পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিচিত্র করিলেন, তাহার প্রস্তাব সৰ্ব্বহৃদয়ে অনুমোদন করিলেন। তথাপি তাহাকে ভাবিতে হইল-এরূপ কার্য্যে গভর্ণমেণ্টের অসন্তোষের কোন কারণ ঘটিতে পারে কি না । এ দেশের জমাদার ও রাজশদিগের অবস্থা যে কিরূপ শোচনীয়, তাহীদের কার্য্যক্ষমতার পরিসর যে কত কম, তাহা তিনি বাল্যকালে প্রতি পদে ঠেকিয়া শিখিয়াছিলেন ; বিদেশী রাজা যে ভারতবাসীর গৃঢ় স্বভাবের এবং অন্তর্নিহিত ভাবের মৰ্ম্ম গ্রহণ করিতে কত অক্ষম, তাহাও সঙ্গে সঙ্গে বুঝিয়াছিলেন। অধিকাংশ স্থলে শূন্তে আকাশকুসুম রচনা করিয়া, তাহারা বিদ্রোহিতার ভয় পান। এক জন স্বল্পবুদ্ধি ভারতবাসীও তাছার হান্তকারিতা বুঝিতে পারে ; কিন্তু ইংরেজের স্তায় বুদ্ধিমান জাতিও- ( সম্ভবত নিজের দেশের তুলনায় ) তাহাতে বিদ্রোহের আভাস প্রভাক্ষ করিয়া এমন ভীত চঞ্চল হইয়া উঠেন যে, তখন রাজভক্তি ও রাজবিদ্বেষের মধ্যে রেখা টানাও তাঁহাদের পক্ষে কঠিন হইয় পড়ে - এবং ইহার অনিবাৰ্য্য ফলভোগ করিতে হয় বেচার প্রজাদের। এইরূপ অভিজ্ঞতার ফলে রাজার দেশহিতকর কার্য্যোদ্যম একেবারে বিনষ্ট হইয়াছিল বলিলেও অত্যুক্তি হয় না । তিনি কংগ্রেসের এক জন উৎসাহী নেতা ছিলেন ; কিন্তু ইদানীং তাহাতেও তাহার উৎসাহের অভাব হইয়া পড়িয়াছিল । অর্থদান করিতেন বটে, কিন্তু কাৰ্য্যত ইহা হইতেও একরূপ দূরে দূরে থাকিতেন। সংবাদ-পত্রও তিনি ভাল করিয়া পড়িতেন না ; বিশেষতঃ দেশের লোকের প্রতি পীড়ন-সংবাদ সমস্তই বাদ দিয়া যাইতেন । যাহার প্রতীকার তাহার দ্বারা সম্ভব নহে, এইরূপ বিষয়ে আপনাকে নিদ্রিত রাথিবেন—ইহাই তাহার সঙ্কল্প ছিল ; কিন্তু পারিলেন কই ? দৈৰ—কস্তারূপে তাহাকে ঠেলিয়া জাগাইয়া তুলিল। তাহার মনের এইরূপ নিভৃত আলোড়ন-বৃত্তান্ত কস্তাকে তিনি কিছুই জানিতে দিলেন না ; সমস্ত রাত্রি চিন্তার পর প্রাতঃকালে ম্যাজিষ্ট্রেট-ভবনে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। এ সম্বন্ধে কোন কাৰ্য্য করিবার অগ্রে তাহদের পরামর্শ গ্রহণ করাই যুক্তিসিদ্ধ বিবেচনা করিলেন। ম্যাজিষ্টেট-দম্পতি রাজার যে কিরূপ অন্তরঙ্গ বন্ধু, তাহা পাঠক অবগত আছেন। কিন্তু কেবল রাজপরিবার নহে, রাজ্যের সকল লোকই র্তাহদের গুণে মুগ্ধ। ক্লাউন্ডেন সাহেবের নামের সহিত ইহার নানা রকম টাইটেল যোগ করিয়াছিল,— $రి যেমন দয়াল, ভারতবন্ধু, দ্যাম্বাবতার ইত্যাদি । কিন্তু ইহার কোনটাতেই যখন তাহদের মনের আশা মিটিল না—তখন ইহার নাম দিল তাহারা, হিন্দু ক্লাউডেন সাহেব । এ নাম দিবার কারণও ছিল,—কোন পর্কোপলক্ষে ইহারাও জুতাহীন পদে শু্যামস্বন্দরের মন্দির-স্বারে দাড়াইয়া রাজার সহিত একত্রে অণরতি দর্শন করিতেন । সকলে যখন প্রণা করিত, ইহারাও হাঁটু গাড়িয়া নতমুখে বসিতেন । প্রথম প্রথম র্তাহাদের এই ব্যবহার লোকের চক্ষে এতই অস্বাভাবিক ও বিস্ময়জনক বোধ হইয়াছিল যে, তাহারা ইহাদের সারল্যে বিশ্বাস করিতে পারিত না । গভর্ণমেণ্ট কর্তৃক গোয়েনা নিয়োজিত হইয়া ইহার রাজার কার্য্যকলাপ ও মনোভাব বন্ধুতাস্থত্রে অবগত হইয়া পরে অনর্থ উৎপাদন করিবেন – এইরূপই অনেকে সন্দেহ করিত ; কিন্তু সত্যের জয় পড়িয়াই আছে ! কিছু দিন পরে সকলেই নিজ নিজ অমুলক সন্দেহে মনে মনে লজ্জাবোধ করিতে লাগিল। রাজার মুখে পুরোহিতের প্রতি অত্যাচারের কাহিনী শুনিয়া ম্যাজিষ্টেট-দম্পতি সাতিশয় লজ্জিত এবং মৰ্ম্মপীড়িত হইলেন । দশম পরিচ্ছেদ কোন স্বাধীন জাতিভুক্ত মহদস্তঃকরণ ব্যক্তির পক্ষে দুৰ্ব্বল-রক্ষা এমনি স্বভাবসিদ্ধ যে, ইহার অন্যথা দেখিলে আত্মপর-নিৰ্ব্বিভেদে তাহার হৃদয়ে দারুণ আঘাত লাগে। অধিকন্তু এইরূপ নিষ্ঠুর ঘটনা কোন আত্মীয়কৃত হইলে এই আঘাত ব্যথার উপর লজ্জার জালা তাহীকে দাহন করিতে থাকে। এই শ্রেণীর লোকের আহত হায়ুবুদ্ধিতে প্রতীকার-চেষ্টা একবার জাগিয়া উঠিলে শত নিৰ্য্যাতন অগ্রাহ করিয়া কিরূপ ভীমবলে তাহা কার্য্য - করিতে সক্ষম—তাহার দৃষ্টান্ত, হিউম, রিপণ প্রভৃতি মহাপ্রাণগণ। এরূপ কাৰ্য্যকরী ত্যাগক্ষমতা দুৰ্ব্বল পরাধীন জাতির পক্ষে সম্ভবপর নহে । মিসেস ক্লাউডেন বলিলেন,-“এ রকম এক একটা নিষ্ঠুর ঘটনা দেখে মনে করবেন না যে, আমাদের জাতটাই এত ভীষণ ! একটা কথা বলব রাজা, আমাদের স্বভাব-বিকৃতির জন্য আপনারাই কিন্তু অনেক পরিমাণে দাম্বা।” রাজা হাসিলেন,—র্তাহার