পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سواه لم কঠিন হইরা পড়িয়াছে। তাছাদের চোখে যাহার রূপ লাগে, তাছার গুণের অভাব, যাহার রূপগুণ দুই-ই দেখিতে পান, ধনমর্য্যাদায় অথবা বংশমর্য্যাদায় হয় ত বা সে খাট ; আর যে ছেলেটি সৰ্ব্বাঙ্গমুন্দর অর্থাৎ সৰ্ব্বতোভাবে হালির যোগ্য বর বলিয়া বিবেচিত হয়, তাছাকে জামাতা কর। তাছাদের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব, কেন না, হয় ত বা সে ভিন্নবর্ণ অথবা ভিন্নগোত্র। এইরূপে ছটুছোট বাসাদ দিয়া তবুও দুইটি পাত্র তাছাদের হাতে আছে । দুই-জনের মধ্যে বিধাতা কার ভাগ্যে হাদিকে লিখিয়াছেন, তাহ তিনিই জানেন । এক জন ধনিপুত্র, কিন্তু পাশের যাচাইয়ে তাহীপ বাজার-দর কম । ইউনিভারসিটি পরীক্ষায় পাশ অপেক্ষ ফেল-নম্বরই তাছার অপিক । অথচ তাহার বুদ্ধিশুদ্ধিরও অভাব নাই, অভাব কেবল সেই উদ্যমটুকুর -সেই প্ররোচনার---যাহার বলে সাধারণত: আমাদের দেশের অনেক স্বল্পবুদ্ধি ছেলেও বুদ্ধিমান বনিয়া যায়। চাকরী-করার সেই তাগাদ টুকু বিজনকুমারের ছিল না বলিয়াই বুঝি তাহার বুদ্ধিতে উদ্যমের যোগাযোগ ঘটিতেছিল না । আর এক জন মধ্যবিত্ত গৃহস্থ-সন্তান ; ২৪ বৎসরের মধ্যেই ডাক্তারীর শেষ পরীক্ষা দিয়াছে—পাশ যে হইবে তাঙ্গ একরূপ স্থিরনিশ্চয়, তবুও তাহার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত—কেননা, নিজের ভাগ্য তাহীকে নিজেই গড়িম্বা লইতে হইবে ; ইহাতে বাধাবিঘ্ন বিস্তর। হাসির মাতার তাই ইচ্ছ। ধনিপুত্র বিজনকুমারকেই জামাত করেন । পুত্র শচীনের সে হৃদয়-বন্ধু ; সেই তাহাকে প্রথমে এখানে আনে । বিজনকুমার দেখিতে ভাল, কথাবাৰ্ত্তীতেও বিনয়ী, আর হাসির পিতার দিকের একটা কি দূর-সম্পর্কের দাবীতে কণকী-মী-সম্বোধনে যখন-তখন কাছে আসিয়া তাহার স্নেহ-প্রবণ হৃদরের অনেকখানি সে অধিকার করিয়া লইয়াছে। শরৎকুমারও তাহীদের অনুগত, ছেলেবেল হইভেই যাওয়া-আসা করে, কিন্তু পড়াশুনার চাপে অনেকদিন হইতেই সে বড় বিব্রত ; সুতরাং তাহার অবসর কম । তথাপি সে এখানে একেবারে যে আসে না এমন নহে, কিন্তু যাহার টানে আসে, তাহাকে সে প্রায়ই কৰ্ত্তার ঘরে দেখিতে পায়, সেই জন্তই বিশেষতঃ অন্তঃপুরে তাছাকে আর বড় একটা দেখিতে পাওয়া বান্ধ না । স্বর্ণকুমারী দেবীর গ্রন্থাবলী যেখানে অধিক ইচ্ছা সেইখানেই প্রায় সফলতায় বিলম্ব দেখা যায় । তাই রক্ষা—নছিলে উপন্যাস লেখকের বড় দায় হইয়া উঠিত। বিজনকুমারের সহিত হাসির বিবাহেও একটি বিষম বাধা ঘটিয়াছে। বরপক্ষ হইতে এ সম্বন্ধে কোনই প্রস্তাব,আসিতেছে না । তাহার বাপের ইচ্ছ বি-এটা পাশ করিলেই তাহাকে বিলাত পাঠাইবেন, আর যত দিন না পাশ করে, তত দিন তাহীর বিবাহ দিবেন না । কিন্তু বিজনকুমার কাকীমার কাছে ঘরের অনেক কথা বলিলেও এ কথাটা চাপিয়া গিয়াছে । হাসির মাত! ভাবেন, বিজনকুমারের ত এ দিকে টান দেখিতেছি, লজ্জায় সম্ভবতঃ সে এ বিষয়ে আপন হইতে বাপকে কিছু বলিতে পারে না। কিন্তু ছেলে যখন ভাল, সৰ্ব্বতোভাবে মনোমত, তখন গৰ্ব্ব করিয়া তাহাদের ওস্তাবের জন্য বসিয়া থাকাট। নিৰুদ্ধিতার কার্য্য। বড়মানুষের ছেলে, কাল শুনিব তাহার বিবাহ হইয়া গিয়াছে । তিনি সেইজন্য কৰ্ত্তাকে ক্রমাগত তাড়া দেন যে, "চেনাগুনা ঘর, বরের বাপের সঙ্গে তোমার একটু সম্পর্কও আছে ; তুমিই অপেন হইতে কথাটা હ8ા૭ ” কৰ্ত্তা ফিলজফরি লোক, অতএব অলস-প্রকৃতি, কোনও কাজে তাহীকে ভিড়ান বড় সহজ নহে । যতক্ষণ তিনি অন্য কাজ করিবেন, ততক্ষণ র্তাহার দর্শনতত্ত্ব লেখায় ব্যাঘাত ঘটবে। তাহার মতে মামুষের যাহা দরকার, তাহ সহজেই মেলে, তাহার জন্য অতিরিক্ত প্রয়াস অনাবশ্যক। যদি সহজে বিজনকুমারকে পাওয়া যায় ত ভাল, আর না পাওয়া যায় তাহাও মন্দ নহে, শরৎকুমার ত আম্বত্ত্বের মধ্যেই রহিয়াছে। এ রকম মনের গঠন বেশ মুখের সন্দেহ নাই, তবে অনেক সময় দুঃখেরও কারণ হইয় উঠে। এজন্ত সময় সময় গৃহিণীর নিকট র্তাহার বিস্তর লাঞ্ছনা তোগ করিতে হয় । কিন্তু এই উপভোগের প্রতি দারুণ বিতৃষ্ণ বশতঃ গৃহিণীর সকল অনুরোধ, সকল ভারই তিনি যেরূপ বিনা বাক্যব্যয়ে শিরোধাৰ্য্য করেন, সেইরূপই দ্বিধাহীন চিত্তে অন্তের স্কন্ধে তুলিয়া দিয়া নিস্কৃতি লাভ করেন । এ ক্ষেত্রেও তাহাই হইল । গৃহিণীর অনুরোধ পালনের ভারটি চুপে চুপে আত্মীয়-প্রবর হেমচন্দ্রের মাথায় চাপাইয়া আপনি নিশ্চিন্তমনে জীবাত্মা ও পরমাত্মার ভেদাভেদ-রহস্তনির্ণয়ে নিযুক্ত হইলেন। গৃহিণী কিন্তু এ কথা জানেন না, জানিলে সম্ভবতঃ অন্য চেষ্টা দেখিতেন ।