পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বপ্নবাণী আহার-নিদ্রা বন্ধ হয়। এইরূপ কাজের লোককে কাজে পাইয়া কৃষ্ণলাল কিন্তু একেবাৱেই অকেজে হইয়া পড়িয়াছেন। চেকের ফরম্ পর্য্যন্ত তিনি নিজে লেখেন না, সই করিয়া দিয়াই নিশ্চিন্ত হন। বাবুকে বিষয়-কৰ্ম্মে ‘ওয়াকিভ’ করিতে হেমের পক্ষ হইতে কিছুমাত্র ক্রটি নাই। কিন্তু তাহার দর্শনচিন্তার নিগড়বtধ মনের মধ্যে বৈষয়িক চিন্তাকে ঠেলিয়া প্রবেশ্ন করান একরূপ দুঃসাধ্য ব্যাপাব । ব্যাঙ্কে কত টাকা আছে না আছে,- ভাড়াটে বাড়ীর কোনটার ভাড়া আছে,কোনটা বা খালি, ধীর দেওয়া টাকার মধ্যে কোনস্থলে কত সুদ বাকী পড়িল - কখন বা কোনটার নালিসের সময় আসিল,--এই সকল খবর জানাইয়া নানা কাৰ্য্য সম্বন্ধে আদেশ ও উপদেশ লইবার জন্য খাতা-পত্র এবং চিঠি-পত্ৰাদিসহ যথাসময়ে হেম প্রতিদিন দ্বিপ্রহরের পর তাহার নিকট আসিয়া হাজির হয় – কিন্তু কোনদিনই প্রায় পুত্থাঃপুঙ্খরূপে কোন বিষয় শুনিয়া কিংকৰ্ত্তব্য ঠিক করিবার অবকাশ তাহার ঘটে না । কোন বিষয়ের আধখানা পৰ্য্যন্ত না শুনিয়াই—অধীরচিত্তে কৃষ্ণলাল বলিয় উঠেন, “বুঝেছি বুঝেছি, আর বলতে হবে না,-আমার আদেশ এবং উপদেশ এই সে এ সম্বন্ধে তোমার বুদ্ধিতে যা ভাল মনে হয়, তাই করে ।” হেম হতাশভাবে গোপে তা দিতে দিতে,--খাতাপত্রের তাড়াগুলা বহিয়া দপ্তরখানায় পুনঃ প্রবেশ করে । গোপে তা দেওয়াটাই হেমের জীবনের মধ্যে একটা বদ অভ্যাস -ইহাই তাহাকে মুখে উত্তেজিত এবং =থে সাত্বনা প্রদান করে । কারণ, মদ্যপান বা তামাকু সেবনে পৰ্য্যন্ত সে অনভ্যস্ত । ক্ষপনও কোন জুৰ্দ্দিনে বা দুঃসময়ে সহসা যখন কৰ্ত্তাবাবুর মুপ্তি ভাঙ্গিয়া যায়, তখন হেমের আরও বিপদ । এই চেতনারূপ আধিভৌতিক ঘটনাকে দুঃস্বপ্ন-বোধে, ইহা হইতে নিস্কৃতিলাভের জন্য তখন সমধিক ব্যাকুলভাবে তিনি হেমের শরণাপন্ন হন। যেন হেমই সেই ঘটনার সংঘটক—এবং ইহার প্রতিবিধানও তাহার হস্তে। আজও গৃহিণীর নিকট কৰ্ত্তব্যভঙ্গের অপরাধে অভিযুক্ত হইয়া তিনি দায়ী করিলেন-হেমকে ! হেম আসিবামাত্র চাৎকার-ভৎসনায় তাহাকে কহিলেন, “কি রকম এ কাণ্ড-কারখানা তোমার হে ? কত দিন থেকে বলছি, বিজনকুমারের সঙ্গে হাসির