পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বপ্নবাণী ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ পরদিন রাজাবাহাদুর জ্যোতিৰ্ম্মীকে সঙ্গে লই৷ যথাসময়ে ম্যাজিষ্ট্রেট-ভবনে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। বাগানে টেবিল চৌকি পাতা, চায়ের আয়োজন, বাহিরের লোকও আজ এখানে কেহ নাই, পিতা-কন্যাকে দেখিয়া ম্যাজিষ্ট্রেট-দম্পতি সাতিশয় আনন্দ প্রকাশ করিলেন । মেমসাহেব নুতন বাংলা শিখিতেছিলেন,—জ্যোতিৰ্ম্মীকে আলিঙ্গন পাশে বদ্ধ করিয়া মুখচুম্বনপূর্বক কহিলেন, “তোমাকে বড় অধিক দেথতে ইচ্ছা করছিলাম, «rfatta fosą są Histą I ( My Dearest Child ) ঠিক হইল কি ?” জ্যোতিৰ্ম্মী হাসিয়া কহিল, “খুব ঠিক হয়েছে, মাদার ।” জ্যোতিৰ্ম্ময়ী ইহাকে মাদার বলিয়াই সম্বোধন কৱিত। মেমসাহেব জ্যোতিৰ্ম্ময়ীকে বাছপাশ হইতে মুক্তিদানপুৰ্ব্বক সকলকে আসন গ্রহণ করিতে বলিয়া পেয়ালাতে চ ঢালিতে ব্যস্ত হইলেন। সাহেব জ্যোতিৰ্ম্ময়ীকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোমার সমিতি cr:TN 5ēsts, My dear girl.” জ্যোতিৰ্ম্মী বলিল, “ভালই। কাল, ছেলেদের হাতে আমি রাখী বেঁধেছি; আজ আপনাদের জন্ত এনেছি।” জ্যোতিৰ্ম্ময়ী হইগাছি রাখা নিজের করপ্রকোষ্ঠে বাধিয়া আনিয়াছিল ; তাহার একটি খুলিয়া প্রথমে ম্যাজিষ্ট্রেটকে পরাইল। পরাইতে পরাইতে বলিল, “আমি বিপদে পড়িলেই আপনাকে কিন্তু উদ্ধার করিতে হইবে। বুঝিলেন ত ?” ম্যাজিষ্ট্রেট হাসিন্ধা বলিলেন, "All right. এই অধিকারে নিজেকে সৌভাগ্যবান ব’লেই মনে করছি।” জ্যোতিৰ্ম্মী আহলাদের হাসি হাসিন্ধা তাহাকে ছাড়িয়া মাদারের কাছ ঘেলিয়া বসিয়া তাহার হাতে রাখী বধিতে প্রবৃত্ত হইল। তিনি রাখী পরিয়া তাহাকে চুম্বনদানপুৰ্ব্বক তাহার হাতে চা-পূর্ণ একটি পেয়াল উঠাইয়া দিলেন । রাঙ্গা পূর্বেই মিসেস ক্লাউডেনের টেবিলের কাছে বসিয়া চা পান আরম্ভ করিয়াছিলেন। ক্লাউডেন সাহেবও পাশের চৌকিখানি অধিকার করিয়া, এক পেয়াল চা হাতে তুলিয়া লইয়া রাজার দিকে চাহিয়া বলিলেন,— “Ry the bye রাজা, ডাক্তার চৌধুরী—উৎসব দিনের সেই uero তিনি কি এখনো এখানে আছেন ? Sዓm ইচ্ছা ছিল তাকে এক দিন ডাকি, কিন্তু এই আপিলটা হাতে আসায় তা পারি নি । He is a fine fellow and has got mice manners.” এই কথায় রাজকুমারীর মুখ ঈমং রক্তিম হইয়া উঠিল। কিন্তু সে লজ্জা-রাগ অপর কেহই লক্ষ্য করিল না ; সকলেই তখন নিজেকে লইয়া ব্যস্ত। রাজা হাতের পেয়ালা হইতে সন্তপণে বেশ সুন্দর কায়দার সহিত একটুখানি চ মুখে গ্রহণ করিলেন। ইংরাজী দস্তুরে পেয়ালার চামচখান। এ সময় এক রকম অনাবশ্যক শোভাস্বরূপ। চিনি ঘাটার কাজে লাগা ছাড়া ইহা চা-পানের কাজে লাগে না । তাহার পর ম্যাজিষ্ট্রেটের কথার উত্তরে কহিলেন, - “ডাক্তার এখনো এখানেই আছেন ; মকদ্দমায় নিস্কৃতি লাভ ক’রে তিনি আপনাকে সৰ্ব্বাস্ত:করণে ধন্যবাদ প্রদান করেছেন।” ম্যাজিষ্ট্রেট বলিলেন, “এমন পচা মকদ্দমা আমার জীবনে আসে নাই! কি ক’রে যে মুন্সেফ বাদীকে জিতিয়ে দিলেন ।” রাজা আর দুই এক ঢোক চা গলাধঃকরণ করিয়া কহিলেন, “কিন্তু সুজন রায়ের দল আপনার নামে নানা কথা রচনা করবে।”

  • Indeed ! কিন্তু সে ভয়ে ত আমি দ্যান্থবিচার পরিত্যাগ করতে পারিনে!”

জ্যোতিৰ্ম্মল্পীর মুখকাস্তি একটি অপ্রাকৃত জ্যোতিঃ-সৌন্দর্য্যে উজ্জল হইয়া উঠিল। সে গম্ভীর ভাবে কহিল, “আপনার এই ন্যায়পরতা জগতের অস্থিমজ্জায় স্থান পাকু, আমি সৰ্ব্বাস্ত;করণে ইহাই প্রার্থনা করি " জ্যোতিৰ্ম্মল্পীর বলোচিত সরল উৎসাহে মুগ্ধ হইয়া ক্লাউড়েন সাহেব তাহার পিঠে হাত রাখিয়া অাদর করিয়া কহিলেন,— “Thank you dear girl” of Hi otola foot চায়ের পেয়ালাটা বাড়াইয়া দিলেন । মেমসাহেব স্বামীর শূন্ত পেম্বালাটি পুর্ণ করিয়া দিয়া রাজাকে কহিলেন,— “আর এক পেয়াল রাজাবাহাদুর ?” রাজার পেয়ালা তখন নিঃশেষ হইয়া আসিয়াছিল—তিনি মেমসাহেবের অনুরোধ অগ্রাহ করিলেন না । তাহাকে চা ঢালিয়া দিয়া ম্যাজিষ্ট্রেট-পত্না জ্যোতিৰ্ম্ময়াকে বলিলেন,— “তোমার আধ পেম্বাল চা-ও ত এখনো শেষ হোল না, আর কখনো যে শেষ হবে না, তাও জানি -