা বলবার আছে তার আগে । আর ত দেখা হবে না ।” ডাক্তার ভাবিলেন, বিজন ক্ষমা চাহিবে ; তিনি নীরসকণ্ঠে বলিলে ন—“আমি ত আগেই বলেছি যে—” বিজন তাহার মনের কথা বুঝিয়া ৰলিয়া উঠিল – “না ডাক্তার, আমি ক্ষমার ভিখারী নই, আমি যে পাপ করেছি - তাতে ক্ষমা নেই,— আমি পাষণ্ড নরাধম ; শাস্তি দাও আমাকে, যে