পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিচিত্র। ভয়ে প্রতিদিনই শালগ্রাম শিলার কাছে মাথা মুইয়েছি। তুই ভাব বি. এ কি চাতুরী ? চাতুরী নয়, এটা পিতৃভক্তি। এ সংসারে জ্ঞানবান স্রষ্টা পুরুষ কেউ আছেন কি না জানিনে ; কিন্তু আমার পিতৃদেব বে আমার স্রষ্ট। পুরুষ তা আমি জানি, তিনিই আমার মনে সাক্ষাৎ দেবতা । সে ভক্তিটুকু আজকালকার ছেলেরা হারিয়েছে ।” “না মাম, তা নয়। আজ আমি খুব ভাল ক’রে বুঝছি, আমার জন্ত আপনি কত কষ্ট স্বীকায় ক’রছেন । কিন্তু ভবুও ত আপনি কৰ্ত্তব্য-পালনে কুষ্ঠিত নন,—মামারও কি এ সম্বন্ধে একটা কৰ্ত্তব্য নেই ?” “দেখ, ঐ লম্বা-চওড়া কথাগুলো শুনলে আমার গায়ে বিছুটির জাল ধরে । ও সব বক্তৃতা রাখ। এখনি টাকা দিচ্ছি - নিয়ে যl,—ক্যাবিন ঠিক ক’রে আয়, - এ ষ্টীমারে আর যাওয়া হবে না, ওবে পরের ঠামারে যেতে পারবি। তোর ভাল আমি যা বুঝি তাই কর।” “কিন্তু অামায়ও ত জন্মেছে।” শ্ৰামাচরণের সর্বাঙ্গে এইবার সত্যই বিযের জালা ধরিল । ছেলে-মেয়ের নিকট হইতে প্রতিবাদ র্তাহার অসহ্ ! ইহাই তাহার স্বভাবের একটা বিশেব দুৰ্ব্বলতা ; ইহাতে তিনি শ্রদ্ধাভক্তিরই একান্ত অভাব দেখেন। রাম পিতৃসত্য-পালনেৰ জষ্ঠ বনবাস গিয়াছিলেন—আর এখনকার ছেলেদের গুরুজনের প্রতি একটা অবিসম্বাদী শ্রদ্ধাবিশ্বাসও নাই ! হায় রে ! ইহার পর তিনি আর আত্মসংবরণ করির কথা কহিতে পারিলেন না ; ক্রোধ-বিকৃত স্বরে বলিলেন, —“লক্ষ্মীছাড়া, তোমার অস্থি-মজ্জার দেখছি ইংরাজী স্বাধীনতা ঢুকেছে। ( যেন তিনি এ দোব হইতে নিজে সম্পূর্ণ মুক্ত! ) তোমাকে বিলাত পাঠিয়ে সত্যই ফল নেই ; আরও জানোয়ার বনে আসবে। যা ইচ্ছ। তবে তাই তুমি কর।” শরৎ ধীরে ধীরে পকেট হইতে নোটের তাড়া বাহির করিয়া টেবিলে রাখিল । তিনি এত দূর প্রত্যাশা করেন নাই ; ভাগিনেয়ের স্পৰ্দ্ধায় তিনি অবাকু হইয়া চক্ষু মুদ্রিত করিলেন । এ সাহসে তিনি রাগ করিবেন—না প্রশংসা করিবেন ? কিন্তু ইছা স্থির করিতে পারিবার পূর্বেই তাছার চক্ষু খুলিতে হইল। এক জন ভৃত্য একথান। তার-পত্ৰ লইয়া উপস্থিত হইল। গুণমাচরণ সেখান হাতে করির শরৎকে বলিলেন, “বfসদ লিখিয়া দাও।” এখন বোঝবার ক্ষমতা S}^ টেলিগ্রাম পড়িম্বাই শুীমাচরণ চমকিয়া উঠিলেন— বলিলেন, “রাজা বাছাছুর ঘোড়া থেকে পড়ে গেছেন, ডাক্তার নিয়ে আজকার গাড়ীতেই প্রসাদপুর যেভে হবে । তুই যা এক জন ভাল ডাক্তার ঠিক ক'রে অণয় । আমি ততক্ষণ অন্যান্য আয়োজন ক’রে ফেলি। আগামী ষ্টীমারে তোর যখন বিলাত যাওয়া হ’লোই না, তখন তুইও সঙ্গে চল । সার্জারিট ত তুই ভাল বুঝিস্। তুই সঙ্গে থাকলে অামার ভাবনাটা অনেক কম হবে।” শরৎ ইহাতে কোন আপত্তি প্রকাশ না করিয়া ডাক্তার ঠিক করিতে গেল । পঞ্চম পরিচ্ছেদ রাণী জ্যোতিৰ্ম্ময়ী রাজা অতুলেশ্বরের তৃতীয় কন্যা জন্মগ্রহণ করিল ঠিক জন্মাষ্টমীর দিনে । দুই কন্যার পর এবার রাজাবাহাদুর যে পুত্রমুখ দর্শন করিবেন—এ বিষয়ে রাজবাড়ীর আবালবৃদ্ধ সকলেই একরকম নিঃসন্দেহ ছিলেন ;--নহিলে তাহার আভিজাত্য তরণীর হাল ধরিবে কে ? রাজার বংশরক্ষা, কুলরক্ষণ রাজ্যরক্ষণ হইবে কিরূপে ? রাত্রিকাল হইতে এই বহু প্রত্যাশিত নবীন কাণ্ডারীর আগমন অভ্যর্থনা উপলক্ষে সকলেই ব্যতিব্যস্ত ; বহিবাটীতে ডাক্তার, গণৎকার, গুরুপুরোহিতদিগের সমাগম হইয়াছে ; অস্তঃপুরে স্থতিকাগৃহের পাশ্ববৰ্ত্তী বারান্দ আত্মীয়া, দাসী, পরিচারিকায় পুর্ণ ; তাহার শঙ্খ, ধান্তদূৰ্ব্বা, নববস্ত্র, রত্নভূষণ প্রভৃতি বিবিধ আয়োজন দ্রব্যাদি সাজাইরা অতিথিৰরণ জন্ত উৎসুক হইয়া অপেক্ষা করিতেছে এবং নিশ্বাস ফেলিবার অনবসর সত্ত্বেও গল্পগুজবে মুখ-নিশা আতিবাহিত করিতেছে । নীচের উঠানে সমবেভ বাদ্যকারগণ মঙ্গল শঙ্খধ্বনিতে অতিথির শুভাগমন-বাৰ্ত্তা লাভের জন্ত কান পাতিয়া আছে । চারিদিকের উৎফুল্ল জনতা-বেষ্টিত স্থতিকাগৃহ জনবিরল, কেবল ছুই জন মাত্র ধাত্রী সেখানে প্রস্থতির শুশ্রুষায় নিযুক্ত ছিল, আর মহারাণী—অতুলেশ্বরের মাতা বধূর শীর্ষদেশে বসিয়া তাহাৰে বীজন করিতে করিতে নাম জপ করিতেছিলেন । রাজা চিন্তিত মনে, শুকমুখে সংবাদ লইবার জন্ম বারবার অন্তঃপুরে বাতায়াত করিতেছিলেন । তিনিই