পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বপ্নবাণী বলিলেন, “রাণি, জনজ একটু সকাল সকল বাড়ী ফিরতে চাই ।” জ্যোতিৰ্ম্ময়ী একবার আকাশের দিকে চাহিল। পশ্চিমে নদীর পরপারে স্বর্য্যদেবের ধ্যানমগ্ন প্রশাস্তু তপস্বী-মূৰ্ত্তি, তৎবিকীর্ণ অালোকে দিগ্বদিগন্ত লালে লালে সমুজ্জল ; নদীর জল বিদ্যুৎকণীয় প্রবাহিত । জ্যোতিৰ্ম্ময়ী ধীরে ধীরে একটি দীর্ঘ-নিশ্বাস ত্যাগ করিল, কে জানে কেন ! মেমসাহেব ক্ষুঃমনে বলিলেন, “এখনি যাবেন রাজা-সাহেব ?” রাজা অীৰার ঘড়ি দেখিয়া বলিলেন, “কাল কলকাতায় যেতে হবে মিসেস ক্লাউডেন, নইলে এমন সঙ্গ ত্যাগ করতে চাই এখনি !” ম্যাজিষ্ট্রেট-দম্পতি উভয়েই গাড়ী পর্য্যন্ত আসিয়া র্তাহীদের বিদায় দিলেন । মেমসাহেব জ্যোতিশ্মীকে পুনরায় সস্নেহে আলিঙ্গনপূর্বক চুম্বন করিলেন । এবার রাজা নিজে মোটারের কল ধরিলেন। শরতের বেলা—স্বৰ্য্য এখন দিগন্তনিম্নে, তবুও সায়াহগগন উজ্জল আলোকে দাপ্তিমান ! বিলাতের twilight f# ta? ##sề ? ম্যাজিষ্ট্রেটের কম্পাউণ্ড ছাড়াইয়া রাজা ঘড়ি দেখিয়া বলিলেন, “মিনিট পাচেক আমরা আস্তে যেতে পারি।” নদীর ধার দিয়া তাহারা ধীরে ধীরে চলিলেন । ওপারে কাশফুলের কি সুন্দর শোভা ! মাঝে মাঝে বাতাস শেফালি ফুলের গন্ধ বহন করিয়া আনিতে লাগিল। এক জন মালী কেতকীফুল মাথায় লইয়া মন্দিরের দিকে যাইতেছিল, তাহার সৌরভ পথে ছড়াইয়া দিয়া গেল । নদীর ধারে একটি বটগাছের তলায় একখানা সিন্দুরলেপিত প্রস্তরমূৰ্ত্তি । এ মুঞ্জি কাহার স্থাপনা, কেহ জানে না ; পথিকজন অন্নপুর্ণার মূৰ্ত্তি ৰশিৰা ইহাকে প্রণাম করিয়া যায়ণ এই প্রস্তর-সন্নিধানে বসিয়া এক জন ভিখারী থঞ্জনী ৰাজাইয়া গান করিতেছিল,— মঙ্গল-শঙ্খ বাজে ঘরে ঘরে, এলেন আনন্দময়ী ভুবন আলো ক’রে । আজি আলোকে ঝলকে আনন্দ,— বহে কুমুমে মধুর গন্ধ, উথলে দিকে দিকে গীতিছন্দ– বরুষ দিবস পরে । রাজা গাড়ী থামাইয়া চাপরাশিকে দিয়া তাঁহাকে পারিতোষিক পাঠাইলেন। ኃዓ¢ গানটি রাজারই রচিত। প্রথম যে অশ্বিনে র্তাহার কুই কন্যা শ্বশুরগুছ হইতে পিতৃভবনে আসিয়াছিল, সেই সময় তিনি এই গানটি রচনা করেন। পুরাতন কত স্মৃতি ইহার সহিত জড়িত, তাহার চক্ষু জল-পরিপুর্ণ হইরা উঠিল । জ্যোতিৰ্ম্ময়ী পাশ হইতে তাহা দেখিতে পাইল না । গানটি শুনিতে শুনিতে সে বলিয়া উঠিল, “আশ্বিন মাস পড়েছে বুঝি “ রাজা চক্ষুর জল চক্ষেই ধরিয়া বলিলেন, “রাণীর কাছে সে খবর পৌছয় নি এখনও 7 মাস যে শেষ হ’তে চ'ল্লো ।” রাণী হাসিয়া পিতাকে অাদরের বাহুপ।শে জড়াইল, রাজ্য পুরাতন ঃখ ভুলিয়া গেলেন। চাপরাশি ফিরিয়া অসিলে এবার তিনি সতেজে মোটার চালাইয়া দিলেন । সপ্তম পরিচ্ছেদ শু্যামাচরণের কনিষ্ঠ কন্যা অণুভার সহিত বর্ষধিক কাল হাসির জ্যেষ্ঠ ভ্রাত। নরেন্দ্রের বিবাহ ঠিক হষ্টয়া আছে,–কিন্তু কাৰ্য্য-সমাধার জন্ত কন্যাকৰ্ত্তার নিকট হইতে এ পর্য্যস্ত কোন দিনই তাগিদ অাসে নাই। বরপক্ষ (অর্থাৎ মুখোপাধ্যায়-গৃহিণী, ) তlহাতে সস্তুষ্ট বই অসন্তুষ্ট নহেন, মনে করিতেছেন, ‘সে ভালই, হাসির বিবাহট আগে হুইয়া বাকু না।’ অণুভা ষোড়শী, অথচ পিতা কেন যে এ সম্বন্ধে নীরব, তাহ পাঠক অবগত আছেন। তিনি মনে আচিয়াছিলেন—আরও দুই বৎসর কল এজন্য র্তাহাকে অপেক্ষা করিতে হইবে, কারণ শরৎ বিলাত হইতে ফিরিয়া না অাদিলে তিনি বিবাহের ব্যয়-ভার বহনে সক্ষম হইবেন না । কিন্তু মানবের এবং দেবতার সঙ্কল্প যে এক নহে, ইহা পুরাণ-প্রবচন। রাজভবনে শরতের প্রতিষ্ঠা দেখিয়া শ্যামাচরণ হাওয়ার গতি বুঝিয়া লইয়াছেন। রাজার নিকট এমন চিঠি আসে না, যাহার মধ্যে শরতের বিদ্যাবুদ্ধির প্রশংসা না থাকে । রাজকন্যার মাল্যদানবিবরণও ইতিমধ্যে বিচিত্র ছন্দোবন্ধে তাহার কর্ণগোচর হইয়াছে। অতএব, তাহার পুত্রতুল্য প্রিয় ভাগিনেয় যে অবিলম্বে রাজা অতুলেশ্বরের জামাতা হইবে, ইহাতে তিনি সংশয়-রহিতচিত্ত। এই বিশ্বাসে তাহার হৃদয়-মন আনন্দে পরিপূর্ণ হইয়া উঠিয়াছে। যে শক্তিরূপ ঘটকপুরুষ এইরূপ অসম্ভাবিত যোগাযোগ ঘটাইয়া, সংসারের কণ্টক্সস্কুল