পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বপ্নবাণী ঘনিয়ে আসবে আঁধার যখন, পিছিয়ে পড়বে শতেক যোজন, ঘূর্ণিপাকে পড়বে ঘুরে যদি একটুও বাকো ! আবৃত্তি শেষ করিয়া গানটি গুণ গুণ করিয়া গাছিতে গাছিতে আবার আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া এবারও জ্যোতিৰ্ম্মল্পী সূর্য্যের দর্শন পাইলেন না। ভাস্করদেব তখন বাতায়ন উদ্ধে উঠিয়া পড়িয়াছেন। বালিকা নিমীলিত নয়নে অস্তর্জোতিকে ধ্যান করিয়া মনে মনে কহিলেন, “হে ধ্ৰুবজ্যোতিঃ ! প্রচ্ছন্ন থাকিও না তুমি, প্রকাশ হও প্রকাশ হও । হে আমার অন্তদেবতা, হে কর্ণধার । এষ্ট তরঙ্গাকুল অকূলে হাল ধরিয়া কুলপথে লষ্টয়া চল তুমি ” আকাশ তখন আর লোহিত সমুদ্র নচে, শুভ্র মেঘস্ত,পে সমুজ্জল নীলাম্বব বক্ষ ; গঙ্গার দু’একটি স্থান কৃষ্ণবর্ণ মেঘবেষ্টনে অতি রমণীয দেখাষ্টতেছিল । জ্যোতিৰ্ম্ময়ী ত{চা দেখিয়া ভাবিলেন, “ঙ্গয় রে । এষ্টরূপ প্রেমালিঙ্গনে স্বামীদের অন্তর্জাতিক মিলন মহিমাময় হইবে কবে ? জবাশা কি ?” আবার সেই পথটি সহসা ডাকিয়া উঠিল । এবার বtভায়ন-নিম্নের মাধবীলতাবল্পী হইতে সে শিস দিল । জ্যোতিৰ্ম্ময়ী বলিল – “পাখি, তুমি বল ত ভাই, আমার আশা সফল হইবে কি না ?” পাখী উড়িল. উড়িতে উড়িতে উত্তর দিয়া গেল “কে জানে, কে জানে !” ” বালিক। দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলিয়। ভাবিলেন, “হায় রে। আন্তর্জাতিক মিলন । জগতের সীমামৈত্রী ভাব ! সত্যই বড় দুরাশা ! আমাদের নিজেদের মধ্যেই আগে মিলন হোক। উচ্চস্তর প্রত্যাশা করিবার পূৰ্ব্বে নিম্নস্তর গঠনের আবঙ্গক। এই যে বঙ্গবিভাগ ঘটনা, হে ভারতের ভাগ্যনিয়ন্ত পুরুষ, ইহা দ্বারা যেন সেই মিলন-সোপান গঠিত হয়।” হঠাৎ চটিজুতার শব্দ শোনা গেল, অনাদি একখান খবরের কাগজ হাতে করিয়া ছাপাইতে স্থাপীইতে উপস্থিত হষ্টয়া কহিল, "দিদিমণি, রাণীদিদি, রাজকুমারী ভাই প’ড়ে দেথ ।” বলিয়া কাগজখান টেবিলের খাজাপত্রের উপর ফেলিক্ষ্মা জ্যোতিৰ্ম্মরীয় পাশে আসিয়া দাড়াইল । রাজকুমারী সেখান সরাষ্টয়া রাথিয় সহাস্তে কহিলেন,"ব্যাপারখানা কি তুমিই বল না ওগো গেজেটবতার। চতুর্মুখের দর্শন পেয়ে আমি কি ছন্মুখের আশ্রয় নিতে যাব ! ব’লে ফেলে সব খবরগুলো ?” S(tషి অনাদি একটু চিন্তিতভাবে বলিল, “বঙ্গবিভাগ ত হয়ে গেল দিদি ?”

  • সে খবর ত পুরান হয়ে গেছে,—নতুন কিছু বল ?”

অনাদি তাহার কেশহীন গুফে তা দিবার ভাণ করিয়া কছিল, “আরে আরে—কি বলছিস্ দিদি ! এ কথা কি কখনও পুরান হয় ? এই মহাকাণ্ডের উপর দিন দিন নতুন নতুন ফ্যাকৃড়া গজিয়ে এটাকে যে চিরনবীন ক’রে তুলেছে। বটানিকেলের বটগাছ কি কারো চোখে পুরান ব’লে ঠেকে, এইটে বল দেখি ? অথচ গাছটার না জানি আদি, না জানি অনাদি । পড় পড় ভাই কাগজখানা, উপাধ্যায়ের বক্তৃতাটা একবার পড়ে দেখ । এ লেখা কোনো মা পড়লে তায় কোলের ছেলেরও রক্ত টগবক ক’রে ফুটে উঠবে।” কাগজখান টেবিল হইতে উঠাইয়া জ্যোতিৰ্ম্মীর হাতের কাছে অনাদি তুলিয়া পরিল, জ্যোতিৰ্ম্মী আড় নয়নে নামটা দেখিয়া লষ্টয় সেখানা নিয়ে নিক্ষেপ পুৰ্ব্বক কছিলেন, “এ রকম মারকীটের কথায় বোমাদের তেজ বাড়ে, আমি ভাই নিস্তেজ, হতাশ হয়ে পড়ি। কিছু দিন থেকে আমার মনে কি কথা তোলাপাডা করছে জান অনাদি ?” অনাদি শুনিবার জন্য উৎকর্ণ হষ্টয়া উঠিল। জ্যোতিৰ্ম্মী বলিলেন, “আমরা ভাই অভিশপ্ত জাত, নৈতিক বল হারিয়েই আমাদেয় এই দুর্দশ ! তুমি কি ভাব অত্যাচার দ্বারা আমরা জাতীয় জীবন লাভ করব ? কথনষ্ট না । যারা রক্তপাতের উপদেশ দিয়ে ছেলেদের বিপথে নিয়ে যাচ্ছেন—তারা দেশের সৰ্ব্বনাশ করছেন।” অনাদি ভূমিনিক্ষিপ্ত কাগজখানা উঠাইয়৷ ক্ষুদ্রাকারে ভঁাজ করিতে করিতে কঠিল, “না গো ন—রক্তপাতও চাই বই কি, ফ্রান্সের দৃষ্টান্ত দেখ না ভাই, ওরা কি সহজে দাসত্বমুক্ত झएब्र८झ ?” জ্যোতিৰ্ম্মী উত্তেজিত স্বরে কছিলেন, “সে দৃষ্টাত্ত অামাদের আদর্শ হ’তে পারে না । সেই ভীম বীভৎস নিষ্ঠুরতা মনে করলেও কষ্টে-আতঙ্কে দেহের রক্ত জল হয়ে যায় আত্মা করুণায় বিগলিত আর্দ্র হয়ে ওঠে। ও রকম বিজাতীয় অমুকরণের কথা ভুলেও মনে এনে না ভাই। আমাদের বলীয়ান্‌ হ’তে হবে ধৰ্ম্মের বলে, নৈতিক বলে । দৈহিক বলের সার্থকতা সেইখানেই, যেখানে এই শক্তি আধ্যাত্মিক বলের সহায়স্বরূপ । ইংরাজকে