বিবাহটা ঠিক ক’রে ফেলে,—তা করছ না কেন বল ত ? সে দিকে ত তোমার একবিন্দু চেষ্টাও দেখতে পাইনে ৷” ՖՆ-Տ হেম হাসিতে লাগিল। বাবুর ভংগনায় কেহ রাগ করে না,—তাহ নিৰ্ব্বিষ ; বরঞ্চ তাহার মধুটুকুই লোকে উপভোগ করে । কৃষ্ণলাল বলিলেন, "তুমি ত হেসে নিশ্চিন্ত—আর এ দিকে যে আমার প্রাণ ওষ্ঠীগত ।” হেম আবার হাসিয়া কহিল,—“আমি ইতিমধ্যে দুই তিন দিন সেখানে গিয়েছিলুম,— কিন্তু রায়মশায়ের দেখা পাই নি – শুনলুম, তিনি বাড়ী নেই। আবার না হয় আজ খবর নেব।” “ও সব ওজরে আমি ভুলিনে, তোমার উপর এতটুকুও বিশ্বাস আর আমার নেই । খবর নিলেই বুঝি কাৰ্য্যসিদ্ধি হ’য়ে গেল ! শরীরটা দিন দিন যেমন সূক্ষ হচ্ছে, বুদ্ধিটাও তেমনি স্বক্ষতর দাড়াচ্ছে। অাজই চল,—এই মুহূর্বে,—আমার সঙ্গে তোমায় এখনি সেখানে বেতে হবে- বুঝলে ত ?” “আজ্ঞে তাই যাব । কিন্তু এখন চ সকলের আহারের সময় হ’য়ে এল—এখন ১১টা বেণ, এখন সেখানে গিয়ে হয় ত শুনবেন— বাবু খেতে বসেছেন,—এখন দেথাই হবে না ।” “তা নাই হোল দেখা ! সে জন্ত ত তোমাকে ভাবতে বলি নি ? "তবে চলুন,—আমি প্রস্তুত আছি।” কৃষ্ণলাল গাড়ী প্রস্তুত করিতে বলিয়। শুনিলেশ, —কোচম্যান হাজির নাই, সে বাসাশ্ন থাইতে গিয়াছে ! এ সংবাদে একটু আরমিও বোধ করিলেন , এখনি যাইবেন বলিয়া ফেলিয়া পরমুহূৰ্ত্তেষ্ট অমৃতপ্ত হইয়া উঠিয়াছিলেন। কিন্তু এ যাত্রী তবুও রক্ষা পাইলেন না, অন্তঃপুরে আহারে যাইবtযাত্র আবার এক দফায় গৃহিণীর তাড়া খাইয়া বিকালবেল অগত্য কোমর বাধিয়া সেনাপতিরূপে রপযাত্রায় নির্গত হইয়া পড়িলেন । তাহা ছাড়া আর গত্যন্তর কি ? গাড়ীতে বসিয়া সারা পথটা মনে মনে প্রার্থনী করিতে লাগিলেন—আজিও যেন সুজন রায় বাড়ী না থাকেন। গৃহিণীর নিকট কৈফিয়ৎ দিতে পারিলেই ত তাহার কৰ্ত্তব্যের শেষ ।--কিন্তু হায় রে । এমনি অদৃষ্ট ! খোলা ল্যাণ্ডোখান রাষ্ট্র-ভবনের কম্পাউণ্ডে প্রবেশ করিতে না করিতে রায় মহ+ শয়ের জীর্ণ দেহ শীর্ণ মুখ তাহার নেত্রগোচর হইল । স্বজন রায় তখন ছাতে রাস্তা-অভিমুখী হইয়া দাড়াইয়ীছিলেন, যেন কাহারও আগমন-প্রতীক্ষা করিতেছিলেন। কৃষ্ণলালকে দেখিয়া তিনি তাড়াতাড়ি নাচে নামিয়া আসিলেন । “এই ধে দাদা, অসিতে