পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SS o ছেলে আর কোথায় পাবে বল ! এমন অল্পবয়সেই ডাক্তারীর শেষ-পরীক্ষা দিয়েছে—আর পাশও---” গৃহিণীর আর ধৈর্য্য রচিল না—“বুঝেছি, বুঝেছি —এইজন্তেই তুমি বিজনের বীপের সঙ্গে দেখা করতে চাও না,—এই অভিপ্রায়েষ্ট তুমি এত দিন আমাকে ঠকিয়ে আসছ । তোমার ভাল ছেলে তোমার থাকৃ—অামি কিন্তু অমন গরীব ছেলেকে মেয়ে দেব না—আমার প্রাণ থাকতে ত নয়ই,- এ ঠিক জেনে৷ ” গৃহিণী রাগিয়া চলিয়া গেলেন। কৰ্ত্ত যে ইতিপূৰ্ব্বেই শরৎকে কস্তাদান করিলেন বলিয়া একরূপ কথা দিয়াছেন, সে কথাটা তাহীকে বলিতে কিন্তু আর তাহার সাহসে কুলাইল ন! ! দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ হাসির পিতামত নিজেদের ইচ্ছায় ভারেই ভারাক্রান্ত করিয়া কন্যার ভাগ্য তৌল করিতে ব্যস্ত। এ তোলদণ্ডে হাসির ইচ্ছারও যে অন্ততঃ একটুখানি স্থান হওয়া উচিত, এ কথাটা তীtহাদের মনেই পড়ে না। উপস্তাদলেশক ছাড়া সাধারণ সকল বাঙ্গালীরই পক্ষে বোধ হয় ইহা বিস্তুতির বিষয় । আমি কিন্তু অনেকবার হাসির মনের কথাটি ধরিবার চেষ্টা করিয়াছি কিন্তু পারি নাই। বাস্ রে, মেয়ে কি চাপা ! যতই কেন এ কথা পাড় না, তাহার হাসি দিয়াই সেটাকে সে চাপিয়া ধলে । আজকালকার মেয়েদের সরলতার অর্থে যদি কেহ ভাবেন যে, সে মনের কথাটি সকলের কাছে খুলিয়া ধরিবে, তবে তিনি নিশ্চয়ই ভুল করিবেন। হয় ত বা আমিও তাহাকে ভুল বুঝিয়াছি – হয় ত বা তাঙ্গব ভিতরে প্রেমের আঁচড় এখনো পড়ে নাই, নয় ত বা নিজের মনের গোপন ভাব নিজেই সে বোমে না—বুঝিবার অবসর ঘটে নাই । তাহ নহিলে কি এমন সরল ছেলেমানষি হাসিটুকু সৰ্ব্বদাই তাহীর মুখে ফুটিয়া থাকিত ! কে জানে ? সে যে কাঁদিতে জানে, সেই দিন কিন্তু জানিতে পারিয়াছি । তখন সে পিতার ঘরে ষাইতেছিল, মাভার ক্রুদ্ধ কণ্ঠ শুনিয়া দ্বারদেশে বদ্ধপদ হষ্টয়া দাড়াইল । শুনিল - “অমন গরীব ছেলেকে কথখনে মেয়ে দেবে না ।" শরৎকুমার মাতার এতদূর অবজ্ঞাভাজন ! ছি fছ ! সজোরে তাহার মাথায় যেন লৌহদণ্ডের অ্যাঙ্ক বাঢ়িল । ৱেদনা কৃষ্ঠার স্বর্ণকুমারী দেবীর গ্রন্থাবলী সৰ্ব্বাঙ্গ থরথর করিয়া কঁাপিতে লাগিল, কেহ দেখিবার পুৰ্ব্বেই সে নিজের ঘরে আসিয়া বিছানায় লুটক্টিয়া পড়িল । * 》 暑 홍 সেদিন তfহার সঙ্গে যাইবার দিন নহে । সেতারেব পুরাতন গৎগুলা সে অভ্যাস করিতে বসিল । মা একবার এ ঘরে আসিয়া তাহাকে বাজাইতে দেখিয়! আর ডাকিলেন না, নিজেই রান্নাঘরে চলিয়া গেলেন । দাসী আসিয়া বিজুলিবাতির কলটা টিপিয়া দিয়া সন্ধ্যা-বাতি জালিয়া গেল। হাসি অন্যমনে সেতারে ঝঙ্কার তুলিতে লাগিল,—কিন্তু বাজনাটাকে সে আজ কিছুতেই স্বরে ঠিক করিতে পারিল না। গৎগুলা স্বরে-তালে কেবলি বেমুরা-বেতালা বাজিতে লাগিল । সেতায়টার কাওকারখানা দেখিয়া অবাক হইয়া হাসি § একটুখানি বিরক্তির হাসি হাসিল, তাহার পর উঠিয়া পাশের গাড়ী বfরান্দায় গিয়া দাড়াইল । তাহtদেয় অস্তিাবলের দিক হইতে একটা আনন্দসঙ্গীতের হিল্লোল কানের মধ্য দিয়া তাহার প্রাণে গিয়া পৌছিল। পূর্ণিমার ভর চাদখান আকাশের একপ্রান্তে উঠিয়া সমস্ত আকাশ ও পুথিবী আলোকে ভরিয়া দিয়াছিল । বাগানের বকুলগাছ ঝাউগাছ ও আমগাছের ছিদ্রের মধ্যে অtর আলোক-অন্ধকারে ভেদ ছিল না। একটা কোকিল আমগাছের ডালে বসিয়া উষার আগমন-গীতিতে সন্ধ্যাকে আহবান করিতেছিল। অার হাসমুহানার স্বগন্ধ জোয়ানীর হৃদয়ুমথিত আনন্দসঙ্গীতের সহিত মিলিয়া পূর্ণিমার আলোকময়ী রজনীকে সার্থক করিয়া তুলিয়াছিল । জোয়ানী, হাসিদের সহিসের বোন ; বয়স ২০ বৎসর ; দুই চারি দিনের মধ্যেই তাহার বিবাহ হইবে । এত দিন সে ভাইয়ের নিকটেই আছে,— এইদার নিজের ঘর করিতে যাইবে। সে চুলার উপরে হাড়ি চাপাইয়া নীচে কাঠ দিতে-দিতে গান ধরিয়াছিল “সইয়া পরদেশে, পরসিনে, —ধৈরষ. কৈসে ধরু মৈ।” বিরহের গানটী মিলনসঙ্গীতের দ্যায়ই তাহার কণ্ঠ হইতে অনিন্দ ধ্বনিত করিতেছিল । বারানায় দাড়াইয়া—হাসি আর সকল কথা ভুলিয়া লুব্ধ কর্ণ পাতিয়া গানটি শুনিতে লাগিল ; সেই সঙ্গীতের আনন্দস্পর্শ বসন্ত-সমীরের ন্যায় তাহাকে পুলকিত করিয়া তুলিল । সহুল পঙ্গং ছুটতৃে কে কিল—“কালি "