পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২২ তাহাতে কিছুই ছিল না। বেশী সাজসজ্জা বা শছন। পর রাজা ভালবাসেন না, মেয়েরও সেইরূপ রুচি হইয়াছে। প্রতিদিন বিকালে যে সাজে সে পিতার সহিত গাড়াতে বেড়াইতে যায়— আজ ও তাহার সেই একইরূপ সাজ । সে পরিয়াছে ফিক গোলাপী রঙের একখানি সাড়ী, শাদা রেশমের একটি জ্যাকেট ও শাদা রঙের জুতা মোজা । অলঙ্কারের মধ্যে উন্মুক্ত কেশ-বন্ধনী স্বরূপ শিরোভাগে মুক্তার কাজ করা একটি গোলাপী ফিতা, দু' একটি বেচি ; হাতে দুগাছি মুক্তার চুড়ি, আর কণ্ঠে একগাছি মতির মালা । জোতিৰ্ম্ময়ীর শিক্ষয়িত্রা গভর্ণেল কুন্দবালা তাহাকে সাজাইয়া দিয়া ছিল। এই স্বল্পতর সাজে তাহার রূপখানি এত খুলিয়াছিল যে, মনে হইতেছিল, বালিক যেন কতই সাজ-সজ্জা করিয়াছে। রাজা কস্তার প্রতি আনন্দপুর্ণ দৃষ্টিপাত করিয়া বলিলেন, “সময় হয়েছে বুঝি, চল রাণী ।” রাজা কন্যাকে রাণী বলিয়াই ৬াকিতেন । র্তাহারা চলিয়া গেলেন,—মহারাণীর নয়নে কন্যার রূপ অনেকক্ষণ ধস্নিগ্ন প্রতিবিম্বিত হইয়া রছিল । তিনি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া স্বগত: বলিলেন, “হায় রে ।” এত রূপ—মেয়ের, এ না জানি কার হাতে পড়বে, সে আদর করবে কি অনাদর করবে- তারই বা ঠিক কি ? সাধে কি মেয়ে-ছেলে ত’লে দুঃখ করি ! মেয়ে জন্মের ৩ কত সুথ ! এই জষ্ঠেই অতুল মেয়ের শীগগির বিয়ে দিতে চায় না, তাও বুঝি,-কিন্তু তবুও ত দিতে হবে রে বোকা ।” মহারাণী রাজার অজ্ঞাতসারে জ্যোতিৰ্ম্ময়ীর পাত্রের সন্ধান করিতে লাগিলেন। কিন্তু ইতিমধ্যে রাজ। আর একটি অভূতপূৰ্ব্ব কাজ করিয়া বসিলেন। ১২ বৎসরের মেয়েকে আজ ও বাহিরে রাখিয়া রাজ। ক্ষণস্ত নহেন, তার সংস্কৃত শিক্ষার জন্য এক পণ্ডিত নিযুক্ত হইল। মহারাণী অনেক সহিয়াছেন, কিন্তু এত বড় একটা অনাচার তিনি চুপ করিয়া সহিতে পারিলেন না । পুত্রকে ডাকিয়া--শিরে করাঘাতপূর্বক কহিলেন, - “তুই কি জাত-ধৰ্ম্ম সব খোয়াবি ৱে ? নিদেন আমার মরণ পর্য্যস্ত অপেক্ষ কর ।” রাজা তাহার ক্রোধোক্তিতে না দমিয়া হাস্তমুখেই বলিলেন,—“জান মা, তোমার ঐ আঘাত অামার মাথাতেই পড়ছে ? অামাকে অভিশাপ লাগছে ? তুমি দেখে নিও-কে আগে মরে।” রাজার এই কথায় মহারাণী জাতি-ধৰ্ম্মের ব্যবস্থার কথা ভুলিয়া গেলেন। এই রকম কৌশলে বরাবরই পুত্র মাকে হার স্বর্ণকুমারী দেবীর গ্রন্থাবলী মানাইয়া আদিতেছেন। মহারাণী আকুল কণ্ঠে কহিলেন, “ষাটের বাছ ষষ্ঠীর দাস, অভাগিনীর অর্ণচলের ধন তুই—অমন কথা মুখে আনিস নে বাছ,—তোর মেয়েকে নিয়ে তুই যা খুী করগে ।” “কিন্তু তুমি অমুখী হ’লে ত তা পারব না মা। তোমার দুষ্ট ছেলের সব কাজই খুশী হ’য়ে তোমাকে মেনে নিতে হবে । জ্যোতিৰ্ম্মী ছেলে নয় ব’লে তোমার এত আক্ষেপ – তাতেই না আমি তাকে ছেলে গড়বার চেষ্টাতে আছি ।” ” মায়ের রাগ ছেলের কথায় পড়িয়া আসিয়াছিল, তিনি হাসিয়া বলিলেন—“ওরে নিৰ্ব্বদ্ধি, তুষ্ট ইচ্ছা করলেই কি তা হবে ? শেযে তোর মেয়েটি চিত্রাঙ্গদা হ’য়ে দাড়াবে—দেখে নিস।” “অৰ্জুনের মত নাতজামাই যদি পাও—তাতে ত তোমার আপত্তিও হবে না ম৷ ” “সেই বরই প্রার্থনা করি । তোর মেয়ে ভাগ্যবতী,–হ’তেও পারে।” এইরূপে ক্ৰন্দনপৰ্ব্ব হাস্তে পরিণত হইলে মহারাণী বলিলেন,—“তবু ত বাছা তোয় একটি বংশধর চাই । অৰ্জ্জুন নাতজামাই তোর মেয়ের প্রাণ ঠাণ্ড করবে - কিন্তু তোর ছেলে নইলে আমার প্রাণ ঠাণ্ডা করে কে বল দেখি ? বিয়ে কর বাছা,---কত দিন অর বাচব---আমার এই সাধটি পুর্ণ কর, লক্ষ্মী ছেলেটি আমার।” “সব সাধ কি সংসারে পুর্ণ হয় মা ! ছেলে হবার হ’লে আগেই হ’তে । এখন মেয়ে নিয়েই তোমার সাপ-বাসন পুণ ক’রতে হবে ।” “তাই বা দিচ্ছিদ কই ? মেয়ের ত বিয়ে দিতে চাচ্ছিস নে ৷” “দুইটা মেয়েয় ত ছোটবেলাতেই বিয়ে দিয়েছিলে, --কত সাধ তোমার পুর্ণ হ’লে বল দেখি ? তোমাদের মনের গতি আমি বুঝে উঠতে পারি নি ? পদে পদে ঠেকৃবে—কিছুতেই তবু শিখতে চাইবে না !” রাজা রাগ করিয়া এই কথা বলিয়া চলিয়া গেলেন। সপ্তম পরিচ্ছেদ বনে মাতরম্ "আর ব’গো না পণ্ডিত মশায়, আমার সৰ্ব্বশরীরে রক্ত চন্‌চন্‌ ক’রে উঠছে, আমি আর শুনতে পারিনে।" বলিল রাজকুমারী জ্যোতিৰ্ম্মী তাহার পণ্ডিত দেবব্রত ভট্টাচাৰ্য্যকে ।