পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মিলন-রাত্রি দাসীর এই বাক্যে উভয়েই সলজ্জ অনুরাগে পরস্পরের প্রতি দৃষ্টিপাত করিলেন। ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ রাজকুমারী বিগত পুৰ্ব্বত্বে যখন সখীদিগেব সন্থিত রহস্তjলাপে রত ছিলেন, সেই সময় রাজপরামর্শ-গৃহে গুপ্ত বিচারসভা বসিয়াছিল । রাজার অনুপস্থিতিকৃালে প্রসাদপুরের গতিয়ারশালা হইতে অস্ত্র-শস্ত্র চুরী গিয়াছে, অস্ত্রণালীর অধ্যক্ষাদি সহ দেওয়ান কুঞ্জবাবু এই সংবাদ লইয়া আজ প্রাতঃকালে কলিকাতায় অসিয়াছেন। আপাততঃ বিচারগুহে রাজার নিকট তিন জন মাত্র উপস্থিত ছিলেন ;– দেওয়ান, অস্ত্রধ্যিক্ষ এবং শু্যামাচরণ । অস্ত্রীধ্যক্ষ কৃষ্ণনাথ বাবুর উদ্দেশে রাজ অতুলেশ্বর কহিলেন, “চোরাই অস্ত্রের যে তালিকা দেখছি, সংখ্যl ত এর নিতান্ত কম নয় । এক দিনে যদি এত হাতিয়ার চুরী গিয়ে থাকে ত ডাকাত হয়েছে বলুন ।” উত্তর হইল—“না ধৰ্ম্মাবতার, এক দিনে নয়, ক্রমশঃ অল্পে অল্পে চুরী গিয়েছে, সেই জন্ত গোড়াতেই এ ব্যাপারটা আমরা ধৰ্ব্বতে পারি নি।" “কিন্তু আপনার প্রধান কৰ্ত্তব্যই ত ‘ওয়াকিবহাল থাকা । একখান। অস্ত্রের স্থান পৃষ্ঠ হ’লেই ন্ত এক জন হসিয়ার অধ্যক্ষের সেট নজরে পড়া উচিত।” দেওয়ান এবং শুমাচরণ উভয়েই অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে নীববে এই বাক্যের অনুমোদন করিলেন । কৃষ্ণনাথও বুঝিলেন, এই অভিযোগবাক্য র্তাহার প্রতি অযথা মারোপিত হয় নাই । রাজা পুনরায় কহিলেন, “আমি কলকাতায় আসা পৰ্য্যস্ত সম্ভবতঃ এই চুরী চলেছে। আর আপনার টের পেলেন কবে ?” দেওয়ান বলিলেন, “বিগত পরশু প্রাতঃকালে অামি নেীগ্রাম তদারক থেকে প্রসাদপুরে ফিরে এসে খবর পাই ।” কৃষ্ণনাথ কহিলেন, "আমরা জেনেছি, তার পূৰ্ব্বরাত্রে, যে রাত্রে খ্যাতনামী সনাতন ধমুক দেওয়াল থেকে নীচে প’ড়ে যায় ।” রাজ দেওয়ালে অলিম্বিত ধমুৰ্দ্ধারী সনাতন রায় চৌধুরীর প্রতিকৃতির দিকে সচিস্ত্যনয়নে চাহিয়৷ আপন মনেই যেন কহিলেন—"বন্দুক, তলোয়ার ( প্রভৃতি চুরীর অর্থ বুঝা যায়, কিন্তু অত বড় ধমুকট সরাবার উদ্দেশ্য কি হ’তে পারে ?” শ্ৰামাচরণ এতক্ষ৭ নাবুল ঔংস্থক্যে ইহাদের কথt বাৰ্ত্ত শুনিতেছিলেন, রাজীর এই প্রশ্নে তিনিও অনেকট স্বগতভাবেই মুদ্রস্বরে কছিলেন, “এতেই ত এ মামলা বেশী জটিল হয়ে উঠেছে ।” দেওয়ান বলিলেন, "হরিবাম যা- বলেতাতে- -” রাজা দেওয়ানকে নিরস্ত করিয়া কহিলেন, "হরিরামের কথা—তার পালায়, তার মূপেই শোনা যাবে ! আপনার কি মনে হয়, কৃষ্ণনাথ বাৰু ?” রাজা বিচারাসন গ্রহণ করিয়াছিলেন জাজিম আস্তরণ-বিস্তুত এজলাস-গৃহে । তাহার দক্ষিণে বামে শুামাচরণ ও দেওয়ান, আর সম্মুখভাগে উপবিষ্ট ছিলেন অস্ত্র।ধ্যক্ষ,—ইহার উপরেই বিচারকের অম্বর্ভেণী দৃষ্টির তেজ পূর্ণমাত্রায় নিপতিত হইতেছিল । সময়ে সময়ে তাহা অসহ বোধ করিয়া কৃষ্ণনাথ দৃষ্টি অবনত করিতেছিলেন । রাজার প্রশ্নে অস্ত্রীধ্যক্ষ একবার চোক গিলিয়া অবনতমুথে উত্তর করিলেন, “আমার মনে হয়, ধমক হরণ চোরের উদ্দেগু ছিল না, সম্ভবতঃ অন্ত অস্ত্র গ্রহণকালে ধাক্কা লেগে ধমুকটা নীচে প’ড়ে গিয়েছিল।” এ অনুমান বাজার মনে লাগিল না, কিন্তু সংক্ষেপ *ছ” শব্দে তাহীর মনোগত মন্তব্য শ্রোতৃবর্গের অনুমানগ্রাহ রাখিয়া তিনি পুনরায় জেরা আরম্ভ করিলেন, “আপনার জবানবন্দী থেকে এইটুকু বেশ বুঝা যাচ্ছে যে, হাতিয়ারশালা যে ক্রমেই শূন্ত হয়ে পড়ছে, ধনুক নীচে পড়ার পুৰ্ব্বসময় পর্য্যন্ত আপনার তা’ ধৰ্বতেই পারেন নি । আচ্ছ, আমি কলকাতায় এলে পর অস্ত্রশালায় পাহারা দেওয়া কি বন্ধ হয়ে পড়েছিল ?” উত্তর হইল—“আঞ্জে না, পাহারার কোন দিন কিছুমাত্র ব্যতিক্রম ঘটে নি ।” “ত হ’লে চোরের দেখছি সম্মোহনবিদ্যা-পটু ! যে সব হাতিয়ার চুরী গেছে তার মধ্যে তলোয়ার, বন্দুক ও ত নিতান্ত কম নয় ; প্রহরীদের চোকে খুলে দিয়ে সেগুলো অনায়াসে বার ক’রে নিয়ে যাওয়াও ত কম বাহাদুরীর কাজ নয় ।” “আজ্ঞে ধৰ্ম্মাবতার, সদর দরজ দিয়ে চুয়া হয় নি। লাইব্রেরীশ্বর ও হাতিয়ারশালার মধ্যে যে দরজা আছে, সেখান দিয়েই চোর যাতায়াত করেছে, আর অস্ত্র নামিয়ে দিয়েছে পিছমেব জানালী দিয়েWikitanvirBot (আলাপ) বাশবাগানের জঙ্গলে ।”