পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ჯს কৃষ্ণনাথ খুজিয়া পাইলেন না । হরিরাম আপার কছিল, - “বিচার করেন ধৰ্ম্মাবতার,- কয় কি না, তানারে কই নি! কৰ্ত্তায় দেহা পালি ত ভেনারে কইব,—দরোজা আগল দেওয়া মোর কাজ, মুই ছ দও থাতি যাই—আর দৌড়ি ফিরি,— মুই তেনারে খুজি কহন —ধৰ্ম্মাবতার, বিচার করেন। সইকারীকে ত ধহন তছন এ বাক্যি বলছি,—তিনি মোরে খালি ঘুলি উচোচ্ছে—বলতে নেগেছে-“আমার উপর কৰ্ত্ত হুইছ তুমি ? যত বড় মুক নয়, তত বড় বাকি ! কৰ্ত্তারি বলি—তোমারে দূর করুব—তবে আমার নাম সইকারী।” ধৰ্ম্মাবতীর- আপনি নেই--আমার মা জননী নেই ; মহারাণী তপ-জপ নিয়া আছেন,— তাকে এ সব কথা কওয়া নিষেধ—দাওয়ান বন্দরে গেছেন—কি ক’রে যে দিন কাটাইছি—তা ধৰ্ম্ম জানেন ।” রাজা হরিরামের দীর্ঘ বক্তৃতায় বাধা না দিয়া নীরবে শুনিতে লাগিলেন । হরিরাম বলিয়া চলিল, —“সইকারী আমারে ঘুসি উচায়ে কি পার পাত ? না ; ধৰ্ম্মবতায়, মুই অমন দশটা সইকারীকে থাপ্পরে গুড়া করি দেতাম ; কিন্তু ধৰ্ম্মাবতার--ষে রকম আদেশ দিইছেন--তা ত মানি চলতি হবে । সইকারী মোর কৰ্ত্ত—তার অঙ্গে হাত তুলি এ আদেশ নেই, মোর বুক ফাটি উঠল রাগে--তবু মুই তার বাক্যি স’য়ে গেম । এখন বিচার করেন, ধৰ্ম্মাবতীর * সভা নিস্তব্ধভাব ধারণ করিল-হরিরামের প্রতি বাক্য সত্যের প্রতিমূৰ্ত্তি গ্রহণ করিয়া সন্তোষকে দোষী প্রমাণ করিয়া দিল। রাজা কিছুক্ষণ পরে বলিলেন, —“তোমার আর কিছু বলার আছে ?” হরিরাম বলিল,—“অাছে ধৰ্ম্মাবতার,---শেষ ঘাক্যি কই নাই এখুনো। যখন দেয়ালের ধনুক নীচে পড়িলো--তহন মুই হাতিয়ারশালার দরোজা ভিড়াতে মেগেছি- তহনে তালা-চাবি পড়ে নি,--” ছালিরা বানারা পাঠশালায় ছিল, তানার সব সেই চলি গেল। কি ভীষণ অাওয়াজ সে,--মোর দে কাপি উঠিলে ; ধছুক-ঘরে আসি দেহি, কেউ কোথাও নেই ; পাঠশালার দরোলা খোলা ; সেহানে ঢুকি দেহি—সইকারী অচেতন পড়ি আছে, আর গো গো করতি নেগেছে--তহনি আর সববাই আইল , ধরাধরি করি তানারে নিল হাসপাতাল—অণর কর্তাবাবুৱে খবর দেল ।” রাজা জিজ্ঞাসা করিলেন,—“শুনছি সহকারী চোর ধৰ্ব্বতে গিয়ে গুলীর আঘাতে জখম হন ; এ বিবয়ে তুমি কি জাম ?” স্বর্ণকুমারী দেবীর গ্রন্থাবলী হরিরাম বিস্ময় প্রকাশ করিয়া কহিল,—“সইকারী চোর ধবৃতি গিল্প জখম হইলে ? কেনারা বলে ? চোর আর কোনটাই নয় ধৰ্ম্মাবতার ; তেনাই চোর ! ধনুক ধরা সোজা কি না ; তার মধ্যে সনাতন চৌধুরী রায়-বংশের প্রাণপ্রতিষ্ঠা করি খুইছে—তাতি হাত দিয়া উনি পর পাবে? ধনুক দেবতা ওনার ওই দশা করিলো ।” রাজা কৌতূহলাক্রাস্ত হইয়। তাছাকে জিজ্ঞাসা করিলেন,—“তুমি গুলী করার শব্দ শোন নি ?” “ন, ধৰ্ম্মাবতার-—সে ভীষণ আওয়াজ শোনেলাম ; পিস্তলের আওয়াজ নয় ।” “তুমি বল্‌ছ—ধমুক পড়ার শব্দের কথা, কিন্তু তার পরে অন্য শব্দ পাও নি ?” “না ধৰ্ম্মাবতার ” রাজ। তখন কৃষ্ণনাথকে প্রশ্ন করিলেন,—“আপনি বলছেন, গুলীর শবা গুনে এর লাইব্রেরী-ঘরে যায়, হরিরাম ত তা বলে না।” কৃষ্ণনাথ বলিলেন,—“হরিরাম ধমুক দেখতেই ব্যস্ত ছিল, অন্তের] শুনেছে।” “যে শুনেছে, সে উপস্থিত আছে ?” "আজ্ঞে, অাছে।” রাজা তখন হরিরামকে বলিলেন,—“তুমি এখন যেতে পার ” "যে আজ্ঞা ধৰ্ম্মাবতার" বলিয়া সে ভূমিষ্ঠ প্ৰণামপূর্বক তাছার বশীযষ্টি হন্তে লইয়া উঠিয়া দাড়াইয়া কহিল,-“ধৰ্ম্মাবতার, এরা মিথ্যা কইছে। সেই চোর, চোর আর কোনোটা নয়—আপুনি বিচার করেন।” বলিয়া ক্ষুন্নভাবে চলিয়া গেল। অতঃপর অন্ত প্রহরী দুই জন আসিয়া সাক্ষ্য দিল খে, পিস্তলের আওয়াজ শুনিয়াই তাহার লাইব্রেরীঘরে যায় এবং সেখানে গিয়া সন্তোষকে অচেতনাবস্থায় দেখিতে পায় । সাক্ষ্যগ্রহণের পর তাহাদিগকে বিদায়দামপুৰ্ব্বক রাজা অস্ত্ৰাধ্যক্ষকে জিজ্ঞাসা করিলেন,-“সন্তোবের শরীরে কোনখানে গুলী লেগেছে ।” বিপদে পড়িলেই কৃষ্ণনাথের আঙ্গুল মোচড়ালি পায়, তিনি আঙ্গুল মোচড়াইতে মুরু করিয়া কছিলেন,—“আণজ্ঞে, ধৰ্ম্মাবতার, সে খবরটা জামি ঠিক জানিনে, মনে হচ্ছে বুকের পাশে ।” “গুলী বার করা হয়েছে কি না, তা জানেন ?” “অজ্ঞে মা, সে খবরটাও ঠিক দিতে পান্থছিলে । রাত্রে তা’কে আর দেখি নি, পরদিন ভোরবেলাতেই কি না এথানে রওয়ান হয়েছি।”