পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বপ্নবাণী ত আমি বিষম্বকৰ্ম্ম কিছুই করতে পারিনে। আর সে আমার আমমোক্তারনামার বলে সব কাজই করতে পারে।” সুজন রায় অমুনস্থের স্বরে কহিলেন, “দেখ ভাই, তোমাকে স্পষ্ট ক’রে বলি—যদি তোমার এই সম্পত্তিটা পাই, তবেই আমার উদ্ধার, নচেৎ আমাকে সৰ্ব্বস্বাস্ত হ’তে হবে । তোমার দায়িত্ব নিজে গ্রহণ করার শক্তিও আমার থাকবে না, এটাও বুঝে।” এতক্ষণ মুঞ্জন রায়ের বাক্যে প্রকাশিত সাধুতার পরিচয়ে কৃষ্ণলালের মন ভক্তি-আর্দ্র হইয়া উঠিয়াছিল, কিন্তু এই কথায় রায় বাহাদুরের মনের আসল রূপ যেন ধরা পড়িল ; কৃষ্ণলালের বিশ্বাসে সহসা সন্দেহ ছিদ্র প্রবেশ করিবামাত্র মুজনের অনুরোধ অনুনয় আর তাহার হৃদর স্পর্শ করিল না, তিনি অটল ভাবেই কহিলেন, “আমি ত বল্লেম ভাই, হেম যা করেন, তার বিরুদ্ধে আমি কিছুই করতে পারিমে।” স্বজন জানিতেন, হেম ইহাতে আপত্তি করিবেন; যদি এখনি কাজ বাগাইতে পারেন ত ভাল, নচেৎ আশা নাই । এই ভাবিয়া তিনি বায়নীনামা লিথিয়া পৰ্য্যন্ত সঙ্গে অনিয়াছিলেন । কিন্তু কৃষ্ণলালের অটল ব্যবহারে তাহার ধৈর্যাচুতি ঘটিল ; তাহার ভিতরের সর্প ফণী বাহির করিয়া কহিল, “স্বপছ বেশ । সুজন রায় স্বজনের সঙ্গে সুজন বোলে যে দুর্জনের সঙ্গে দুর্জন হ'তে জীনে না, তা মনে ক’রো না । তোমার দুৰ্ব্ব,দ্ধিতার ফলে দেখে তোমার ঘরের কড়িকাঠখানাও থাকবে না ।” স্বজন রায় চলিয়া গেলেন, তাহীর ক্রোধে উদগীরিত গরলে কৃষ্ণলালের শাদা মন ঘৃণায় কালেt হইয়া উঠিল । উঃ, এই কালসৰ্পকে তিনি কি না দেবতা মনে করিতেছিলেন । মোহমুক্ত হইয়া মনে মনে তিনি ভগবানকে ধন্যবাদ প্রদান করিলেন । হেম থাকিতে সুজন তাহার সর্বনাশ করিতে পারবেন না, ইহাতে তিনি বেশ আশ্বস্ত রহিলেন । হেমের প্রতি এইরূপ বিশ্বাস র্তাহার বৃথা হইল না ! ব্যাঙ্ক যে ফেল হইবে, বিশ্বস্তস্থত্রে আগেই হেম সে খবর পাইয়াছিলেন এবং এজন্ত যাহাতে কৃষ্ণলালকে কোন ক্ষতি সহ করিতে না হয়, শু্যামাচরণ গাঙ্গুলির সহিত পরামর্শ করিয়া তাহায়ই উপায় অবলম্বনে তিনি সচেষ্ট ছিলেন । রাণীগঞ্জের সম্পত্তি অতুলেশ্বরকে lease দিবীর পরামর্শ তিনিই দান করেন । এই জন্তই শু্যামাচরণ রাজাকে কলিকাতা আসিতে লেখেন । ব্যাঙ্কের কোন দায়িত্ব কৃষ্ণলালের উপর আসিবার পূর্বেই তাহার এ সম্পত্তি হস্তান্তর Skሙማት করা উচিত বলিয়া তিনি মনে করিলেন। বাড়ীঘর প্রভৃতি অন্তান্ত সম্পত্তি কৃষ্ণলালের পিতা পৌত্রদিগের নামে রাশিয়া গিয়াছিলেন । সুতরাং কৃষ্ণলালকে ডিরেক্টারের দায়িত্বে লিপ্ত করিয়া মকৰ্দমায় আনিলেও যে স্বজন রায় তাহার বিশেয ক্ষতি করিতে পরিবেন না,--বরঞ্চ এরূপ মকৰ্দমায় তাহার নিজের প্রতারণাজাল প্রকাশিত হইয়া পড়িবে, উকীল ব্যারিষ্টারগণ একবাক্যে কৃষ্ণলালকে এইরূপ আশ্বাস প্রদান করিলেন । দশম পরিচ্ছেদ রাজা অতুলেশ্বরের কলিকাতা নিবাস মাণিকতলায়। ইহা একটি বিচিত্র উদ্যান-ভবন । বাড়ীর চারিদিকেই সবুজ ঘাসের ময়দান ; আশেপাশে ফুলের কেয়ারি ; স্থানে স্থানে প্রস্তর-মূৰ্ত্তির বিচিত্র শোভা, ফোয়ারীর উৎস এবং যত্রতজ বসিবার আসন । উস্তানের পশ্চিমপ্রান্তে স্বচ্ছসলিল সুবিশাল একটি হ্রদ ; জ্যোতিৰ্ম্মী ইহার নামকরণ করিয়াছেন "কিন্নরহুদ’ । এই নামাকুযায়ী এ হ্রদে কিন্নরবাহন জলিবোট একখানি স্থানলাভ করিয়াছে । উদ্যানের মধ্যস্থলে রাজপ্রাসাদ ; আর উদ্যামপ্রান্তে একটি ছোট দ্বিতল ভবনে বাস করেন ম্যানেজার। এতৎ-সংলগ্ন একটি স্বতন্ত্র একতল গৃহ ম্যানেজারের অফিস। রাজা আসিয়াছেন ; দ্বিপ্রহরের পর হইতে আজ আফিসে লোকসমাগম চলিতেছে। কৃষ্ণলালের রাণীগঞ্জের সম্পত্তির লেখাপড়া হইয়া গেল। কার্য্য সমাপ্তিতে হেম নিশ্চিন্ত মনে কাগজের তাড়া লইয়া উকীলের সহিত গাড়ীতে উঠিলেন, রাজা ও শুীমাচয়ণ প্রাসাদ-অভিমুখে যাত্রা করিলেন । অপরাহুকাল—আশ্বিনের দিবসাস্তে কনক রৌদ্র তরুণীর্ষ হইতে শীর্ধাস্তরে লুকোচুরি খেলিতে খেলিতে শিল্পরদে বাপাইয়া পড়িতেছিল। ইচ্ছা-ডুব স তারে হ্রদপারে যাইবে । কিন্তু কিন্নুরনৌকার দাড়াইভ বারি-কণিকাপুঞ্জ পথিমধ্যে সহসা তাহাকে গ্রেপ্তার করিয়া ফেলিয়া সকৌতুকে তাহায় কনক কাস্তি রজত-উচ্ছ্বাসে ভাসাইয়া তুলিতেছিল। নৌকা বাহিত হইতেছিল আজি কাহার হস্তে ? কে উহার, মানবী বা কিন্নরী ? অণুভা ধরিয়াছিল হাল আর দাড় বাহিতেছিল হাসি । হাসি প্রায়ই এই উস্তান-ভবনে বেড়াইতে আসে