পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/২০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বপ্নবাণী “ধেমন গঙ্গাজলে গঙ্গাপুজো সেই রকম আর कि !” “উপমাটা এখানে ঠিক সঙ্গত হ’ল ন কুনদিদি, পণ্ডিত মহাশয় শুনলে নিশ্চয়ই প্রতিবাদ করতেন।” এই সময় এক জন দাসী “পণ্ডিত মহাশয় আইছেন গো " বলিয়া চীৎকার করিতে করিতে গৃহপ্রবেশ করিল। বাঙ্গণী-ঘরে রাজা সম্রাটের আলক্ষেও দাসীচাকরের আদব কায়দার বড় একটা অড়িম্বর দেখা शों★ ब्ष । ● পণ্ডিত মহাশয়ের নাম শুনিয়া কুন্দ বলিয়া উঠিল, “নাম করতেই হাজির তিনি, লোকটার আয়ু দেখছি अgनक !" জ্যোতিৰ্ম্মী দাসীকে বলিল, “আচ্ছা লক্ষ্মীর মা, তোমাকে কতবার বলেছি অত চেচিয়ে কথা কবে না, –কিছুতে কি শিক্ষা হবে না তোমার ?” লক্ষ্মীর মা শিরে করাঘাত করিয়া কহিল, “হায় রে কপাল! তোমারে ঘরে আইন শিখাইলাম আমি, আর আমীরে শিখাইতে চাও এখন তুমি—সেদিনকার খুর্কী, পলতে দিয়ে যারে কত দুধ খাওয়াইয়াছি! ঘোর কলিকালই হইছে বটে।”

  • বেশ বেশ আর বকতে হবে না, তোমার ও নাকি গাম আমার ভাল লাগে না । যাও, পণ্ডিতমহাশয়কে বল গিয়ে, আমরা আসছি এখনি ।”

লক্ষ্মীর মা তবুও বিড় বিড় করিয়া বকিতে বকিতে সোনার তাগা পরা হাত দুলাইয়া চলিয়া গেল । সঙ্গে সঙ্গে সোনার কণ্ঠমালা ও কোমরের রূপার চাবি-শিকলিও জুলিয়া উঠিল। জ্যোতিৰ্ম্ময়ী পণ্ডিত মহাশয়ের নিকটে যাইবার অভিপ্রামে কুন্দের সহিত বারান্দায় আসিয়া দাড়াইআছেন, এই সময় অনাদির আবির্ভাব হইল। তাহাকে দেখিয়া রাজকন্যার বুকটা কঁাপিষ্ঠ উঠিল, প্রথমেই মনে হইল,—ভাল আছেন ত তিনি ? কিন্তু কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিবার পূৰ্ব্বেই অনাদি কহিল, “একটা কথা আছে দিদিমণি ।” রাজকন্যা কুন্দকে বলিলেন, “ষাও কুন্দদিদি, তুমি পণ্ডিত মহাশয়ের কাছে ব’সে একটু গল্প কর গে, আমি এখনি আসছি।” কুন্দ চলিয়া গেলে জ্যোতিৰ্ম্ময়ী কণ্ঠাগত ভাষা রসনামুক্ত করিরা দিয়া কছিলেন, “ডাক্তার-জা ভাল আছেন ত অনাদি-দা ?” “হ ভাল আছেন,–কিন্তু তুমি আজ সকালে তাকে দেখতে যাও নি—তাই তিনি বড় ব্যাকুল হয়ে পড়েছেন । তিনি ভাবছেন—তোমার বুঝি কোন Sనహి অম্লখ করেছে—তিনি তোমাকে দেখতে আসতে চান ।” জ্যোতিৰ্ম্মীপ পণ ভঙ্গ হইল—বলিলেন, “না না তার আসতে হবে না---চল, আমিই গিয়ে এখনি তাকে একবার দেখে আসি।” পণ্ডিতমহাশয় যে র্তাহার অপেক্ষায় আছেন, সে কথা জ্যোতিৰ্ম্ময়ী একেবারেই লিখা গিয়া অনাদির অগ্রবর্তী হইরা চলিলেন। রাজকুমারী গৃহে প্রবেশ করিবামাত্ৰ—ৰ্তাহীকে সম্মান প্রদর্শনার্থ শরৎকুমার শখ্যাত্যাগ করিয়া উঠিয় দাড়াইলেন। অসুস্থতার পর এই প্রথম র্তাহার স্থির হইয়া দাড়াইবার প্রয়াস, পা কঁাপিয়া উঠিল ; দেহ ঈষৎ টলমল করিতে লাগিল। কিন্তু এই কম্পন কি কেবলই দুৰ্ব্বলতা-জনিত, কিংবা আনন্দের অধীরতা ও ইহার মধ্যে অনেকখানি লুক্কায়িত ছিল ? রাজকুমারী উদ্বিগ্নভাবে আমুনয়ের স্বরে বলিলেন, "কি করেন ডাক্তার-দ1,– বসুন বমন—দাড়াবেন না ?” “আমি ভাল হয়ে উঠেছি রাজকুমারী।” ‘তবুও বস্থন ; এখনো বিছানা থেকে ওঠবার অবস্থা আপনার ঠিক হর নি,-—প কঁপিছে আপনার ।” “আপনি বমন আগে।” প্রত্যুত্তরে এইরূপ অনুরুদ্ধ হইরা রাজকুমারী অীর কথা বাড়াইলেন না ; শরৎকুমারের শয্যার নিকটেই তাহার জন্ত অনাদি একখানি চৌকি আগে হইতেই রাখির দিয়াছিল, সেইখানিতে বসিয়া পড়িলেন। শরৎকুমার তখন শয্যায় উপবিষ্ট হইয়া বলিলেন, “আপনি সকালে অাসেন নি—তাই মনে হচ্ছিল—” শরৎ হঠাৎ থামিয়া গেলেন, রাজকুমারী বলিলেন, "না, আমার কোন অমুখ করে নি,-ভালই আছি ; —আপনি ত ভাল হরে উঠেছেন—তাই আর—” রাজকুমারীরও কথাটা এইখানে বাধিয়া গেল —কেন না, যাহা বলিতে যাইতেছিলেন, তাহী সত্য নহে। শরৎকুমার তাহার পালায় রাজকন্যার অসম্পূর্ণ কথা সম্পূর্ণ করিয়া দিয়া কছিলেন,— "তাই আর আসার দরকার মনে করেন নি ?” বলিতে বলিতে র্তাহার রুগ্ন মুখ–একটা ব্যথার ভাবে আচ্ছন্ন হই। পড়িল। জ্যোতিৰ্ম্মীর হৃদয়তন্ত্রীতেও সে বেদনার সুর ধ্বনিত হইল। তিনি কথাট্য চাপ দিবার অভিপ্রায়ে হাসির চিঠিখানা শরৎকুমারের হাতে দিয়া বলিলেন, “দেখুন দেখি চিঠিখানা পড়ে ডাক্তার-দা ; আপনার ভাল লাগৰে মনে ক’রে এনেছি।”