পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বপ্নবাণী আমাদের মত আনাড়িরা এইটুকু বোঝে যে, বলাতেও ত মুখ একটা আছে ” “আমি বলি, ওতে মুখবোধ না হ’য়ে দুঃখবোধ হওয়াই উচিত। বেশী কথার দরকার কি—কাজেই যোগ্যতা দেখাও না ?” . হেম এ কথার সত্যতাটা মনে মনে বুঝিয়া গোপে তা দিতে প্রবৃত্ত হইল । সুজন বলিলেন, “আমি ত আগেই বলেছি, যাতে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শ্রম-শিল্পের বুদ্ধি হয়, এই সব দিকে দৃষ্টি দেওয়াই আমাদের এখন প্রধান কৰ্ত্তব্য। আর আমার সাধ্যমত শক্তি আমি এই দিকে অর্পণ করেছি। একটি চা-বাগানে আমি সহস্ৰ সহস্র মুদ্র ঢালছি—তবুও আশানুরূপ শ্ৰীবৃদ্ধি করতে পারছিনে। এ সব কাৰ্য্য ব্যাঙ্কের সাহায্য ব্যতীত চলতে পারে না । কিন্তু পলব কি দুঃখের কথা, এক জন এক বস্ত্র ইংরাজকেও তার ষেরূপ সাহায্য করে, আমাদের মত লোককে তার শতাংশের একাংশও করে না ! আমার চা-ব্যাঙ্কের নাম শুনেছ বোধ হয় ? দাদা, বড় দুঃখে আমি ঐ ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠা করেছি। কিন্তু দেশের লোকই বা ক’জন এ সম্বন্ধে অামাকে সাহায্য করছেন ?” ঙ্গেম বলিল, “কয়েকবার দেশী ব্যাঙ্ক ফেল হ’য়েছে কি না, তাই প্রথমটা সবাই ভয় পায়। দিন কতক চালিয়ে যদি সুনাম রক্ষা করতে পাবেন—তখন আপন হ’তেই কত লোক যেচে এসে আপনার ব্যাঙ্কে টাকা রাখবে । বাস্তবিক এরকম ব্যাঙ্ক একটার বড়ই অভাব আমাদের দেশে । এ সম্বন্ধে অামি ও ভুক্তভোগী। রাণীগঞ্জে কৰ্ত্ত মহাশয়ের একটা সম্পত্তি আছে – জানেন ত ? তাতে মাঝে মাঝে কয়লার টুকরাও পাওয়া যাচ্ছে। লাখ চার টাকা হ’লেও আমরা কাজ আরম্ভ করতে পারি, কিন্তু অনেক চেষ্টাতেও কোন ব্যাঙ্কারকে হাত করতে পারছিনে। তারা সকলেই একবাক্যে জয়েণ্ট ষ্টক কোম্পানী খুলে কাজ আরম্ভ করতে বলে –আসল কথা, কৃতকাৰ্য্য হ’লে তখন এরা টাকা দিবে।” স্বজন রায়ের লোভ-রসন লালারিত হইয়া উঠিল। রাজা অতুলেশ্বরের রাণীগঞ্জে সম্পত্তি আছে, আর র্তাহার নাই, এ হীনতাটা তাহীকে বড়ই আঘাত দেয়। এই অভাব দূর করিবার জন্ত রাণীগঞ্জে ছ’ একবার জমী দেখিতেও তিনি গিয়াছিলেন । কৃষ্ণলালের জমাট তাহার বড়ই পছন্দ হইয়াছিল। কিন্তু সন্ধান লইয়া জানিয়াছিলেন—৪ জমী বিক্রয় হইবে না। হেমের কথার উত্তরে তিনি কহিলেন, “এ স্থলে কোম্পানী খোলার অtমি ত সার্থকতা ՖԵՑ বিশেষ কিছু দেখিনে। জমী তোমাদের, অথচ লাভ যা হবে—তা পঞ্চভূতে মিলে খাবে। তার চেয়ে আমাকে যদি lease দাও ত আমি খনন ব্যয়ভার সব বহন করব— তার পর লাভ যখন হবে, তখন খরচটা উঠিয়ে নিয়ে আধাআধি আমরা ভাগ নেব ।” কৃষ্ণলাল বলিলেন, “বাঃ, সে ত বেশ কথা— জমীটী ত এখন বলতে গেলে পড়েই আছে, তার আয় অতি সীমান্য । এ রকম সৰ্বে দিতে আমি এখনি প্রস্তুত ; কি বল হে হেম ?” হেম বলিল, “এসব কথার ত এক মুহূর্বে উত্তর দেওয়া যায় না ; ভেবে চিন্তে পরে উত্তর দেওয়াই ঠিক।” মৃজন রায় আর অধিক গরজ দেখান বিবেচনাসঙ্গত জ্ঞান করিলেন না—কহিলেন,—“হ্যা, হেম ঠিক কথাই বলছেন। তবে আমার বলা রইল— জমাট। যদি বিক্রয় করতে চান বা lease দিতে প্রস্তুত থাকেন ত আমাকে জানাবেন ; আপনার সুবিধামত সৰ্ত্তেই আমি বন্দোবস্ত ক’রে নেব।” কৃষ্ণলাল আবার হেমের দিকে চাহিলেন। স্বজন রায় হাসিয়া বলিলেন, “হেমই বুঝি দাদার হৰ্ত্ত কৰ্ত্ত বিধাতা !” কৃষ্ণলাল বলিলেন, “ভাগ্যিস ওকে পেয়েছি ভাই, ধড়ে প্রাণ অাছে, নইলে যে আমার কি দশ হ’ত ; মনে করতেও আতঙ্ক উপস্থিত হয় ।” স্বজন রাম মনে মনে বলিলেন, তবেই বিষয় রেখেছ তুমি।” আত্মবৎ মন্ততে জগৎ ! স্বয়ং ধৰ্ম্মরাজ আসিয়া তাহার কৰ্ম্মচারী হইলেও স্বজন র্তাহাকে পরিপূর্ণ বিশ্বাস করিতে পারিতেন না । হেম বলিল, “দর্শনতত্ত্ব-চিন্তাতেই উনি সমগ্র আপনাকে ঢেলে দিয়েছেন ; আমরা যদি তা থেকে এক মুহূৰ্ত্তও ওঁকে এ দিকে টানি, তা হ’লেও উনি বিরক্ত বোধ করেন ।” সুজন রায় হাসিয়া বলিলেন, “হা, শুনেছি বটে দাদা কি একটা বই লিখছেন,—এখনও শেষ হয় f?” কৃষ্ণলাল বলিলেন, “জটিল তত্ব ভাই, সাধারণের বোধগম্য ক’রে লিথতে একটু সময় চাই । জীবাত্মা ও পরমাত্মার একাত্মবাদই আমার প্রতিপাদ্য বিষয়। ঋষিগণ ওঁ শব্দকে বীজমন্ত্ৰ ক’রে যে ইহাই স্বীকার ক’রে গেছেন, এইটে আমি বোঝাতে চাই।” সুজন রায় নেত্র বিস্ফারিত করিয়া বলিলেন,— “দাদা—তুমি এই মর জগতে অমর কীৰ্ত্তি রেখে স্বাবে ff