পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Se? শাস্তি তুমি দিতে চাও, দাও । কিন্তু তার আগে রাজকুমারীর হাতটি তোমার হাতে দিতে দাও— এই আমার আকুল প্রার্থনা । তুমি মহাজন-- পাষও পিশাচের প্রার্থনা ও অগ্রাহ করবে না তুমি, ভা অামি জানি ।” বলিতে বলিতে সে বসিয়া পড়িল এবং ডাক্তারের অনুজ্ঞার জন্য অপেক্ষ না করিয়াই তাছার দক্ষিণ হস্ত টানিয়া লইয়া রাজকন্যার বাম হাতের উপর ধরিল ৷ অতঃপর দাড়াইয়া উঠিয়া পরিপূর্ণ আনন্দে কহিল,-- "এখন আমি পবিত্র, আমি ধন্য ! তোমার প্রসাদে সৰ্ব্বপাপতাপ থেকে আমি এখন মুক্ত । কি শাস্তি দেবে, এখন দাও, আমি প্রস্থত ।” শরৎকুমার যদিও ইতঃপূৰ্ব্বে তাহাকে ক্ষমা করিয়াছিলেন ; কিন্থ সে যে নরাধম, ঘুপরি পত্রি, এ কথা তিনি ভুলিতে পারেন নাই, বিজনের পৃদযভেদী অনুতাপে তাহার মন হষ্টতে এ পাপ মলিনতাটুকু দূর হইয়া গেল--ঈদয় করুণা-বিগলিত হইয়া উঠিল, যে র্তাহার সৰ্ব্বনাশ করিয়াছে, তাহাকেও তিনি এষ্টবার সৰ্ব্বাস্ত:করণে ক্ষমা করিলেন । তাহার অশপুর্ণ নয়নের দিকে চাহিয়া বিজন মৰ্ম্মে মৰ্ম্মে সে ক্ষম অনুভব কবিল এবং অব কোন - একটি কগ। অতঃপর না কহিলা মোটার আনিতে বলিপলি জন্য ছুটিল । রাজকুমারী কিছু পরে ঘুম ঘুম ভাবেষ্ট চোখ খুলিয়া শরৎকুমারকে সহসা বলিলেন—“কাদছ তুমি ? কেন ডাকৃদ৷ ” শরৎকুমার তখন কঁাদেন নাই ; কিছু পূৰ্ব্বে তাহার চোখের জলে রাজকন্যার হাত ভিজিয়া গিয়াছিল ; বোধ হয়, সেই কথাই এখন বালিকার মনে পড়িয়া গেল । তাহার কথায় শরৎকুমারেব নয়ন আবার জলপুর্ণ হইয়া উঠিল, তিনি মুখ ফিরাষ্টয়া লইলেন । আনত নেধজলে ভূমিতল আৰ্দ্ৰ করিয়া পুনরায় তাহীর দিকে ফিরিয়া যথাসাধ্য সন্মতভাবে বলিলেন—“না মণিটি, কাদি নি ত ” বলিয়া তাহার মাথার শুকনে জলপটি খুলিয়া দিয়া কপালে হাত বুলাইতে লাগিলেন । জ্যোতিৰ্ম্মীর ঘুমের ঘোর সহসা কাটিয়া গেল, পূর্ণ দৃষ্টিতে তাঙ্গকে নিরীক্ষণ করিয়া দেখিয়া বেশ সজ্ঞানেই কহিলেন “ডাক্‌দা— না, তুমি কঁদিছ, আমি বেশ বুঝতে পাচ্ছি। কেঁদে না ভাইটি, আমার আশা-বাসনা-কল্পনা সবই যে অসম্পূর্ণ; তুমি সেগুলি সম্পূর্ণ কর—ডাক্‌দা—” ডাক্তার বলিলেন –*করব বই কি ; আমরা দুজনে মিলে তোমার অসমাপ্ত কাজ সম্পূর্ণ করব ।” এ কথা