পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিচিত্র। হাসি চমকিয়া ফিরিয়! চাহিয়া বলিল--"শর-দ। —তুমি ?”

  • একটা সু-খবর দিতে এসেছি ।” “সু-খবর ! বল বল ?” “কি দেবে আগে বল ?” “কি চাও তুমি ?” “ন কিছু না -আমি পাশ হয়েছি।” হাসি আনন্দুে করতালি দিয়া বলিয়া উঠিল— “পাশ হয়েছ ! কি মজা ! বাবাকে বলেছ ?”

“ন, আজ এখনও বলি নি—তবে তিনি জানেন । গেজেট বার হবার আগেই কাল এ খবর পেয়েই তাকে জানিয়েছি।” “আমাকে বলে না কেন—কাল ?" শরৎ স্ত্রীলোকের মতই অপ্রতিভভাবে একটু মৃদুমধুর হাসিয়া উত্তর করিল,—“কাল ত তোমাকে সে ঘরে দেখলুম না--অর্ণর তোমার বাবার সঙ্গে অন্ত কথাও একটু ছিল।”

  • আচ্ছ। বেশ বেশ ! কিন্তু মাকে বলেছ ?” “না, এখনও বলা হয় নি।” “তবে আমি যাই-এখনি আসি ।”

“না, একটু দাড়াও—আর একটা কথা আছে ।” “কি * “আমি বিলাত যাচ্ছি।” “কবে ?”, *হগুfখানেকের মধ্যেই।” "এত শীঘ্ৰ ?” “দেরী ক'রে লাভ কি ? যত শীঘ্ৰ গরীব নামটা ঘোচে, সেই ত মঙ্গল ।” 姆 বিকালের ঘটনাটা সে এতক্ষণ একেবারেই ভুলিয়া গিয়াছিল, শরতের কথায় তাহ মনে পড়িয়া গেল । শরৎ কি তবে কোন রকমে মায়ের ভাবটা টের পাইয়াছে নাকি ! লজ্জায় তাহার হাসি মুখখানি মলিন-বিবর্ণ হইয়া পড়িল । আপনা হইতে চোখ দুটি অনিত হইয়া গেল । কিছুক্ষণ পরে মুখ তুলিয়া দেখিল—দেয়ালের কোণে যে একটি ঘাসের ফুল অন্ত-চক্ষুর অন্তরালে লুকাইয়া ফুটিয়াছিল, শরৎ সেটিকে আবিষ্কারপুৰ্ব্বক তুলিয়া লইয়া টবের ফার্ণের পাতার সহিত বাধিতেছে, বন্ধন-রস্তু তাহার গলার ছিন্ন উপবীত-স্বত্র। তোড়া বঁtধ হইলে শরৎ হাসির দিকে সাগ্রহে চাছিল। ইচ্ছ, তোড়াটি তাহাকে উপহার দেয় ; কিন্তু বাঙ্গালীর ছেলে, বলি বলি করিয়া আর মুখ খবরটা দিয়ে SSS ফোটে না ; ইতিমধ্যে হাসি ফুলটি অধিকার করিমু লইয়া বলিল,--“এস শর-দী—তোমাকে পরিয়ে দি ” শরতের মনের কথা মনেই রহিয়া গেল ! হাসি নিজের কাপড়ের একটা পিন খুলিয়া লইয়। তাহার কোটে ফুলটি আটকাইতে আটকাইতে বলিল,--- *কবে ফিরবে শর-দ1 ?” “জানি না । সম্ভবতঃ বছর তিনেক পরে !" “চিঠি লিখবে ?”

  • যদি বল ।”

“নিশ্চয়, নিশ্চয় ।” “তবে লিখব ।” “লিখবে ?”

  • লিখব।”

“তিন সত্যি ?”

  • হ্যা গো হ্যা ।”

ফুল পরাইয়া হাসি হাত সরাইয়া লইয়া বলিল, *শর-দt গান শুনছ ? কেমন লাগছে ।” জোয়ানীর আকাশস্পশা বিরহসঙ্গীত মৃদ্ধ কোমলতর স্বরে তখন নামিয়া পড়িয়াছিল ; শরৎ সে কথার উত্তর না দিয়া দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিক্ষ্ম বলিল,—“এখনি দেতে হবে হাসি ,” “এখনি কেন যাবে ? আর ত গাশের পড়া পড়তে হবে না তোমাব । দেখেছ শর-দ, কেমন চাদ উঠেছে ?” "একটি কথা বলব ?” “বল না শর-দ। —* “তুমি চাদের চেয়েও সুন্দর।” “কি যে বল তুমি ” “বলবার অধিকার পেয়েছি হাসি । বাবা বলেছেন, তার আপত্তি নেই।” “কিসে ?” “বুঝতে পারছ না হাসি ?” হাসির এবার লজ্জায় মুখ লাল হইয়া উঠিল, কিন্তু মায়ের কথা স্মরণ করিয়া দীর্ঘনিশ্বাস পড়িল । শরৎ বলিল,—“কিন্তু তুমি বল ছাসি ?” “কি বলব ?” “তোমার ইচ্ছে আছে কি ন৷ ”

  • কেন বাবা ত বলেছেন ।”

“বাবা ত তোমার মনের কথা বলেন নি ; তুমি বল হাসি ! * হাসি চুপ করিয়া রহিল। শরৎ আগ্রহভরে তাহার হাতছুখানি নিজের হাতের মধ্যে ধরিয়া তাহাতে তাহার সমস্ত প্রাণ, মন ঢালিল্পী বলিল,—“বল তোমার