পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sዓe পড়িয়াছে ; ঐ ডুবিল, ঐ নিবিল ! সন্ধ্যাতারার উজ্জ্বল রূপ সহস! উজ্জ্বলন্তর হুইয়? উঠিল, পার্শ্বের ক্ষীণকাস্তি মঙ্গলগ্ৰহ অপেক্ষীকুত সুস্পষ্ট চাবে নেত্রগোচর হইল । তাহার দিকে চাঙ্গিয়া জ্যোতিৰ্ম্ময়ী ভাবিতে লাগিলেন, “মঙ্গলগ্রহে বাধা-প্রেরণের জন্য কত জ্যোতিষী প্রাণ"স্ত প্রয়াস কবিভেছেন, চিরদিন কি তাহাদের চেষ্টা নিপ বহিবে! না কোন সৌভাগ্যশালী একদিন এই বহু চেষ্টাগঠিত সোপানবলী চড়িয়া মঙ্গলে পোছিতে পালিবেন ?” জ্যোতিস্ময়ীর দীর্ঘনিশ্বাস পড়িল । অদূরে শুক্নে পাতা দলিত জুতার মচমচধ্বনির মধ্যে, তাহার নিশ্বাসের মৃদ্ধ ধ্বনি ধীরে মিশাইয়া গেল। জ্যোন্তিৰ্ম্ময়ী সেই দিকে আকুল প্রত্যাশায় কৰ্ণপাত করিলেন, ডাক্তার-দা কি এতক্ষণে আসিতেছেন। তাহার হাতে এখনো রাখী বাধা হয় নাই ; বিকালের আনন্দ তাই অসম্পূর্ণ রহিয়া গিয়াছে। পদশব্দ যতই নিকটবৰ্ত্তী হইতে লাগিল, ততই তাহার হৃদয়-শোণিত বেগে উঠিতে পড়িতে লাগিল, একটা লজ্জা-চাঞ্চল্যের আবেগে মুখমণ্ডল আরক্তিম হইয়া উঠিল! জ্যোতিৰ্ম্ময়ী প্রকৃতিস্থ হইবার চেষ্টায় উঠিয় দাড়াইয়া লতামণ্ডপ হইতে ফুলগুচ্ছ চয়নে রত হইলেন। মূৰ্ত্তি নয়ন-গোচর হইল, “ইনি ত ডাক্তার নহেন, —পিতা ষে ।” রাজা আসিয়া কহিলেন, “আমি জানতুম এখানে এলেই রাণীর দেখা পাব।" রাজকুমারী লজ্জীবনত দৃষ্টিতে ফুলগুলি তাহার হাতে দিয়া বলিলেন, “আজকে বাবা অামি ছেলেদের রাখী পরিয়ে দিলুম।” রাজাবাহাদুর কন্যার পিঠে অন্ত হাত রাথিয় অাদরে বলিলেন, “শুনেছিল ত সব কথা । এখানে কনফারেন্স হবে ; খুশী ত রাণী ।” রাজকুমারী সমুৎসাহে কহিলেন, “খুব !” পুর্বের নৈরাপ্ত-বেদন তাহার হৃদয় হইতে মুছিয়া গেল । রাজা বলিলেন, “চল রাণি ঘরে ; প্রোগ্রাম ঠিক করি শে। ম্যানেজার আবার আমাকে জোর তলব করেছেন, কাল আর হবে না, পরশু নাগাদ আমাকে দু’চার দিনের জন্ত এক বার কলকাতায় বেতেই হবে i* দু'জনে হাত ধরাধরি করিয়া গৃহাভিমুখী হইলেন। যাইতে যাইতে রাজকুমারী কহিলেন, “ত হ’লে কাল একবার ম্যাজিষ্ট্রেটের বাড়ী চল না বাবা ” রাজা কছিলেন, “আমার