পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আজ কৃষ্ণচতুর্দশী। সে দিনের মত জ্যোৎস্নাধারায় চারি দিক হান্তোজ্জল নহে । অবসর পাইয়া অঞ্জ আকাশের স্থানে স্থানে তারকারাশি গুচ্ছে গুচ্ছে দীপ্তি বিকাশ করিতেছিল,—কোন কোন গুচ্ছস্থি ছ এক-একটি অত্যুজ্জল নক্ষত্র দীপ্ত মহিমায় অদ্য সকলকে হীন-প্রভ করিয়া চন্দ্রের স্থল আজি অবিকার করিয়া লইয়াছিল । পশ্চিম দিকে জ্বলিতেছিল শুক্রতারা ; মাখার উপর জলিতেছেন বৃহস্পতি ; কিন্তু হাসি উত্তরমুখে দাড়াইয়া খুজিতেছিল সপ্তর্ষিকে। কিন্তু এই সাতটি তাঁরা যে এলোমেলো ভাবে কোথায় এখন হারাইয়া পড়িয়াছে, হাসি তাহদের সঙ্কেতে ধ্রুবতারাটির নির্দেশ পাইল না । আকাশ হইতে বাগানের দিকে তখন সে দৃষ্টিপাত করিল, গাছপালার মধ্যে শতসহস্ৰ জোনাকি পোকা একই সঙ্গে তাহার নয়নে জলিয়া উঠিম! আবার মুহূৰ্ত্তে নিবিয়া গেল । হাসমুহানার গন্ধরাশি তাহার নাসিকার উপর প্রবল ভরঙ্গে ঝাপাইয়া পড়িল । সে দিনও এই গন্ধে দিক ভরিয়া উঠিয়াছিল। কিন্তু ইহার সহিত যে সঙ্গীত-ধারা উথলিয়া উঠিয়াছিল, আজ তাহা নীরব। সইসের বোন—জোয়ানীর অনেক দিন বিবাহ হইয়া গিয়াছে । আর শর-দা ? তিনি এখন কোথায় ? সম্ভবতঃ রাজকুমারীর পাশ্বে দাড়াইয়া প্ৰেম-সম্ভাষণ করিতেছেন। দুষ্ট ফোট৷ অশ্র তাহার নয়নে সঞ্চিত হইয়া উঠিয়া ক্রমশঃ কপোল বাহিয়া নীচে পড়িল ।—কেন ? হাসি ত তাহাঁকে ভালবাসে না, তাহার প্রেম CH প্রত্যাখ্যান করিয়াছে—তবে ? ভালবাসে না-ইছাই কি ঠিক ? ন-সে ভালবাসে,—কিন্তু সে ভালবাসা ত তার প্রেম নয়, তাহা সখ্যতা, তাহা শ্রদ্ধা, তাহা মহৎ হৃদয়ের প্রতি আকর্ষণ। যদি সে মা তার মনের ভাব না জানিত, সম্ভবতঃ এই সখাতা, এই শ্রদ্ধা কোন দিন প্রেমে পরিণতঃ হইতে পারিত, কিন্তু মাতৃ ইচ্ছার মধ্যে সে আত্মবিলুপ্ত করিয়া দিয়া চিরদিনই শরৎকুমার হটতে আপনাকে দূরে রাপিয়াছে এবং চিরদিনষ্ট রাখিৰে—তবে । তবু ত অধিকার বলিয়। একটা জিনিষ আছে ! fচরদিন যাকাকে আপনার বলিয়া জানে—সে আজ পরের হইয়া গেল—একবিন্দু অশ্রও কি সে জন্ত পড়িবে না ! দাদার নিকট আর হাসির প্লাজকুমারীর ঠিকান। জানিয়া লইতে কষ্টল না । মাতার পীড়ার সংবাদ পাষ্টয়া কুন্দবালা প্রসাদপুরের •š–»æ V) D8@ বিচিত্র। ব্যায়াম-উংসবের পুৰ্ব্বেই কলিকাতায় আসিয়াছিল । মাত মুস্থ হইয়া উঠিয়াছেন, এখন সে প্রসাদপুরে ফিরিয়া যাইবে । যাইবার আগে সে হাসিকে দেখিতে আসিল । হাসি ও কুন্দ দুইজনেই বেথুন স্কুলের ছাত্রী । ছোট্ট মেয়েটি হাসি প্রথম যে দিন হাস্ত প্রফুল্ল মুখে দৈনিক ছাত্রীরূপে স্কুলে ভাত্ত হইয়াছিল, সেই দিন হইতেই সেখানকার উচ্চ শ্রেণীর বোর্ডার বালিকা কুন্দের হৃদয় অনেকখানি সে অধিকার করিয়া লইয়াছিল যত দিন হাসি স্কুলে ছিল, কুন্দ আপনার স্নেহাঞ্চল-ছায়াতলে বালিকাকে রক্ষা করিত। স্কুল ছাড়িবার পরেও উভয়ের মধ্যে এই ভালবাসার বন্ধন একেবারে ছিন্ন হইয়া পড়ে নাই। কুন্দ প্রসাদপুরে কাজ লইয়া পৰ্য্যন্ত তাহার। একটু দূরে পড়িয়াছে সত্য, দেখা-শুনাও নাই, চিঠিপত্র লেখাও একরকম বন্ধ ; তথাপি কলিকাতা আসিলেই কুন্দ একবার হাসিকে দেখিতে আসিতে ভোলে না । দৈববশতঃ ঠিক পরদিনই কুন্দ হাসিকে দেখিতে আসিল । রাজকুমারীকে দিবার জন্ত তাহার চিঠিখানি হাসি কুন্দকে দিল । ষোড়শ পরিচ্ছেদ রাজা ভাল হইয়াছেন ; ব্যায়াম-উৎসবও শেষ হষ্টয়া গিয়াছে । শরৎকুমারের আর কলিকাতায় যাইবার বাধা নাই, তিনি আজ বিকালে বাহিরে না গিয়া জিনিষ-পত্র প্যাক্ করিতেছিলেন, অভিপ্রায়, আজ সন্ধাবেল রাজাকে এ কথা জানাইয়া পরদিনই বাটী যাত্রা করিবেন। মেজের উপর ট্রাঙ্ক দুইটা খোলা, কাপড়-চোপড় তাহার মধ্যে সাজান হষ্টয়া গিয়াছে। টেবিলের উপর ষে দু একখানা বই ও ছোটখাট দুই-একটা জিনিষ পড়িয়াছিল - তাহা পোর্টম্যাণ্টে উঠাইয়া লষ্টয়। তিনি দেয়ালের নিকট আসিয়া দাড়াটলেন । দেয়ালের গায় রাজকুমারী-দত্ত মালাগাছি টাঙ্গান ছিল, কুন্দ-ফুলের গড়েমাল, মাঝে মাঝে তাছাতে চাপা ও গন্ধরাজের মিলান । মালাগাছি দু’fদনের বাসিমালা—পাছে স্পর্শে একটি ফুলও ঝরিরা পড়ে— হাত দিতে শরতের সঙ্কোচ বোধ হইতে লাগিল। নিকটে আসিয়া আভ্রাণ লইযামাত্র একটি মনোহর স্বগন্ধে তাহলে নাসিক যেন ভরিয়া উঠিল,—শরতের —মনে হুইল-এ বুঝি স্বর্গেরই পারিজাত-মালা ।