পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বপ্নবাণী কর কি বাপু—এখান যে একটা প্রাণবন্ত জীবের, এ কথাটা যে দেখছি একেবারেই ভুলে যাচ্ছ!” এমন বিকৃত মুখভঙ্গীতে পণ্ডিত মহাশয় এই আৰ্ত্তনাদ করিলেন যে—কারুণ্যরস হাস্তরসে পরিণত হইল। জ্যোতিৰ্ম্ময়ী হাসিয়া উঠিয়া কছিলেন –

  • বাহুবলের পরীক্ষায় অনাদি দেখছি আপনার নিকট সাটিফিকেট আদায়ের চেষ্টায় অাছে—”

অনাদি আরো একটু জোরে স্থত কযিয়া কছিল, “নিশ্চয়। পণ্ডিতজী হচ্ছেন- আমাদের ব্যায়াম সমিতির সেক্রেটারী, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ যদি কথনে বাংলা-দেশে বাধে, তবে অামাদের যে দ্রোণাচার্য্যের অভাব হবে না, এই আশায় আমরা বুক বেঁধে আছি, বুঝলেন ত পণ্ডিত মহাশয় ।” “বুঝেছি বাবা, তা হ’লে হাতটাকে অবিলম্বে রেহাই দিতে হচ্ছে ; নইলে তোমাদের তথাকথিত সন্মান-আসন শূন্যই পড়ে থাকবে ।” “এই নি আপনার হাত, দেখে নিন্‌ ভাল ক’রে কোথায় একটু টোস্কায় নি পৰ্য্যন্ত ।” অনাদির নিকট হইতে অব্যাহতিলাভে পণ্ডিত মহাশয় এইবার তাহার মুক্ত হস্ত দাড়ী-পরিচর্য্যায় নিযুক্ত করিয়া ইণফ ফেলিয়া একখানা আরাম কেদারায় বসিয়া পড়িলেন । জ্যোতিৰ্ম্মণীও র্তাহার পুৰ্ব্ব-পরিত্যক্ত চৌকিখানা পুনরধিকার করিলেন, কেবল অনাদি বসিল না । পণ্ডিত মহাশয়ের নিকট দাড়াইয়া কহিল— “পণ্ডিত মহাশয়, একটা কথা জিজ্ঞাসা করি, বে-আদপী মাপ করবেন, বলুন ত আপনি স্বদেশী কিংবা বিদেশী ?” পণ্ডিত মহাশয় দক্ষিণ হস্ত দাড়ী হইতে মুক্ত করিয়া বাড়াইয়া ধরিয়া এবং বাম হস্ত টিকিতে বুলাইয়া বলিলেন, “এই শিখা এবং চৰ্ম্মই ত তোমার প্রশ্নের উত্তর বা বাজি ।” অনাদি ঘাড় নাড়িয়া কছিল, “উহু, শুধু টিকিতে আর কালো রঙে আজকাল স্বদেশী হওয়া যায় না ! স্বদেশীর ভাবার্থ এখন বদল হয়ে গেছে । বিদেশী জিনিষ ব্যবহার করবেন না ব’লে শপথ করেছেন কি ?” “কই তা ত করি নি বাপু ।” *করুন তবে । এই ষে আপনার হাতের ক’গাছি কালে স্থতো, শধ-জাগান মন্ত্রে যেগুলি তৈরী—এই স্থতে। হাতে বেষে আপনি স্বদেশী তন্ত্রে বাধা পড়েছেন, বুঝলেন ত ? এখন পয়ল নম্বরে— আপনার গলার ঐ পৈতার গোচ্ছাটা আপনাকে ছিড়ে ফেলে দিতে হচ্ছে।” ৬৮-২১ SW2S পণ্ডিত মহাশয় কহিলেন,--“এ কেমন কথা বা বাজি ! আমি ত ব্ৰহ্মজ্ঞানী নই ; কিংবা সিদ্ধপুরুষও হয় নি এখনো ।” -

  • এ ওজরে পর পাবেন না গুরুঞ্জী ? সিদ্ধঅসিদ্ধ সকলের পক্ষেই এখন বিদেশী পণ্য নিষিদ্ধ।”

খুব জোরে জোয়ে ঘাড় নাড়িতে নাড়িতে সে এই কথা বলিয়া চলিল, “জানেন ত, জাৰ্ম্মাণি দেশের স্থত থেকেই আমাদের দেশের সব পৈতা তৈরী হয় । আপনি যতই কেন হা-হুতাশ করুন না, স্বদেশী কালাপাহাড়দের হাত থেকে কিছুতেই এ স্থতাকে রক্ষা করতে পারবেন না ; শেষে অfপনার গলাটায় পর্য্যন্ত টান পড়তে পারে।” পণ্ডিত মহাশয় এতক্ষণ এক হাতেই দাড়ী টানিতেছিলেন, এইবার দুই হস্তই দাড়ী-রক্ষণে নিযুক্ত করিয়া বিস্মিত স্বরে কছিলেন, “জাৰ্ম্মাণি স্থতার উপবীত ! সে গুলো তা হ’লে বাবাজী তোমাদের রাজারাজড়ার গলায় শোভা পাবার উদ্দেশ্রেই প্রস্তুত হয় । কিন্তু আমার গলার এই গোচ্ছাটুকু খুড়ীমার চীরকাকাটা ধন ৷” “তাই নাকি ? আপনি দেখছি তবে ভাগ্যবান ! হতভাগ্য অামাকেই তা হ’লে দেখছি আত্মহত্যায় পাপে লিপ্ত হ’তে হেল !" অনাদির লয়বুদ্ধি-নিয়োজিত হস্ত তৎক্ষণাৎ নিজের কণ্ঠোপবীতগুচ্ছ আক্রমণ করিল । “আরে করিসূ কি করি কি অপগও বালক ” কিন্তু পণ্ডিত মহাশয়ের এই চীৎকার-প্রতিবাদ ব্যর্থ করিয়া অনাদির ধৰ্ম্ম এবং বর্ণব্যঞ্জক স্বত্র বাতাল্পন-পথে মাধবীলতা-জালের মধ্যে গতিলাভ করিল। জ্যোতিৰ্ম্ময়ীও প্রথমটা একটু আশ্চৰ্য্য হইলেন ; কিন্তু সহাস্তে কহিলেন, “বাহ রে! ব্রাহ্মণ-পুত্ৰ হ'য়ে অসঙ্কোচে পৈতা ত্যাগ করলি । ত্যাগ-স্বীকারের এ হাতে খড়ি নাকি ?” অনাদির মনের গুপ্তকথা যেন রাজকুমারী প্রকাশ করিয়া দিলেন ; সে তাড়াতাডি সে কথা চাপা দিয়া কহিল, “রাণীঠfকরুণ, এবার ভাই তোমার পাল ! কাচের চুড়ি ও বিলাতি ক্ষিতা মেয়ে-মহল থেকে একবারে উঠিয়ে দাও। তোমার ইস্কুলের মেয়েরা চরকা কাটে বটে ; কিন্তু তাতেই শুধু হবে না, গায়ে গায়ে চরকা ধরাও, তাত বোনার ব্যবস্থা কর –অধিকন্তু এ রাজ্যে বিলিতি জিনিষ আদেী স্থান না পায় দোকানদারদের উপর এইরূপ কড় হুকুমজারী ক’রে পাঠাও ” অনাদির উৎসাছে জ্যোতিৰ্ম্মন্ত্রীও এতক্ষণ একটা