বুজি কঙ্কার কানে গেল ন. তিনি য। স্বর্ণকুমারী দেবীর গ্রন্থাবলী ভাবিতেছিলেন—তাহাই প্রকাশ্রে অfবার বলিলেন, *অমঙ্গল কাজে কি ক’রে মঙ্গল উদ্বেগু সাধিত হবে, হ’তে পারে না তা–কখনই হ’তে পারে না, ভারতের মুক্তি মঙ্গলময় অহিংস নীতিতে,—ঐ যে বাবা, ঐ ८रु भइोङ्काऊँौ !' রাজা ও গোবিন্দজী তাহীদের যে খুবই কাছে আসিয়া পড়িয়াছেন, শরৎকুমার তাহা ইতঃপূৰ্ব্বে জানিতে পারেন নাই, এমনই অনন্তমনে তিনি রাজকুমারীর কথা শুনিতেছিলেন ।—তাহাদিগকে দেখিয়া ডাক্তার উঠিয়া দাড়াইলেন-রাজকন্যা বলিলেন—“বাবা, গুরুদেব, আপনারা আমার মাথায় হাত দিয়ে আশীৰ্ব্বাদ করুন ; আমাকে পদধূলি দিন ।” গোবিন্দজী বলিলেন “স্বস্তি স্বস্তি ।” • কন্যাকে ভূশান্ধিত দেখিয়া রাজা মুহমান হইয়া পড়িলেন । প্রকৃত অবস্থ! যে কি, কিছু না বুঝিয়াও এইটুকু বুঝিলেন যে, রাজকন্যার কোন সাংঘাতিক দৈববিপদ ঘটিয়াছে । কস্তার নিকটে বসিয়া পড়িয়া মাথায় হাত রাখিয়া সকাতরে, সাদরে ডাকিলেন, “রাণি আমার ।” জ্যোতিৰ্ম্ময়ী মৃদুকণ্ঠে বলিলেন, “দুঃখ করে না বাবা । আজ আমরা বিপন্মুক্ত, আজ আমাদের মিলন-রীত্রি।” বেদনা-কম্পিত বক্ষে অশ্রু-উচ্ছ্বাস রুদ্ধ করিয়া ধরিয়া তিনি নীরব হুইয়া রহিলেন। জ্যোতিৰ্ম্মল্পী আবার বলিলেন, “সেতাবটি কোথায় তোমার ? বাজাও না বাবা ! সাম্য রাগিণীতে তোমার সেতারা কঙ্কত ক’রে তোল ; শুনতে শুনতে আমি বিশ্বের সঙ্গে এক হয়ে পড়ি, বাজাও না বাবা " বলিতে বলিতে রাজকন্যা তাহার হাতটি রাজার কণ্ঠে তুলিয়া দিবার অভিপ্রায়ে তাহ উঠাইতে গেলেন, কিন্তু পারিলেন না, ঈমং উত্তোলিত হস্ত নামিয়া পড়িল, শরৎকুমার তfহা ধরিয়া রাখিলেন । রাজা বসিবামাত্র তিনি ও পাশে বসিয়াছিলেন । মোটার লইয়া বিজন আসিয়া পৌছিল এবং গাডীখানা কিছু দূরে রাথিয়, অগ্রসর হইয়া আসিতেই রাজাকে দেখিয়া তাহার যেন দম বন্ধ হইয়া পড়িল, দাবাগ্নির জালা হৃদয়ে ধরিয়৷ মূঢ়ের ন্যায় সে দাড়াইয়া রহিল। বিজনকে এ সময় এখানে দেখিয়া । রাজা ও অবাকৃ হইয়া গেলেন ! এ দুর্ঘটনায় কি তবে স্বজন রায়েরও কোনও হাত অাছে নাকি । তিনি নীরব জিজ্ঞাসায় শরৎকুমারের দিকে চাছিলেন। শরৎকুমার কি উত্তর দিবেন, যেন ভাবিয়া পাইলেন ন। “বিজন-ভুল ক’রে -ছঠাং—” তিনি থামিয়!