পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sమe রেশমী কাপড়, একটু ফেট৷ চন্দনও ত তার পরতে হবে।” শচীন অবশিষ্ট পাস্তুয়াটা মুখে পূরিয়া দিয়া বলিল, “দাদা কক্ষণে ও সব পরবে না।” “ন, পরবে না । তুমি সবজান্ত!! দাদা না পরে তোমাকে পরিয়ে ছাড়ব ! এখন যাও তাকে ধ’রে নিয়ে এস।” শচীন গামলার জলে হাতটা চলিয়া যাইতে যাইতে নিদিমার কথার উত্তরে বলিল, “আমি বাড়ী থাকলে ত ! আমি যাচ্ছি এগনি বায়স্কোপ দেখতে, দাদাকে ডেকে দিয়েই চলে যাব।” বলিয়া সে দ্রুতপদে প্রস্থান করিল। দিদিম কৃষ্ট স্বরে আপন মনেই বলিলেন, “আজকালকার ছেলেরা যে সব কি রকম হয়েছে । শ্বশুর এসে ব’সে রইল—আশীৰ্ব্বাদ নেবেন যিনি, তিনি যে কোথায়, তার ঠিক নেই । আর ভাইটিও তেমনি । ঘরে যাহোক একটা ক্রিয়া-কৰ্ম্ম-অতিথি-অভ্যাগতকে আদর-অভ্যর্থনা করতে হবে—তা না, চপ্লেন তিনি —বায়স্কোপ দেখতে ! বেশ সব শিক্ষা হচ্ছে । যা হাসি দিদি, মিঠাইগুলো বেঁধে কাপড় ছেড়ে নে । তোকেই পরিবেষণ করতে হবে—জানিস্ত। উৎসবের দিনে আজ লাল কাপড় এক খানা পরিস।” হাসি উঠিয় দাড়াইল, দাসী একখালা ফুলের মালা আনিয়া বলিল,—“মালী দিয়ে গেল গো ।” দিদিমা বলিলেন, “বাইরে আলাদা একথালা দিয়েছে ত ? অাশীৰ্ব্বাদের সময় দরকার হবে ধে ।” দাসী বলিল, “তা দিয়েছে !” “দেখদেখি তবে ক'ছড়া গোড়ে ওতে আছে ?” দাসী মালাগুলা একে একে হাতে উঠাইতে লাগিল। দিদিমা দেখিয়া বলিলেন, “মোট একটি ছড়া গোড়ে দেখছি—আর সবই সরু মালা। শ্বশুরের গলায় ঐ ছড়াটা থাবার পরে তুই পরিয়ে দিস হাসি।” এই সময় হাসির মা পলাশ্নের জন্ত পেস্তা বাদাম লইতে এই ঘরে আসিয়া কহিলেন, "হাসি কেন দেবে —আমিই বুড়োর গলায় মালা পরিয়ে দেব মা ?” দাসী কি শুনিতে কি বুঝিয়া বলিয়া উঠিল, “বুড়োর গলায় কেন মালা দেবে ? দিদিমণি আমাদের রাজরাণী হবে গো, দেখে নিও !” দিদিমা বলিলেন, “তোরা সেই আশীৰ্ব্বাদই কল্প সবাই । যা, মালার থালাটা উপরে নিয়ে গিয়ে ছোট কুটরীতে রেখে দে এখন ।” দাসী চলিয়া গেল--দিদিমাও উঠিয়া দাড়াইয়া তাড়াতাড়ি চুবাইয়া স্বর্ণকুমারী দেবীর গ্রন্থাবলী হাসির হাসিমুখ চুম্বন করিয়া বলিলেন, “কোন রাজ তপস্ত করেছে আমার নাতনির জন্ত, কে জানে!” হাসির মনে পড়িয়া গেল –স্তুদের ধারের সেই যুবক-মূৰ্ত্তি,--যাহাকে অণুভ রাজকুমার বলিয়া পরিচয় দিয়াছিল। সে প্রফুল্লভাবে কহিল, “আমাকে তবে তোময়৷ বনে পাঠাও দিদিম,—তবে ত রাজপুত্র আমাকে উদ্ধার করতে আসবে ।” 翰 দিদিমা তার মিষ্টহাতেই মিষ্টভাবে নাতনির গাল টিপিয়া কহিলেন, “ছি রূপসীমণি, ও কথা কি বলে ? এই কমল সরোবরে নেমেই তোমার রাজা তোমাকে বুকে তুলে নেবে।” হাসি হাসিয়া চলিয়া গেল ; দিদিমা মিষ্টগুলি থালায় সাজাইতে বসিলেন । কাজ করিতে করিতে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া আবার সেই কথাই ভাবিলেন, “বেীমার যদি একটুও বুদ্ধি আছে! অমন সোনার ছেলে শরৎ, তাকে কি না হাতছাড়া করলে ! বিজনের সঙ্গেও ত আর বিয়ের আশা নেই। সে কিন্তু ভালই হোয়েছে ; বাপট যে ভয়ানক লোক ৷” দিদিমার কাজ শেষ হইবার পুৰ্ব্বেই হাসি যখন একথানি লাল বারাণসী সাড়ী পরিয়া তাহার সম্মুখে আসিয়া দাড়াইল, তখন র্তাহীর মনে হইল, যেন মূৰ্ত্তিমতী লক্ষ্মীদেবী স্বয়ং তাহাকে আসিয়া দেখা দিলেন । বাহিধর্ণটতে বিনাড়ম্বরে নয়েন্দ্রের আশীৰ্ব্বাদপৰ্ব্ব সমাধা হইল। সন্ধ্যার সময় বিদায় গ্রহণ করিয়া নরেন্দ্ৰ পুৰ্ব্ব বন্দোবস্ত-অনুসারে তাহার একটি বন্ধুর বাড়ী নিমন্ত্রণ রক্ষা করিতে গেল ; আর অতিথি দুইজনকে সঙ্গে লইয়া কৃষ্ণলাল অন্তঃপুরে আগমন করিলেন । দিদিমার দালানের অীজ বাহার দেখে কে ? একটি চন্দনকাষ্ঠ-ধবনিকায় বিভক্ত দালানের এক অংশ আজি ভোজন-স্থান—অপর অংশ বসিবার স্থান রূপে নিদিষ্ট হইয়াছে। ড্রয়িংরুম বিভাগে দিদিমার তক্তাপোষথানির উপর গালিচ কুসনের সজ্জা, আশেপাশে কয়েকখানি কোঁচ, চৌকি এবং মাঝে মাঝে এক একটি ক্ষুদ্র টেবিল । টেবিলগুলি ফুলভয়া ফুলদানিতে ফ্রেম-ভাটা ছবিতে সাজান— একটি টেবিলে রূপার থালায় কয়েকগাছি ফুলমাল। অতিথিগণের সন্মানার্থ রক্ষিত। থামের মাথায় মাথায় কুঞ্চিত রঙিন রেশমী পরদা ঝুলিতেছে, দেয়ালে দেয়ালে সেতার এসরাজ প্রভৃতি যন্ত্রাদির মাঝে মাঝে নানারূপ চিত্ৰলেখ্য, অধিকাংশই হাসির হস্তাঙ্কিত ।