পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিচিত্র পৌঁছিয়া দিয়া পুরোহিত ষ্টীমারে ফিরিয়া আসিয়াছেন ।” “এ সংবাদ আমাকে দিতেছ কেন ? মহারাণীকে গিয়া বল ।” “পুরোহিত জখম হইয়া আসিয়াছেন ।” “জখম । কেন ? কে করিল ?” “ভুলক্রমে তিনি মেমসাহেবদের ক্যাবিনে ঢুকিয়া পড়িয়াছিলেন—তাই—“ "তাই—কি ? মেমসাহেবরা মারিয়াছে নকি ?” রাজা অধীয় হইয়া ব্যঙ্গের ভাবে এই প্রশ্ন করি লেন। উত্তরে জ্ঞানবাবু বলিলেন, “সত্যই মেমসাহেবরা তাহাকে মারিয়াছেন—কুকুরের শিকল দিয়া মারিয়া ঠাকুরকে রক্তারক্তি করিয়া তুলিয়াছেন —র্তাহার অবস্থা বড় খারাপ * ক্রোধে রাজার শোণিত সৰ্ব্বাঙ্গে যেন টগবগ করিয়া ফুটিয়া উঠিল, তিনি আরক্তনয়নে বলিলেন— “কোথায় তিনি ?”

  • আমরা তাহীকে রাজবাড়ীর উঠানে আনিয়া ফেলিয়াছি ।”

রাজা দ্রুতপদে অবতীর্ণ হইলেন। উঠানে আসিয়া দেখিলেন,— বৃদ্ধ পুরোহিতের আংত মস্তক কোলে রাখিয়া জ্যোতিৰ্ম্ময়ী তাঁহাকে বীজন করিতেছে —সম্মুখে বসিয়া চিকিৎসক আহত স্থানে পটী বধিতেছেন—আর রাজবাড়ীর লোকেরা উহাদের ঘিরিয়া দাড়াইয়া আছে এবং জ্যোতিৰ্ম্ময়ীর আদেশে ফরমাস থাটিতেছে। রাজা আসিয়া সম্মুখে দাড়াইতেই জ্যোতিৰ্ম্মী নতমুখ উন্নত করিয়া তাহার দিকে চাহিল--তাহার যত্নরুদ্ধ অশ্রুজল আর বাধ মানিল না, আরক্ত-নয়ন হইতে ক্রুদ্ধ করুণার ধার। উথলিয়৷ উঠিয়া গণ্ড বাহিয়া পুরোহিতের মস্তক সিক্ত করিতে লাগিল। সেই তেজস্বিনী নারীমূৰ্ত্তির দিকে চাহিয়া রাজার পুনরায় মনে হইল, বিচিত্রা দেবীর আত্মাই নবশরীর ধারণ করিয়া বুঝি জ্যোতিৰ্ম্ময়ীতে পুনরাবিভূত হইয়াছে। এই সময় ভীড় ঠেলিয়া পণ্ডিতমহাশয় জ্যোতিস্ময়ীর নিকটে আসিয়া দাড়াইয়া অফুট মৃদ্ধ কণ্ঠে বলিয়া উঠিলেন— “বন্দে মাভল্লম্ ?” ৬ষ্ঠ-- ১৭ Sశిసి নবম পরিচ্ছেদ ম্যাজিষ্ট্রেট-দম্পতি সন্ধ্যাকাল, আকাশ-প্রান্তে ভাসমান চতুর্থীর চন্দ্র কলা তটিনীর স্বচ্ছ সলিলদর্পণে প্রতিবিম্বিত হইয়া মৃদ্ধ তরঙ্গে তরঙ্গে সীতার দিয়া চলিয়াছে। মন্দিরে কঁপির-ঘণ্টা বাজিয়া থামিয়া গিয়াছে, তাহার নিবৃত্তি অবসরে রমুনচোঁকি-ধ্বনিত সান্ধ্য রাগিণী আকাশে বাতাসে মান-মধুর তান তুলিতেছিল ; রাজা এ সময়ে প্রায়ই মুক্তছাদে আসিয়া বসেন, আজ ঘরের মধ্যে, টেবিলের নিকটে, দীপালোকের সম্মুখে আসন গ্রহণ করিয়া নিবিষ্টচিত্তে কি লিপিতেছিলেন ;--এই সময় জ্যোতিৰ্ম্ময়ী আসিরা তাহার স্কন্ধে হাত দিয়া দাড়াইল । সদ্যোলিখিত ছত্রগুলির দিকে ঈষৎ বুকিয়া বলিল—“বাবা, কবিতা লিখছ?” রাজা হাতের কলমটা রৌপ্য-কলমদানীতে রাখিয়া বলিলেন —“বস রাণি,—তোর patient কেমন আছেন ?” জ্যোতিৰ্ম্মী একখানা ছোট চেীকী রাজার চৌকীর নিকট টনিয়া পিতার পাশ ঘে সিয়া বসিয়া কহিল, “তিনি ভালই আছেন । দু-এক দিনের মধ্যেই বেশ অfরাম হয়ে উঠবেন,--কিন্তু—-” “ঐ কিন্তুটাকে যে ভুলতে চাই রাণি ।”

  • দু-একটা কথা আমার কিন্তু বলার ছিল বাবা । থাক, তবে পরেই বলব । কি লিখছ বাবা,— পড় না ?”

“শুনবি ?--বেশ, শেন-সে ভাল কথা।” রাজা মুস্পষ্ট-কণ্ঠে আবেগভরে পড়িতে লাগিলেন ;-- বল ভাই বল কেন পেয়েছিল বল ? দলিতে ছলিতে কি রে অভাগ৷ দুৰ্ব্বল ? তোদের স্বার্থের মুখে বলিদান যেতে মুখে— নিরীহ পরাণগুলি হুঞ্জিত কি ধরাতল ? ধাতার প্রসাদ- ধু তোমাদেরি তরে শুধু, তাহাদের ভাগ্যে যত বঞ্জ আর হলাহল ? তা নয় রে মহাবলি, এ শুধু বিবেকে দলি বাড়াইছ আপনার প্রতিশোধ কৰ্ম্মফল ! হরি নন সম্লতান, কৃপাময় স্তীয়বান,— এ শক্তি পেয়েছ দান,—বারিতে অন্তায় ছল । তাহে যদি কর হেলা, আসিবে তোমারো পালা মুখ মোহে দুঃখতাপ বাড়াইছ এ কেবল ? সাধিতে শক্তির কাজ, বাসনা যদি হে আজি বিনাশি আৰ্ত্তেয় দুঃখ আন পুণ্য স্বমঙ্গল ।