খুকীটির মনের ভাব স্বর্ণকুমারী দেবীর গ্রন্থাবলী বুঝে আমি আগে থাকতেই সেই প্রোগ্রাম ঠিক করেছি। ম্যাজিষ্ট্রেট-পত্নী জানেন যে, কাল আমরা র্তাদের সঙ্গে দেখা করতে যাব ।” জ্যোতিৰ্ম্ময়ী হাসিন্ধু অননদ প্রকাশ করিয়া কহিলেন, “ম্যাজিষ্ট্রেটকে আমি কিন্তু কনফারেন্সের প্রেসিডেণ্ট হ’তে নিমন্ত্রণ কর্ক বাবা—” রাজা কছিলেন,—“তিনি প্রেসিডেন্ট হ’লে ত খুবই ভাল হয়। কিন্তু তা কি হবেন ?” “নিশ্চয়ই হবেন, তুমি দেখে নিও।” বলিতে বলিতে হাস্তেজল মুখখানি তুলিয়া মঙ্গল গ্রহের দিকে দৃষ্টিপাত করিলেন ! পঞ্চম পরিচ্ছেদ বহুদূর বিস্তৃত জনশূন্ত পতিত প্রান্তর ; ত্রিসীমা দিয়া প্রায় লোক ঘাতীয়া ত করে না । ইহারই এক স্থলে বন্ত গাছপালা-প্রচ্ছন্ন বহু পুরাতন একটি মন্দিরের ভগ্নস্ত,প। ইষ্টক-আবর্জনারাশি-নিৰ্ম্মিত প্রাকার-বেষ্টনে মধ্যের অঙ্গনভাগ এমন গুপ্ত গুহাকারে পরিণত হইয়াছে যে, ইহার ঠিক বহির্দেশে আসিয়া দাড়াইলেও কেহ অস্তৰ্ব্বিভাগের পরিচয় পায় না। এই গুপ্তস্থান বিদ্রোহী যুবকদলের দুর্গ-নাম মাতৃমন্দির । অন্তৰ্ব্বিভাগ দুইটি প্রকোষ্ঠে বিভক্ত ; একটি নব বলকদিগের শপথগৃহ এবং এইখনেই মাটীর নীচে চোরাই অস্ত্রশস্ত্র প্রভৃতি সংরক্ষিত থাকে ; অন্তাংশ বিস্ফোটক পরীক্ষাগার। এ মন্দিরে প্রবেশ-অধিকারীর নাম সেবাধারী । শনিরবিবারেই এখানে ছেলেদের আমদানী অধিক, অস্ত্রশস্ত্রের কসরৎ এবং রাসায়নিক পরীক্ষাকার্য্য এই ছ’ দিন বেশ রীতিমত ভাবে এখানে চলে । পুৰ্ব্বকথিত রাখীবন্ধনের পর দিন পড়িয়াছে একটি শনিবার, কিন্তু তথাপি আজ এখানে সেবাধারীর সংখ্যা খুবই কম । বিবেকানন্দ স্বামীর শিষ্যদলের অনুকরণে গৈরিক পরিচ্ছদধারী দলপতি মহাশয়ের হস্তে এক খানি প্রণালী-পুস্তক ; পরীক্ষাকার্য্যে রত করেকটি বালকের নিকটে দাড়াইয়া প্রকরণে ভুল চুক দেখিলে তিনি মাঝে মাঝে তাহ সংশোধন করিয়া দিতেছেন এবং অবসর মত গুহার বাহিরে প্রাকfরনিম্নে আসিয়া কণ্ঠসংলগ্ন ক্ষুদ্র বাঁশি বাজাইয়া অনাগতদিগকে জানাইয়া দিতেছেন যে, পথ নিরাপদ । এখানে দলবদ্ধতাবে আলিবার নিয়ম নাই, এক সময়ে দুই এক জন মাত্র সতর্কতা অবলম্বনে প্রাকার-স্বারে