পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৭৬ পথ পরিষ্কার করিয়া দেন, গু মাচরণের পজিটিভিজম’ আপনার অজ্ঞান্তে তাঙ্কণর দিকে মস্তক অবনত করিল । এত দিনে অণুভার পিতা বিবাহের কথা ভাবিবার অবসর পাইলেন । এত দিনের পর কন্যার দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া সহসা আবিষ্কার করিলেন যে, তাষ্টত, অণুভ বে বড় হইয়া উঠিয়াছে ! ইগর পর একদিন গাঙ্গুলি মহাশয় বেশ থোস মেজাজে মনের প্রস্তাব মুথে প্রকাশ করিবার জন্ত মুখোপাধ্যায়-ভবনে আসিয়া উপস্থিত হষ্টলেন । নরেন্দ্র কলিকাতায় থাকে না । ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করিবার পরই সে বোম্বাই সহরে টাটা মিলে কাজ লইয়াছে। এখন নরেন্দ্র সেখানে হেড ওভারসিয়ার ;–কিন্তু কর্তৃপক্ষগণ তাহার কার্য্যদক্ষতায় সন্তুষ্ট হইয়া আশ্বাস দিয়াছেন যে, আগামা জানুয়ারীতেই মোটা বেতনে আদিষ্টাণ্ট ম্যানেজারের পদে তাহাকে উন্নীত করিবেন । আগামী আশ্বিনে ১•১২ দিনের ছুটিতে যখন নরেন্দ্র বাড়ী আসিবে – খুব সম্ভব তখনই এই নিয়োগপত্র সঙ্গে আনিতে পারিবে, এইরূপই সকলে অtশা করিতেছেন । কৃষ্ণলাল মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রীই বাড়ীর প্রকৃত কত্রী। র্তাহার ইচ্ছাতেই মুখুয্যে-সংসার কেন্দ্রে ধৃত এবং কক্ষে ঘুর্ণমান । দিদিমা আপনার তপজপ, পুরাণাদি পাঠ এবং হাসিকে লইয়াই থাকেন, সংসারের কোন কথায় পারত পক্ষে যোগ দেন না । আমার কৰ্ত্তা, এ বাড়ীর বরেণ্য যিনি,~~প্রয়োজনে মাত্র তিনি শরণ্য - অন্ত সময় সাক্ষিস্বরূপ নগণ্য মধ্যে 呕日 তবে বাহিরের লোকে ঘরের কথা আতশত কি জানে ; শ্যামাচরণ সৰ্ব্বাগ্রে গেলেন দিদিমার নিকট, হিন্দু-বাড়ীর প্রথানুসারে কত্রীর সম্মান সৰ্ব্বtগ্রে র্তtহারই ত প্রাপ্য। দিদিমা তখন প্রাতঃস্বানান্তে —তপ জপ শেষ করিয়া নিরামিষ ভেসেলে যাইবার উদ্যোগ কবি হুড়িলেন । র্তাহার হাতে জলেভেজন বাদাম পেস্তার একটি বাটি,--আর তাহার দাসীর হাতে তালের মাড়ীসহ একখানা থাল,— উভরে দালান পার হইয়। নীচের সিড়ির দিকে অগ্রসর হইতেছিলেন।-ভদ্র মাস আরম্ভ হইতেই দিদিমার রান্নাঘরে সপ্তাহে অন্ততঃ দুই তিন দিনও তালবড়া, তাল-ক্ষীরাদি হয় । কেন না ছানার মিষ্টান্ন হইতেও দিদিমার হাতের তাল-মিষ্টান্ন হাসি অধিক তারিফ করিয়া থায় । সহস জুতার শব্দ কানে গেল,-সেই দিকে স্বর্ণকুমারী দেবীর গ্রন্থাবলী চাহিয়া দালান-প্রান্তে শু্যামাচরণকে দিদিমা দেখিতে পাইলেন, তিনি দাসীকে তখন রান্নাঘরে যাইতে আদেশ করিয়া তাহার অপেক্ষীয় দালানেই দাড়াইলেন । শু্যামাচরণ নিকটে অtসিয়া প্রণাম করিলে —তিনি আশীৰ্ব্বাদপূৰ্ব্বক কছিলেন,— "এত সকালে যে বাবা ” শুমাচরণ হস্তমুখে বলিলেন,— "একটু কাজে এসেছি মা !” দিদিমা অনুমান করিয়া লইলেন, কি কাজ । তিনিও হাস্তমুখে বলিলেন, “এস বাবা,—বসবে এস ৷” এই বলিয়া দিদিমা তাহাকে সঙ্গে লইয়া পুনরায় নিজের গৃহ-বায়ান্দায় আসিয়ু পৌছিলেন । এই বারানদী-ঘর বাড়ীর মধ্যে সৰ্ব্বাপেক্ষ বড় দালান । ভোজপর্কের সময় সৰ্ব্বাগ্রে এখানে আসন পড়ে । কিন্তু অন্ত সময় ষ্টচাই দিদিমার বৈঠকখান । মুখুয্যেবাড়ীর কত্রাপদবাচ্য পরমপূজ্য মহিলার এই ড্রয়িং রুমের সাজসজ্জা দেখিলে কোন ইংরাজ মহিলা সম্ভবতঃ চমকিয় উঠবেন । এই দালানের সৰ্ব্বপ্রধান আসবাব একখানিমাত্র নাতিবৃহৎ পরীবাহন তক্তাপোষ,--ইহাই দিদিমার রাজ এবং অতিথি-সিংহাসন । ইহা ছাড়া আরও যে “দুইটি গৃহদ্রব্য এখানে দেখিতে পাওয়া যায়,—তাহা হইতেছে—হাসির একটি সেতার এবং বহির ক্ষুদ্র সেলফ। এ দুইটির কোনটিই মেজিয়া ভুক্ত নহে, দুইটিই দেয়ালে অলিম্বিত । হাসি যখন এখানে আসে—তখন দিদিমার ইচ্ছামত, কখনও বা সেতার বাজাইয়া, কখনও বা কোন বই পড়িয়া তাহাকে শুনায় । দিদিমার পরী-সিংহাসনে বিছাইবার জন্য নিজের হাতে হাসি একখানা পশমের গালিচা ও দুইখানা রেশমের কুসন প্রস্তুত করিয়া দিয়াছে। কিন্তু অধিকাংশ সময়েই এ সকল দ্রব্য পুঞ্জীকৃত অবস্থাতে তক্তাপ্রাস্তের শোভা বৰ্দ্ধন করে । "ছি", এত বাহারে জিনিষ ব্যবহার করা তোর বুড় দিদিমার কি সাজে লা!” হাসি উপদ্রব করিলে দিদিমা এই শাস্তিবাক্যে তাহীকে প্রবোধ মানাইতে চাহেন।--কিন্তু হাসি ত এ কথা মানিবার পাত্র নহে, সে যখন এখানে উপস্থিত থাকে, তখন গালচে এবং বালিশগুলা একটু আরামে হাত পা ছড়াইয়া বাচে,—কিন্তু সে চলিয়৷ গেলেই আবার তাহারা পূৰ্ব্বাবস্থা প্রাপ্ত হয় । অতিথি অভ্যাগত কেহ আসিলে, যখন দিদিমা র্তাহীর সন্মানার্থ নিজের হাতেই তক্তার উপর গালিচ বিছাইয়া দেন—তখন সুদশার পরিবর্তে